উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮/০৭/২০২৩ ৯:২৩ এএম , আপডেট: ০৮/০৭/২০২৩ ৯:২৯ এএম
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী

আবদুল্লাহ মনির,টেকনাফ::
মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মোখা। ঝড়ের তা-বের পর ক্যাম্প সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে তখন অপহরণ ও খুনের হুমকি পায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। টেকনাফ উপজেলার লেদা শালবাগানে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি কোনো সংস্থা। মেরামত করা যায়নি ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি। এসব হুমকির পেছনে থাকে কোনো না কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ। আর তাদের স্বার্থের দ্বন্দ্বের জেরে চলে এসব অপতৎপরতা। গতকাল শুক্রবার ভোরে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প এইট ওয়েস্টে গুলিতে ৫ রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার পর এই সন্ত্রাসী কর্মকা- আবারও সামনে এসেছে।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ খুন হওয়ার পর থেকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর দ্বন্দ্ব ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ক্রমেই বাড়ছে। আরসা ও আরএসও নামে দুটি সংগঠনের সদস্যদের নামে এই দ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠছে বারবার। এর মধ্যে আরএসও নামের সংগঠনটি আশির দশকের পুরনো হলেও ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরসার নামও জানতে পারে বিশে^র মানুষ। প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর মতো আরএসওর নেতারাও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পক্ষে। কিন্তু আরসা চায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশেই থাকুক।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কঠোর নয় বলে শুরু থেকে অভিযোগ আছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পগুলো সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তখনই বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটে। মুহিবুল্লাহ হত্যা কিংবা সর্বশেষ শুক্রবার উখিয়ায় ৫ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে গভীর রাতে ও ভোরে। পুলিশ জানায়,

কেবল সন্ত্রাসী কর্মকা-ই নয়, শিবিরগুলোকে কাজে লাগিয়ে মাদকের ব্যবসা করতেও সন্ত্রাসীরা তৎপর। পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমনের পর থেকে টেকনাফে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮৫ পিস, ক্রিস্টাল মেথ আইস ৯ কেজি ৯০ গ্রাম। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪২২টি, মাদক মামলায় আটক ৪৩৭ জন। অন্যদিকে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি। এসব ঘটনায় বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ১৩৯টি, মামলা হয়েছে ১১২টি এবং এসব মামলায় আটক হয়েছেন ২২৫ জন।

অপহরণের বিষয়ে ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (ইন্টেলিজেন্স ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ জানান, গত দুই মাসে উখিয়ায় ৬-৭টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি অপহরণের পেছনে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক পাচারের বিষয়টি জড়িত। রোহিঙ্গারা টাকার জন্য অপহরণ করছে। অপহরণের ঘটনা মাদকের লেনদেনের জন্যও হচ্ছে। তাদের অনেকের সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এসব অপহরণের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকও আছে।

হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাসেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, গত বছরের তুলনায় এখন অপহরণের সংখ্যা বেড়েছে। এই ঘটনা এখন নিত্যদিনের। এতে পাহাড়ি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা জড়িত। গত পাঁচ মাসে আমার এলাকায় ২০টির বেশি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। মুক্তিপণ না পাওয়ায় হত্যাকা-ের ঘটনাও ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথ অভিযান না চালালে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিম বলেন, আগের তুলনায় এখন অপহৃত পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ জানাতে থানায় বেশি আসছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে চলাচলের সুযোগ বন্ধ না হলে অপহরণের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় গত সাড়ে পাঁচ বছরে অন্তত ১৬৪টি হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে হত্যাকা-ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এসব ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা নেতাদের টার্গেট করে হত্যা করে থাকে।

গত বছরের অক্টোবরে উখিয়ার থাইংখালী তাজনিমারখোলা ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে জামিল হোসেন খুন হন। বাবার বিচার দাবি করায় একই মাসে ছেলে সৈয়দ হোসেনকে (২৩) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়।

জানা যায়, রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আর রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরে বড় সংগঠন। তবে আইনশৃঙ্খলার শৈথিল্যের সুযোগে সেখানে নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, ডাকাত হাকিম গ্রুপ, ডাকাত সালেহ গ্রুপ, ইসলামিক মাহাস গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আরসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত। আরএসও আগে থেকেই কুতুপালং ক্যাম্পে সক্রিয় ছিল। এ সংগঠনটি নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে অতীতে বহুবার ভেঙে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করেছে। সন্ত্রাসীদের হাতে বিক্রি করেছে অস্ত্র। এখন মাদক ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বেড়েছে আরও দেড় লাখের বেশি। সুত্র: আমাদেরসময়

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...