
প্রাণঘাতী ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা শিশুরা। চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আক্রান্ত কোনও শিশুর সংস্পর্শে এলে দ্রুত অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সর্দি-কাশি ও হাঁচি থেকে এটি ছড়ায়।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল থেকে কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের শরীরে ডিপথেরিয়া রোগ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে গত ছয় বছরে নমুনা পরীক্ষায় ৪০৯ জনের শরীরে ডিপথেরিয়া রোগ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে চার জন ছিল বাংলাদেশি। বাকি ৪০৫ জন ছিল রোহিঙ্গা শিশু। শনাক্তদের মধ্যে ৫৩ জন মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৭ জনের শরীরে ডিপথেরিয়া রোগ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৪ জন বাংলাদেশি এবং ৩৩ জন রোহিঙ্গা শিশু। মারা গেছে একজন। ২০২১ সালে শনাক্ত ৩০ জনের মধ্যে মারা যায় একজন। ২০২০ সালে ১৯ জন শনাক্ত হয়। ২০১৯ সালে ৩১ জন শনাক্ত হয়। মারা যায় ৩ জন। ২০১৮ সালে ২২৬ জন শনাক্ত হয়। মারা যায় ১৪ জন। ২০১৭ সালে ৬৬ জন শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৩০ জন মারা যায়।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রক ডা. ফাহিম আহমেদ ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুরা প্রতি বছরই ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের শিশুদের জন্মের ১৪-১৫ মাসের মধ্যে যেসব টিকা দেওয়া হয় তার মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগের টিকাও রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এ রোগ নেই। তবে রোহিঙ্গা শিশুরা মিয়ানমারে ঠিকমতো টিকা পায়নি। এ কারণে বাংলাদেশে আসার পর থেকে তাদের শরীরে এ রোগ ধরা পড়ছে। গত আট মাসে যে ৩৭ জন শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে চার বাংলাদেশি শিশুও রয়েছে।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘অত্যন্ত ভয়ংকর একটি রোগের নাম ডিপথেরিয়া। গত দেড় বছরে ৯ রোহিঙ্গা শিশু এ রোগের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। এসব শিশুকে টেকনাফ থেকে এ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে দুই শিশু মারা গেলেও বাকিরা সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। ভর্তি হওয়া ৯ শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে।’
তিনি জানান, এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে– জ্বর, গলাব্যথা, কাশি এবং জটিল পর্যায়ে গেলে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ রোগ শ্বাসনালিকে ব্লক করে দেয়। এ কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
কেন রোহিঙ্গা শিশুরা ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমাদের দেশের শিশুকে জন্মের পর থেকে সরকারিভাবে যে দশটি রোগের টিকা দেওয়া হয় তার মধ্যে ডিপথেরিয়ার টিকা রয়েছে। এ কারণে আমাদের দেশের শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয় না। তবে রোহিঙ্গা শিশুরা মিয়ানমারে এ টিকা পাননি। তাদের শিশুরা টিকার আওতার বাইরে থাকায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ রোগ মারাত্মক ছোঁয়াচে। আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে অন্য শিশু গেলে তারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘ডিপথেরিয়া রোগে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুরা আক্রান্ত হয় বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তবে আমাদের দেশের কোনও শিশুর এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ রোগে আক্রান্ত শিশুর অবস্থা জটিল হলে তাকে চট্টগ্রামের বিআইটিআইডি হাসপাতালে হস্তান্তর করেন। ডিপথেরিয়া রোগ নিয়ে দেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) গবেষণা করছে বলেও জেনেছি।’
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুদের মাঝে ডিপথেরিয়া রোগটি নেই। বাংলাদেশি শিশুদের জন্মের পর থেকে যেসব টিকা দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগের টিকাও রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এ রোগের আক্রান্তের হার শূন্য। রোহিঙ্গা শিশুরা নিজ দেশে টিকার আওতার বাইরে ছিল। এখন তাদেরও সব ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, রোহিঙ্গা শিশুদের মাঝেও ডিপথেরিয়া রোগটি শূন্যে নিয়ে আসার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্ত শিশুকে আমরা পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলি। অর্থাৎ আইসোলেশনে রাখা হয়। যারা ওই শিশুর সংস্পর্শে এসেছিল তাদেরও আইসোলেশনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। কেননা এ রোগ ছোঁয়াচে। এ শিশুর সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’
সরকার ইপিআইয়ের মধ্যে অতি জরুরি ১০টি রোগের অর্থাৎ যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, ধনুস্টংকার, হুপিংকাশি, পোলিও, হেপাটাইটিস বি, সিপিভি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, এসআর ভ্যাকসিন দিচ্ছে। জন্মের পর প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে বিসিজি ও পোলিও ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। এরপর বয়স ৬ সপ্তাহ বা ৪২ দিন থেকে বাকি টিকা দেওয়া শুরু হয়। এরপর একে একে টিকাগুলো ১৫-১৬ মাসের মধ্যে পাঁচ বারে শেষ করতে হয়। সুত্র: বাংলাট্রিবিউন
ঘটনাপ্রবাহঃ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা
রোহিঙ্গা ভোটার: সহায়তা করলেই মামলার নির্দেশ
০৮/১০/২০২৩ ৭:২৪ এএমরোহিঙ্গাদের কারণে নিরাপত্তা হুমকিতে চট্টগ্রামের ১১ জেলা
২১/০৭/২০২৩ ৭:৩৭ এএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ খুনের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি
০৯/০৭/২০২৩ ৭:৩৪ এএম৫ রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনায় ৬ জনকে আটক
০৮/০৭/২০২৩ ৪:১৮ পিএমস্বার্থের দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গারা
০৮/০৭/২০২৩ ৯:২৩ এএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে কেন বাড়ছে খুনোখুনি?
০৮/০৭/২০২৩ ৭:৩৭ এএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
০৭/০৭/২০২৩ ৯:৩৯ পিএমউখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা খুন
০৭/০৩/২০২৩ ৯:২০ এএমভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে আগুন দেয় সন্ত্রাসীরা
০৭/০৩/২০২৩ ৭:৩০ এএমমাদক বিক্রির টাকায় রোহিঙ্গারা কিনছেন সোনা, বাড়ছে চোরাচালান
০৩/০৯/২০২২ ১২:২০ পিএমরোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুতে ১ বছরে ২২ জনের মত্যু
০৩/০৯/২০২২ ৯:২১ এএমক্ষুধা-তৃষ্ণায় ৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু
০৩/০৯/২০২২ ৯:১৩ এএমনতুন করে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা
০২/০৯/২০২২ ২:৩৫ পিএমমিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রস্তুত বাংলাদেশ
০১/০৯/২০২২ ১০:০৫ পিএমকক্সবাজারে “আঁরা রোহিঙ্গা” আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন
০১/০৯/২০২২ ৬:৩৯ পিএমপাসপোর্ট করতে এসে রোহিঙ্গা নারীসহ ৩ জন আটক
১৩/১১/২০১৯ ৬:৪২ পিএমমিয়ানমার থেকে এবার আসছে বৌদ্ধরা
০৬/০২/২০১৯ ৭:৫৬ এএমসেভ দ্য চিলড্রেনের নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
১৩/০৮/২০১৮ ৭:৪৭ এএমকেন সুচির সুর নরম, নিরাপত্তা পরিষদ কি বলেছে তাকে
০২/০৫/২০১৮ ৬:০৬ পিএমদেশে ফিরে রোহিঙ্গাদের সেনা আশ্রয়েই থাকতে হবে?
১৮/০১/২০১৮ ১০:৫৯ এএম
পাঠকের মতামত