ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৮/১০/২০২২ ২:৩৯ পিএম , আপডেট: ২৮/১০/২০২২ ২:৫৬ পিএম

বিগত ৩১, বছরে বাংলাদেশের নিবন্ধিত শরানার্থী শিবিরে একটাও খুন হত্যার নজির নেই।
বাংলাদেশ সরকার কৌশলগত কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে আরসার অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসলেও আরসা দায়মুক্তির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরসারা নিজেদের স্টাইলে আইন আদালত বসিয়ে লাখ লাখ শরণার্থীকে জিম্মি করে খুন, ধর্ষণ,অপহরণ, চাঁদাবাজি ও স্বশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
চালিয়ে যাচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, তাদের বর্বরতা তাবৎ সীমারেখা অতিক্রম করেছে। এটা অব্যাহত থাকলে একদিকে যেমন সাধারণ নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য ক্যাম্প বসবাসের অনুপযোগী হবে অন্যদিকে নিরাপত্তা সংকটে পড়বে বাংলাদেশ।

সাধারণ রোহিঙ্গারা মনে করে, শরণার্থী ক্যাম্পগুলো আরসার মতো স্বশস্ত্র গ্রুপের অবস্থান মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ২০১৬-র ডিসেম্বর মাসের রিপোর্ট অনুসারে, আরসার নেতৃত্ব দেন আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি নামে পাকিস্তানের করাচীতে জন্ম নেয়া একজন রোহিঙ্গা। যিনি সৌদি আরবের মক্কায় বড় হয়েছেন। এছাড়া সৌদি প্রবাসী রোহিঙ্গাদের একটা কমিটিরও  নেতৃত্বে আছে তিনি।

বাংলাদেশ সরকার কৌশলগত কারণে শরণার্থী ক্যাম্পে ‘আরসার’ অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে। তবে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে যে কোন হত্যাকান্ডের পর আরসা  হত্যার দায় স্বীকার করে আসছে। এতে বাংলাদেশ সরকারও অস্বস্তিতে পড়ছে। তারা বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। তাই পরিকল্পিতভাবে নানা নৈরাজ্যের পাশাপাশি অপপ্রচারে লিপ্ত। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না

আমি নিজেও একজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থী। জাতিসংঘের আইন মেনে আমরা বাংলাদেশে শরনার্থী হিসেবে আছি প্রায় ৩২ বছর। এক সময়  ক্যাম্পে নানা সুবাতাস বইলেও এখন সে পরিস্থিতি নেই। এখন আগের মতো স্থিতিশীলতা নেই। ভ্রাতৃত্যবোধ নেই। সহমর্মিতা নেই। এখন অজানা এক বিশৃঙ্খলতার দূত ঘুরপাক খাচ্ছে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পগুলোতে।

আসরার পেত্তাত্বারা ‘অদৃশ্যভাবে’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর মানুষের ভালোমন্দ নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের কথায় দেশত্যাগী, শোষিত-বঞ্চিত, পরাস্ত, পযুদস্ত মানুষগুলো উঠ-বস করছে। আরসা ক্যাম্পগুলোতে নিজেদের স্টাইলে আইন আদালত বসিয়ে লাখ লাখ শরণার্থীর বাচ-বিচার করছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণের মতো নানা অপরাধ করছে। কেউ টু শব্দও করতে পারছে না সেখানে। আসলেই আমাদের সত্যিকারের সুশিক্ষিত উচ্চতর ডিগ্রিধারী নেতার অভাব। নেতা মুহিব উল্লাহকে নির্মমভাবে খুন করার পর নেতৃত্ব সংকট সৃষ্টি হয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরে। সামনে এ পরিস্থিতি ভয়ানক হতে পারে এমন ধারণা করছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ অনেকেই। এতে আমাদের আশ্রয় দেওয়া মানবতার দেশ, মানবতার মা শেখ হাসিনার জন্মভূমি বাংলাদেশ অস্থিরতায় পতিত হবে এমন শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
এভাবে প্রায়শ ঘটছে খুনাখুনি। কেউ দায় স্বীকার করুক বা না করুন হত্যাকান্ডের জন্য আরসার সংশ্লিষ্টতার কথা মানুষের মুখে মুখে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ঘটেছে পাঁচটি খুনের ঘটনা। এ ছাড়া শিবিরে চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ, অপহরণ, মাদক ও অস্ত্রপাচারসহ নানা অপরাধের ঘটনা লেগেই আছে।

প্রশাসনের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও সশস্ত্র রোহিঙ্গারা তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে দিন দিন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। তারা সবসময় আতঙ্কে দিনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন।

গত ৩ অক্টোবর উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে তামদিয়া আক্তার নামে ১১ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়েছে। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তার ভাবি দিল ফায়াছ (১৮)। ১১ অক্টোবর ৯ নম্বর শিবিরের আই ব্লকে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে হেড মাঝি (কমিউনিটি লিডার) মোহাম্মদ হোসেন (৩৮) নিহত হন।  ১৫ অক্টোবর  সন্ধ্যায় উখিয়ার বালুখালী ১৩ নম্বর ক্যাম্পে ১৮/এ ব্লকে সন্ত্রাসীদের কুপানিতে এফ ব্লকের হেড মাঝি মো. আনোয়ার এবং সহকারী মাঝি মৌলভী মো. ইউনুস মারা যান। ১৮ অক্টোবর উখিয়ায় বাবার পর ছেলে সৈয়দ হোসেন (২৩) নামে এক রোহিঙ্গাকে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। কতিপয় দুষ্কৃতকারীরা এর আগে ২০২১ সালে তার বাবা জমিল হোসেনকে খুন করে।
সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর মোহাম্মদ সালাম (৩৭) ও জসিম উদ্দিন (২৩) খুন হন। রোহিঙ্গাদের শিক্ষার হার একেবারেই শূন্যর কোটায় বলে প্রতিনিয়ত খুন, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে রক্তাক্ত হচ্ছে ক্যাম্প এরিয়া। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ার কারণেই আমাদের সত্যিকারের সুশিক্ষিত উচ্চতর ডিগ্রিধারী নেতার অভাব।
রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লার হত্যার পেছনেও রয়েছে সন্ত্রাসী আরসার পত্যক্ষ পরোক্ষ মদদপুষ্ট শক্তিশালী হাত।
১৯৯২, সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৩১,বছর বিগত তিন দশক ধরে নিবন্ধিত শরনার্থীরা জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা বা ইউএনএইচসিআর UNHCR এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের সকল প্রকার আইনকে শ্রদ্ধা করে বসবাস করে আসছে নিবন্ধিত শরনার্থীরা। তবে রেজিস্টাড ক্যাম্পে, বিগত ৩১,বছরে একটাও খুন হত্যার নজির বিরল।

মূলত নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বসবাস এর কারণে তারা এদেশের সভ্যতা সংস্কৃতিতে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছে। পাশ্ববর্তী স্থানীয় জনগণের সাথে সখ্যতা গড়ে বাংলাদেশের সকল বিপদ আপদে পাশে থাকে তারা।
এমনকি সিলেটের বন্যাদুর্গতের মাঝে ৪০০ পরিবার কে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছিল, এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড বিএম ডিপুর অগ্নি ট্রাজেডিতে আহতদের কে রক্ত দান সহ নগদ অর্থ ও ঔষধপত্র দিয়ে সহযোগিতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল নিবন্ধন রোহিঙ্গা শরনার্থীরা। বাংলাদেশের এমন কঠিন বিপদের সময় পাশে থাকতে পেরে তারা নিজেরা গর্ববোধ করে।
তবে এখন তাদের দাবী নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিব্রতকর কর্মকান্ডে তারাও অনিরাপদ।
আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনি মানবতা মা” আপনিতো এখন বিশ্বের নেতৃত্বের আসনের সমাসীন। আপনার অধম্য সাহস এবং সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে এবং আপনি সারাবিশ্বের প্রশংসা ও কুড়িয়েছেন, আপনার সাহসিকতা সারাবিশ্বের প্রশংসিত আপনার সাহসিক নেতৃত্ব নিবন্ধিত শরনার্থী মুসলমানদের পক্ষে যাবে সেটাই আমরা আশা করি।
আপনিতো পারেন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মুসলমানদের পক্ষে কথা বলতে, তারা আপনার দেশে ১৯৯২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৩১, বছর হয়ে গেছে, কথা বলা আপনার অধিকার।

কক্সবাজারের যেসব আশ্রয় ক্যাম্পে তাদের বসবাস আবাসন সল্পতার দরুন ছোট্ট কুঁড়েঘরে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। যেখানে বসবাস করা মোটেও সুখকর নয়, কারণ প্রতিটি পরিবারের সদস্য মোট ৬ থেকে ১০ জন।
এক রোহিঙ্গা দম্পতি বলেন, “মা বাবা ভাই বোন সহ আমাদের কেবলমাত্র দৈর্ঘ্য দশ হাত প্রস্থ ও দশ হাত বিশিষ্ট ২টি রুমের মধ্যে দুই বড় ভাইয়ের স্ত্রী সন্তান সহ থাকতে হয়। তারাও ৬ জন থাকে ঐ দুই রুমে। ঘর বড় করার কোন সুযোগই নেই কারণ জায়গা সংকট প্রকট। যাদের ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে, ছেলেকে বিবাহ করিয়েছে। তাদের আবার ছেলে মেয়ে জন্ম হচ্ছে, এই একই সমস্যায় অন্তত পাঁচ হাজারের বেশি পরিবারে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আবাসন সমস্যার ভুক্তভোগী

ডব্লিউএফপি সহযোগিতায় যে রেশন ননফুট সাধারণ শরণার্থীদের দেওয়া হয়, তা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সহজ নয়। গত চার বছর ধরে প্রায় ৩০০ নিবন্ধিত পরিবার প্রত্যাহার করেছে ডব্লিউএফপির রেশন, তাদের  একমাত্র দাবি ডিউরেবল সল্যুশন চাই তারা অথবা পুনর্বাসন চাই।

কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে যাদের জরুরী চিকিৎসা দরকার যেটা এদেশে সম্ভব নয়। এছাড়া কিছু নিবন্ধিত শরণার্থীর পরিবারের সদস্যদের আগে বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা যাতে তাদের পরিবারের সাথে একত্রিত হতে পারে এবং যাদের চিকিৎসা দরকার তারা যাতে সে সুবিধা পায় সে ভিত্তিতে নিবন্ধিত শরনার্থীদের বাছাই করে পূনর্বাসন করা জরুরি।
এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নিবন্ধন ৯০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকা সহ ভিবিন্ন দেশে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার এ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া স্থগিত করে।
আবারও পুনর্বাসনের কথা সাহস করে বলুন আপনি দেখবেন আপনার পাশে আরও অনেক বিশ্ব নেতা ও দাঁড়িয়ে যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশে পূনর্বাসন কাজ চলিতেছে কানাডার সরকার আফগানিস্তানের (চল্লিশ হাজার ) শরনার্থী কে পূনর্বাসনের কার চলমান রেখেছে। আর আমরা নিরহ সাধারণ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মুক্তি পাবে অজানা গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের জন্য ও ফাইদা হবে ইনশাআল্লাহ।

এক রোহিঙ্গা তরুন বলেন, “বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি যে, নিবন্ধিত শরনার্থীদের কে যত দ্রুত সময়ে পুনর্বাসন করুন।
আমারা শ্বাস নিতে চাই, আমরা মুক্ত হতে চাই, আমারা আমাদের অধিকার চাই, আমরা উচ্চ শিক্ষিত হতে চাই। এই শরনার্থী শিবিরে আমরা দীর্ঘ ৩১টি বছর অতিবাহিত করেছি, আমরা এবার মুক্ত বাতাসে ফিরতে চাই আমরা আমাদের জন্য গৃহীত অধিকার”
একজন নাগরিকের কাছে ‘শরণার্থী’ পরিচয়টি লজ্জার বিষয় বলে মনে করেন তারা।

”ধন্যবাদ” বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।


লেখক :-
সিরাজুল হক আবরার

 

 

 

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব উখিয়া নিউজ- এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য উখিয়া নিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...