কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির দেশের একমাত্র আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা থেকে স্টেশনটিতে ট্রেন যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন জানায়, কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর এই আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই মেগা প্রকল্পের কাজ ৭৮% সম্পন্ন হয়েছে। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার এখন দৃশ্যমান।
প্রকল্পের অধীনে থাকা অন্যান্য কাজও চলছে সমানতালে। স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। ছয়তলা ভবনটির বিভিন্ন অংশে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন আইকনিক ভবন ঘেঁষে ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের তিনটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হচ্ছে। স্টেশনের পাশেই রেলওয়ের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে আটটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে।
স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এই স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “চলতি বছরই কক্সবাজার রেললাইনে আমরা ট্রেন চালাতে চাই। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৬০ কিলোমিটারের বেশি এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৮%। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। আমরা চেষ্টা করছি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই পথে ট্রেন চালু করার।”
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, ১০০ কিলোমিটার রেলপথে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনসহ মোট স্টেশন থাকছে নয়টি। বাকি আট স্টেশন হলো– সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর ও উখিয়া।
ADVERTISEMENT
dt-ad
প্রকল্প কর্মকর্তা মুফিজুর রহমান জানান, সবগুলো রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে। কোনোটির ৮০%, কোনোটির ৬০% কাজ এগিয়েছে। এ রেললাইনে সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি বড় রেল সেতু। এছাড়া এই রেলপথে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং। হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর চলাচলে ৫০ মিটারের একটি ওভারপাস ও তিনটি আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের প্রায় সাত বছর পর ২০১৮ সালে ডুয়েল গেজ এবং সিঙ্গেল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রামু পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১,৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকায়। অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার
পাঠকের মতামত