প্রকাশিত: ০৭/০৬/২০২২ ৭:৫৫ এএম

দেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি শিল্পের দারুণ ভূমিকা। কক্সবাজারে প্রান্তিক চাষিদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করছে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত চিংড়ি। বিভিন্ন লবণাক্ত পানিতে নানান জাতের চিংড়ি চাষ হয়। চিংড়ি রফতানির লক্ষ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিনড্রাইভ সড়কের আশপাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।

প্রতি বছর হাজার হাজার টন চিংড়ি বিদেশে রফতানি করা হয়। বর্তমানে উৎপাদন থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত কয়েক লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত এ শিল্পের সঙ্গে। তবে কতিপয় দুষ্টচক্রের কবলে পড়ে এ শিল্প এখন হুমকির মুখে। বেশি মুনাফার আশায় এসব চক্র চিংড়িতে পুশ করছে অপদ্রব্য। বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করেও কোনোভাবেই তাদের থামানো যাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার (৪ জুন) বিকেলে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহকারীর হাতে অভিনব জালিয়াতি ধরা পড়ে। পরে অবশ্যই ওই মাছ ফেরত নেন এবং বিক্রিত মাছের বদলে অন্য মাছ দেন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী।

ওই চিকিৎসকের সহকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, শহরের বড়বাজার থেকে চিকিৎসকের জন্য ২ কেজি বাগদা চিংড়ি কিনেন। বাসায় গিয়ে দেখেন, ভেজাল। প্লাস্টিক ও জেল (বিষ) মেশানো হয়েছে চিংড়িতে। তাৎক্ষণিক বিক্রেতার নিকট অভিযোগ নিয়ে গেলে মাছগুলো ফেরত নিয়ে ওই টাকার বদলে ভিন্ন জাতের ছোট মাছ দেন।

সূত্র জানান, কক্সবাজার শহরের বড় বাজার এবং ফিশারিঘাট কেন্দ্রিক কয়েকটি মুনাফালোভী আড়ত মালিক মাছে এসব ক্ষতিকর পদার্থ মিশিয়ে বাজারজাত করছে। এক কেজি মাছে অন্তত ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম জেলি মেশানো থাকে। ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হন। এই ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো মাছ নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে চিংড়ি সংগ্রহ করে না। তারা অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মাধ্যমে চিংড়ি ক্রয় করে। অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা কমিশনের ভিত্তিতে চিংড়ি নেয় স্থানীয় ডিপোগুলো থেকে। বিভিন্ন এলাকার চাষিদের কাছ থেকে আসা চিংড়ি কারখানাগুলোতে সরবরাহ করে করে ওইসব ডিপো। কক্সবাজার শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শতাধিক ডিপো রয়েছে। কিছু সংখ্যক ডিপোর চিংড়িতেই মূলত অপদ্রব্য পুশ করা হয়।

বেশি মুনাফার আশায় কতিপয় ব্যবসায়ী চিংড়িতে এক ধরনের অবৈধ জেলি পুশ করে ওজন বাড়ায়। কয়েকটি মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আতাত করে তারা পুশ করা চিংড়ি বিক্রি করে। এসব চিংড়িতে সহজেই ব্যাকটেরিয়া বংশবৃদ্ধি করে। এ কারণে সহজে পচন ধরে। রফতানির পর ল্যাব পরীক্ষায় অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ায় অনেক সময় বিদেশ থেকে সেই চিংড়ি ফেরত পাঠানো হয়। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুস্বাদু চিংড়ির সুনাম ও বাজার নষ্ট হয়।

জানতে চাইলে বড়বাজার মৎস্য ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ছৈয়দ আকবর বলেন, আব্দুল খালেক নামক একজন ব্যক্তি মাছগুলো বিক্রি করেছে। তার বাড়ি কক্সবাজার শহরের বাদশা ঘোনা। অভিযোগ পাওয়ার পর তার মাছ বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমন প্রতারণামূলক ব্যবসা যারা করছে তাদের বাজারে মাছ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সচেতন মহল। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহিদ ইকবাল বলেন, এমন কাজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মতামত

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক চেয়ারম্যানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

রামু উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল হক-এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। ...