
উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে কক্সবাজারে দেশের প্রথম সি-ক্রুজ স্টেশন নির্মাণের কাজ। নির্মাণাধীন ওই স্টেশনের জায়গাটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হওয়ায় ও প্রয়োজনীয় অনুমোদনের আগেই ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করায় তা বন্ধ করে দেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।
মূলত কক্সবাজার থেকে সাগরপথে সেন্ট মার্টিন বা অন্যান্য দ্বীপে নৌপথে যাতায়াতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রুটে উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই স্টেশনটি তৈরির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। গত নভেম্বরে নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা একটি অস্থায়ী জেটিকে সি-ক্রুজ স্টেশন হিসেবে চালু করতে কাজ করছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, ‘কার জায়গায় কে ড্রেজিং করছে। জায়গাটি সরকারের ইসিএ ঘোষিত এলাকা। তাছাড়া যেখানে ড্রেজিং করা হচ্ছিল, সেটি সরকারের খাস জায়গা। সেখানে ড্রেজিং করা মাটি দিয়ে রেজু খালের সঙ্গে যুক্ত ছোট একাধিক খালকে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা বন্ধের পাশাপাশি ড্রেজার জব্দ ও মামলা করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ‘ইসিএ ঘোষিত এলাকায় এ ধরনের স্টেশন করা যাবে কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তার পরও যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যায়, তবেই কাজ শুরু করা যাবে। অবশ্যই তা অনুমোদনের আগে নয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘ইসিএ ঘোষিত এলাকায় যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনায় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এখন মীর আখতার হোসেন লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই সেখানে ড্রেজিং করছিল। পাশাপাশি ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে খাল ভরাট করছিল। তাই গত ২১ ডিসেম্বর অভিযান পরিচালনা করে আমরা একটি ড্রেজার, একটি এক্সক্যাভেটর, ৩০টি ড্রেজিং পাইপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।’

এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘মীর আখতারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা বন্দরের পক্ষে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা কোনো অফিস আদেশ দেখাতে পারেনি। এছাড়া আমি নিজে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারাও ড্রেজিংয়ের অনুমতির বিষয়টি স্বীকার করেননি।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘কক্সবাজারের রেজু খালের মোহনায় বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় একটি সি-ক্রুজ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষ্যে আমাদের সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ চলমান রয়েছে।’
অনুমোদন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সব সংস্থার অনুমোদন নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন করব। তবে তার আগে নয়।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের ইসিএ ঘোষিত এলাকায় ও পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম করছে ইসাবেলা ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘ইসিএ ঘোষিত এলাকায় সি-ক্রুজ স্টেশন হতে পারে না। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ওই এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছিল বলেই অভিযানের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে।’
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়াহ খান বলেন, ‘কক্সবাজারে এ ধরনের একটি সি-ক্রুজ স্টেশন প্রয়োজন রয়েছে। কারণ কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে বড় শিল্পবলয় গড়ে উঠছে। ওই শিল্পবলয়ের পাশে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সি-ক্রুজের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণের সুযোগ চালু করা হলে দেশ লাভবান হবে। এতে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সাগরপথে ভ্রমণ করা যাবে।’
পাঠকের মতামত