
নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি বা সম্মতিপত্র (অ্যারেঞ্জমেন্ট) সইয়ের দুই সপ্তাহ পার হলেও জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে কাঙিক্ষত অগ্রগতি নেই। তাদের ফেরানোর পরবর্তী বাস্তব ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এর শর্তাবলী বা টার্মস অব রেফারেন্স (টিওআর)-এর খসড়া চূড়ান্ত হয়নি এখনো। কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা-নেপি’ড বিষয়টি নিয়ে এখনো চিঠি চালাচালির মধ্যেই রয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরানোর চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তখনও সীমান্তে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ঢল থেমে নেই। স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২৩শে নভেম্বরের চুক্তির পর প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। গত দুই সপ্তাহে নতুন করে কমপক্ষে ৮-১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে।
বিশ্ব বিবেক জাতিসংঘ এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বৈশ্বিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে রাখাইনে উত্তেজনা কমলেও কেবল নভেম্বরেই ২০ হাজারের বেশি এবং চলতি মাসের শুরুর দিনগুলোতে কয়েক শ’ নবাগত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে গত ২৫শে আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া (নবাগত) মিয়ানমার নাগরিকের সংখ্যা ৬ লাখ ৪৬ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এখানে আগে থেকে আশ্রয়ে রয়েছে আরো প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকের বাড়তি বোঝা বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৈশ্বিক চাপে নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরাতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে উপনীত হলেও এটির বাস্তবায়নে দেশটির আন্তরিকতা নিয়ে আগাগোড়ায় সংশয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ কারণেই এখন চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত ৩ সপ্তাহের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন এবং দু’মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পুরোপুরি শুরু করার ‘বাধ্যবাধকতা’ থেকে নেপি’ড সরে আসতে চাইছে। এজন্য চুক্তি সইয়ের ২ সপ্তাহ পার হলেও জয়েন্ট ওয়ার্কি গ্রুপ গঠনে টার্মস অব রেফারেন্স বা টিওআরই চূড়ান্ত করা যায়নি। ঢাকার কর্মকর্তারা অবশ্য বিষয়টির সঙ্গে লেগে আছেন। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আহ্বানের কথাও জানিয়েছেন। সেগুনবাগিচার এক কর্মকর্তা গতকাল মানবজমিনকে বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে এখন সর্বোচ্চ মনোযোগ বাংলাদেশের। এছাড়া এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাবে- এমনটি মনে করেন না ঢাকার কর্মকর্তারা। যদিও চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক মহলের সম্পৃক্ততার প্রস্তাবে মিয়ানমারকে রাজি করানো যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আসলে কি চাইছে? জানতে চাইলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ চাইছে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন হোক এবং এটি বিশ্ব সমপ্রদায়ের নজরে থাকুক। সেভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বার্তা পাঠাচ্ছে ঢাকা। উল্লেখ্য, দীর্ঘ আলোচনার পর রাখাইনের বর্বরতা থেকে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সঙ্গে ‘অ্যারেঞ্জমেন্টটি সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও দেশটির স্টেট কাউন্সেলর দপ্তরের মন্ত্রী চাও থিন সোয়ে। বহুল আলোচিত ওই চুক্তিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর কথা থাকলেও কত দিনের মধ্যে তা পুরোপুরি সম্পন্ন হবে সে সংক্রান্ত কোনো সময়সীমা নেই। মিয়ানমারের ইচ্ছায় এবং চীনের ‘মধ্যস্থতা’য় ১৯৯২ সালে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার চেতনায় নতুন ওই চুক্তিটি সই হয়েছে বলে সমালোচনা রয়েছে। সমলোচকরা এ-ও বলছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরানোর চুক্তি করে আগের ৪ লাখ মিয়ানমার নাগরিকের ফেরানোর আলোচনার দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া, চুক্তি না মানলে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ নেয়া যাবে কি-না চুক্তিতে তা নিয়েও স্পষ্ট কোনো ক্লজ বা ধারা নেই!
সুত্র : মানবজমিন
পাঠকের মতামত