
নিউজ ডেস্ক::
টানা বর্ষেণ পাহাড় ধসে নিঃস্ব হওয়া মানুষের দুঃখ দূর হচ্ছে না। ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাদের কেউ হারিয়েছেন পরিবারের সবাইকে। কোনো কোনো পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি বিদায় নিয়েছেন। প্রাণে বেঁচে থাকলেও কারও বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়েছে। নিঃস্ব লক্ষাধিক মানুষের মধ্যে মাত্র কয়েক হাজারের জায়গা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন। দুর্গতরা ত্রাণের অপেক্ষায় থাকলেও চারদিনেও অনেকেই তা পাননি। দুর্যোগ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৩০ লাখ টাকা চেয়ে পেয়েছে মাত্র ১৫ লাখ। রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন এখনও ত্রাণের চাহিদায় পাঠায়নি! ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকাও তৈরি হয়নি। ত্রাণ না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্তরা। তাদের মুখে এখন একটাই কথা_ ‘আঁরা এহন কী খাই বাইচ্চুম’। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ত্রাণ নিয়ে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
পাহাড়ধসের পর গত বুধবার রাঙামাটিতে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সবাই
পর্যাপ্ত ত্রাণ পাবেন। তাদের জন্য ৫০ লাখ টাকা,
৫০০ বান্ডল টিন ও ১০০ টন চাল জরুরি সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। তবে
রাঙামাটির সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ এখনও ত্রাণ পাননি। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে চরম সমন্বয়হীনতা
দেখছি। যথাযথভাবে তালিকা করে সবাইকে ত্রাণ দিতে হবে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আছে তাদের রেশন দেওয়ার দাবিও জানান তিনি। উদ্ধারকাজে ধীরগতির অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলে উদ্ধার কাজ আরও অনেক দ্রুত শেষ করা যেত। এদিকে রাঙামাটি পরিদর্শনে এসে গতকাল শুক্রবার পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছেন। বিকেলে তিনি ডিসি অফিসের সম্মেলন কক্ষে জরুরি বৈঠক করেন।
পাহাড়ধসের ঘটনায় চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ পাঁচ জেলায় গত চার দিনে ১৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাঙামাটি থেকে দু’জনের লাশ উদ্ধার হয়। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান। তিনি বলেন, নিখোঁজের খবর পাওয়া গেলে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার সন্ধান চালাবেন।
এদিকে পাঁচ জেলার জেলা প্রশানস সূত্রে জানা যায়, ঘরবাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাঁচ জেলার লক্ষাধিক মানুষ। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল_ ক্ষতিগ্রস্তদের সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে এসে ত্রাণ কার্যক্রমের উদ্বোধনও করেন ওবায়দুল কাদের এবং ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। অনুসন্ধানে জানা যায়, ত্রাণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ত্রাণ এখনও তাদের কপালে জোটেনি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, সরকারের দেওয়া ৩৫ লাখ টাকা নিহত ও আহতদের স্বজনদের কাছে পেঁৗছে দেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ঘোষিত ৫০০ বান্ডল ঢেউটিন রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ায় পেঁৗছাতে দেরি হচ্ছে। ২০০ টন খাদ্যশস্য জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার মাধ্যমে আক্রান্ত এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে পৃথক দুটি কমিটি কাজ করছে। এ তালিকা পাওয়ার পর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করা হবে। পাঠানো হবে ত্রাণের চাহিদাপত্রও।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, চাহিদার বিপরীতে ১৫ লাখ টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে। সেই অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মানুষদের কাছে পৌঁছানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত চাল মজুদ থাকায় মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাইতে হয়নি। জেলায় মোট কতজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার তালিকা করতে উপজেলার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ তালিকা পাওয়ার পর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরালো হবে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য ১৫ জনের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে সাত উপজেলার ইউএনওসহ চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, এনজিও কর্মী রয়েছেন। ত্রাণের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়নি। তবে আপৎকালীন কিছু ত্রাণ মজুদ আছে।
রাঙামাটিতে যায়নি ত্রাণ :দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও তেলের সংকটের কারণে রাঙামাটির দুর্গম এলাকায় ত্রাণের কোনো গাড়ি এখনও যায়নি। জেলা প্রশাসক আপৎকালীন খাদ্যদ্রব্য মজুদ থাকার কথা বললেও ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, তারা কেউই ত্রাণ পাননি। রাঙামাটির ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে দুই হাজার ১০০ জন নারী-পুরুষ রয়েছেন। বিএডিসি আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা আশরাফ বলেন, প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। চার দিন হয়ে গেছে এখনও প্রশাসনের কারও দেখা পাইনি। এক মুঠো চালও পাইনি ত্রাণ হিসেবে। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সালমা আক্তার বলেন, শুনেছিলাম, ক্ষতিগ্রস্তদের চাল ও ঢেউটিন দেওয়া হবে। কিন্তু চার দিনেও খবর নিতে আসেনি কেউ। স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করা ডাল- ভাত খেয়ে বেঁচে আছি।
কাপ্তাই প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম লাভলু জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ সহায়তা পায়নি, শুধু নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা সরকারি অর্থ সাহায্য পেয়েছেন। কাপ্তাইয়ের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ত্রাণ দিতে দেরি হচ্ছে। এদিকে উপজেলার তিনটি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ওইসব পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ত্রাণ পেলে তারা বাড়িঘরে ফিরে যেত।
স্থানীয় প্রশাসনের প্রাথমিক তালিকা অনুযায়ী, কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। ২১৭ পরিবারের বাড়িঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৪২২টি পরিবারের আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫০টি, মুরালীপাড়ায় ৪০টি ও রাইখালী ইউনিয়নে ২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয় ও রাইখালী আশ্রয়কেন্দ্রে ওয়াগ্গা বিজিবি ও ডংনালা বিজিবি প্রতিদিন খাবার সরবরাহ করছে। মুরালীপাড়া যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানে খাবারও পেঁৗছানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ৬২৭ পরিবারের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আগামী রোববার নাগাদ ত্রাণ পাওয়া যেতে পারে।
কাউখালীতে খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন মাত্র দু’জন! :কাউখালী সংবাদদাতা জিয়াউর রহমান জুয়েল জানান, এখানে পাহাড় ধসে ২১ জন নিহত হলেও মাত্র ২ পরিবার খাদ্য সহায়তা পেয়েছে। তাদের ৫ কেজি চাল, ১ লিটার তেল, দুই কেজি আলু, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি লবণ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও ত্রাণ শাখার প্রধান কমল বরণ সাহা বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। পাঁচ হাজার মানুষের জন্য ১০ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহে এসব খাদ্যশস্য ২০ কেজি হারে বণ্টন করা হবে। একই সঙ্গে নিহত ২১ জনের পরিবার ও আহত ৫ জনকে এখন পর্যর্ন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, যেসব পরিবারে একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, তাদের আপাতত ১০ হাজার টাকা ও একজন মারা যাওয়া পরিবারকে পাঁচ হাজার এবং আহতদের আপাতত তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত টাকা এলে ঘোষিত সব টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে।
চাহিদাকৃত ত্রাণ পায়নি চট্টগ্রামও :গত চার দিনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় ৩১ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ত্রাণ পায়নি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রায় আড়াই হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের জন্য ১০ লাখ টাকা ও ৫০ টন চালের সাহায্য চেয়েছি। এর মধ্যে ৩০ টন চাল হাতে এসেছে। যা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে। নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছে। আহতদের পাঁচ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে।
চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বলেন, টানা বর্ষণে উপজেলার সাত হাজার ৫৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে চালসহ আর্থিক অনুদানের জন্য জেলা প্রশাসনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ টন চালের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলায় নিহত চারজনের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ উপলক্ষে উপজেলায় বরাদ্দকৃত ৫২ দশমিক ২২ টন চালও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল হাসান ভূঁইয়া জানান, প্রায় দুইশ’ টনের মতো চাল মজুদ আছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ টন রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশসহ আরও কয়েকটি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ১২ লাখ টাকার আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়েছে।
বান্দরবানে ত্রাণের চাহিদায় পাঠানো হয়নি :বান্দরবান থেকে এখনও ত্রাণের চাহিদা পাঠানো হয়নি। চূড়ান্ত করা হয়নি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকাও। আপৎকালীন মজুদ থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা কিছু মানুষকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধলাখ মানুষ এখনও ত্রান থেকে বঞ্চিত। লামা উপজেলা সদর ও পৌরসভার মধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। এসব পরিবারকে চিড়া, মুড়ি, খিচুড়ি, শুকনো খাবার ছাড়া কোনো ত্রাণ বা চাল বিতরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সদর উপজেলা পিআইও মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার পৌরসভার ভেতরের ৫৩১ পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। পৌরসভার সহায়তা তালিকা করে বন্যাকবলিতদের ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পেলে ত্রাণ কার্যক্রম জোরালো করা হবে। পৌর মেয়র মো. ইসলাম বেবী বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সারোয়ার কামল জানান, উপজেলায় বন্যায় ২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। দোছড়ি সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রাণ পেঁৗছাতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
আরও দুই লাশ উদ্ধার, অভিযান সমাপ্ত :গতকাল রাঙামাটির দক্ষিণ মুসলিমপাড়া থেকে মজিবুর রহমান (১২), আরণ্যক এলাকার মো. ইব্রাহিমের (২৫) লাশ উদ্ধার হয়েছে। ইব্রাহিমের বাড়ি দক্ষিণ মুসলিমপাড়ায়। এ নিয়ে চার দিনে শুধু রাঙামাটিতেই ১১০ জনের লাশ উদ্ধার হলো। পরে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। চট্রগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের ৬০ সদস্যের দল আজ শনিবার ফিরে যাবে। তবে স্থানীয়দের কাছ থকে নিখোঁজের তথ্য পেলে উদ্ধার অভিযান চালাবে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক পরিমল চন্দ্র কুণ্ডু বলেন, পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়ার পর আরণ্যক এলাকা থেকে ইব্রাহিমের লাশ উদ্ধার হয়। আর মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় মজিবুরের লাশ।
সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও ভূমিধসের বিষয়টি প্রাকৃতিক। বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তন ও ভারি বর্ষণে এ ঘটনা ঘটেছে। এবারের ভারি বর্ষণে রাঙামাটির সব পাহাড়ের চূড়া ভেঙে গেছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা। আমরা সচেতন থাকব। উদ্ধার কাজে জেলা প্রশাসনসহ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় তরুণ-যুবা ও বিভিন্ন সংগঠন সহায়তা করেছে বলেও জানান তিনি। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ উপস্থিত ছিলেন।
অন্ধকার কাটল রাঙামাটিতে :তিন দিন বিদ্যুৎহীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে আলোর দেখা পেয়েছেন রাঙামাটিবাসী। পুরো জেলায় বিদ্যুৎ না গেলেও অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। তবে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক এখনও সচল হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে_ মহাসড়ক সচল হতে আরও কয়েকদিন লাগবে।
সমকাল
পাঠকের মতামত