শ.ম.গফুর, উখিয়া::
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী এবং রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকা এমনিতেই ইয়াবা বাণিজ্যের ঘাটি হিসেবে পরিচিত। তার উপর বালুখালী ও কুতুপালংয়ে নতুন করে গড়ে ওঠেছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ” রোহিঙ্গা বস্তি “। একদিকে ইয়াবা অন্যদিকে রোহিঙ্গা। দু’য়ে মিলে বালুখালী ও কুতুপালং বাজার অপরাধীদের আড্ডাস্থল বানানোর পরিকল্পনা এটেঁছে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে।
বনবিভাগের বিশাল এলাকা জুড়ে রোহিঙ্গা বস্তির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে পৃথক -পৃথক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সীমান্তবর্তী বালুখালী পানবাজার ও কুতুপালং কে রোহিঙ্গা বাজার বানিয়ে ফাঁয়দা লুটছে। এজন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাসহ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছে বলে সুত্রে জানা গেছে।না হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুমিকা রহস্যজনক কেন?, তা নিয়ে সুশীল সমাজ কে ভাবিয়ে তুলেছে।
দেশপ্রেমিক একটি সুত্র আরো জানায়,মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিরাট একটি অংশ বর্তমানে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী আলাদা একটি বস্তি গেঁড়ে। কুতুপালং রেজিস্টার্ড ও আন – রেজিস্টার্ড শরনার্থী বাইরে নতুন করে ক্যাম্পের আশেপাশে বনবিভাগের বিশাল জায়গায় বস্তি বানিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের নিয়মিত সাহায্য সহযোহিতা দিয়ে যাচ্ছে বেশ কিছু এনজিও।সরকার অনুমোদিত এনজিওর বাইরেও বহির্বিশ্বে থাকা রোহিঙ্গা সমর্থিত কিছু এনজিও সাহায্য -সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে দিনদিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশও বাড়ছে। বালুখালীতে সরকারি ভাবে কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেই, কিন্তু কুতুপালং ক্যাম্পে পুলিশ থাকা সত্বেও এসব রোহিঙ্গারা অনিয়ন্ত্রিত ভাবে জীবনযাপন করছে। কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রশাসন এমনিতেই বেকায়দায় রয়েছে। তার উপর বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গা বস্তি নির্মাণ যেন স্থানীয় জনতার মাঝে আতংক হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব রোহিঙ্গা বস্তি আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অন্তরায় হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় জনগনের মতে, দুরভিসন্ধিমুলক তৎপরতার অংশ হিসেবে বালুখালীতে নতুন রোহিঙ্গা বস্তি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে স্বার্থন্বেষী মহল। তাদের মতে, এমনিতে বালুখালী ইয়াবা পাড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে,তার উপর রোহিঙ্গা বস্তি নির্মাণ স্থায়ী করা হলে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে ইয়াবা পাচার,নারী -মানবপাচার, দেহ বাণিজ্য,চুরি -ছিনতাই,ডাকাতি, দাংগা -হাংগামা ও বনায়নের গাছ কর্তন সহ বহুমুখী অপকর্মে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বালুখালীর চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্রের পরিবারের বেশ কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর অর্থায়নে কতিপয় প্রতিনিধি সমর্থিত চক্রের ইন্দনে বালুখালীতে রোহিঙ্গা বস্তি নির্মাণে বিপুল পরিমান টাকা ব্যায় করে যাচ্ছেন। নির্মাণকৃত এসব বস্তিতে রোহিঙ্গাদের ফ্রি থাকাসহ খাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।অপরদিকে একই কায়দায় পুর্বের চরিত্রে প্রবেশ করছে কুতুপালংয়ে নতুন আসা রোহিঙ্গারাও।
ফ্রি থাকা খাওয়া সহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা মিয়ানমারের প্রচার পাওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আবারো ব্যাপক হারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে। রোহিঙ্গাদের এসব সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে মিয়ানমারের পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জংগী সংগঠন আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ওইসব অর্থ থেকে স্থানীয় সুবিধাবাদী চক্র মোটাংকের একটি অংশ হাতিয়ে নিচ্ছে। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিদ্যমান রাখতে সীমান্তে নিয়োগ করা দালাল মারফত বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে রোহিঙ্গাদের সমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন -দিন। স্থানীয় জনগণের ভাষায় বস্তি নির্মাণের উদ্দেশ্যে একটাই সীমান্ত লাগোয়া রোহিঙ্গা বস্তিতে ইয়াবার মজুদ গড়ে তোলা এবং রোহিঙ্গাদের দিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা। স্থানীয় জাফর ইকবাল অভিযোগ করে বলেন, তার জায়গা সহ বেশকিছু জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে কতিপয় জনপ্রতিনিধি সহ তার লোকজন। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী অনেকেই দাবী করেন, আমাদের বনায়ন উজাড় করে লাভবানীপুর হচ্ছে বস্তির নিয়ন্ত্রকরা।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এভাবে বস্তি গড়ে তুললেও প্রশাসন এ ব্যাপারে নিরব ভুমিকা পালন করছে। ফলে প্রসাশনের ভুমিকা নিয়ে স্থানীয় জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। উখিয়া রেজ্ঞ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের বিশাল এলাকা রোহিঙ্গাদের দখলে চলে গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রশয় দেওয়ার ফলে রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে বস্তি উচ্ছেদ করতে বনকর্মীদের উপর হামলা করেছে রোহিঙ্গারা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের ইন্ধন ছাড়া রোহিঙ্গাদের এত সাহস নেই যে সরকারী লোকজনের উপর হামলা করার।
অভিযুক্ত কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, রোহিঙ্গারাও মানুষ। কুতুপালং ক্যাম্প থেকে তাদের বিতাড়িত করায় বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি পুর্বের রোহিঙ্গা টালের সাথে নতুনরাও কুতুপালংয়ে যুক্ত হয়েছে। তারা অনৈতিক ও অবৈধ কোন কাজে জড়িত নয় বলে দাবী করেন। উখিয়ার ঘাট বন বিট কর্মকর্তা মোঃমোবারক আলী জানান, বনবিভাগের জনবল সংকট।বনবিভাগের তরফ থেকে বস্তি উঠিয়ে নিতে অনেক আগেই বলা হয়েছে বলে জানান। ইতিপূর্বে উখিয়ার মধুর ছড়ায় যেভাবে যৌথ বাহিনী নিরবে বাড়ী ঘর উচ্ছেদ করেছে সম্প্রতি ঠিক তেমনি ভাবে বালুখালী বস্তিও উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ইতিমধ্যেই তারা পেয়েছেন। যেকোন মুহুর্তে বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তি উচ্ছেদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঠকের মতামত