ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৩/০৯/২০২৩ ৭:০৬ এএম

এখনও স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি কাপ্তাই হ্রদের পানি। পানি ছাড়া নিয়ে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ লুকোচুরি খেলায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

বর্তমানে হ্রদের পানি অবস্থান করছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০৮ দশমিক ৩৬ ফুট উচ্চতায়। এতে নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। ডুবেছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল। পানি নেমে ১০৭ ফুটে না আসা পর্যন্ত এ দুর্ভোগ কমবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডুবেছে রাঙামাটিতে ১৮টি প্রাথমিক ও ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পাঠদানের অনুপযোগী ও স্কুলে আসা যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস।

এদিকে, হ্রদ তীরবর্তী রাঙামাটি শহরের সব বাড়িঘরে পানি উঠে চরম বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয়রা।

পৌর শহরের ট্রাক টার্মিনাল এলাকার বাসিন্দা নাজমা বেগম বলেন, ‘ঘরের মাচাং পর্যন্ত পানি ওঠায় ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পৌর কলোনির ৩০টির অধিক বাড়িতে পানি উঠেছে। ঘরে খাট-পালঙ্ক নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। পানি গায়ে লাগলে চুলকাচ্ছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। খুব কষ্টে আছি।’

ফিসারী বাঁধ শান্তিনগরের বাসিন্দা মো হালিম বলেন, ‘গত ১৫ দিন আগে আমাদের ঘরে পানি ঢুকেছে। পরবর্তীতে এ পানি বুক সমান হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়েছে। কবে বাড়ি ভেসে উঠবে ঠিক নেই। পানি এক ইঞ্চি কমার পর আবার দুই ইঞ্চি বাড়ে।’

শহরের রাঙাপানী এলাকার বাসিন্দা রিপন চাকমা বলেন, ‘রাঙাপনীর লুম্বীনি সড়কটি ডুবে যাওয়ায় স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা কষ্ট পাচ্ছে। নৌকাও নেই। বাজার থেকে মালামাল আনা যাচ্ছে না। দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।’

এ এলাকাগুলো ছাড়াও শহরের হাসপাতাল এলাকা, পাবলিক হেলথ, রাজদ্বীপ, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজার, পুরান বস্তি, ঝুলক্যা পাহাড়া, বনরুপার বলপেয়ে আদাম, লেমুছড়ি, আসামবস্তি, গর্জনতলী, কাঠালতলির প্রায় ২ হাজারেও বেশি বাড়িতে পানি উঠেছে।

শহরের ব্রাহ্মণ টিলা, রাঙাপানির নুও আদাম, লুম্বিন, আলুটিলার যাতায়াতের সড়ক ডুবে যাওয়ায় পানিবন্ধী হয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পানি ছাড়ার কথা বললেও কার্যত পানি কমছেই না। কিছু পানি কমার পর আবার বাড়ছে।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বাঁধের ১৬টি দরজা দিয়ে ১ ফুট করে পানি ছাড়া হচ্ছে। উজানের পানি বিগত সময়ের চেয়ে কম আসছে’।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘পানি বাড়ায় ১০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পানিতে ডুবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।এসব মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়েছে। জেলার ৪টি উপজেলায় ১২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। দুর্গত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির পাশপাশি ত্রাণ কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দেওয়ায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।’

১৯৬০ সালে কাপ্তাই উপজেলায় কর্নফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে তৈরি করা হয় কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ বাঁধের কারণে তালিয়ে যায় ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা, যা কাপ্তাই হ্রদ নামে পরিচিত। কালের বিবর্তনে হ্রদের তলদেশ ভরাট হওয়ায় পানি বৃদ্ধি পেলে প্রায়ই দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়

পাঠকের মতামত

ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দুর্বল চেকপোস্ট :গাইবান্ধায় গিয়ে রোহিঙ্গা যুবকসহ গ্রেফতার ৩

গাইবান্ধায় ভোটার হতে এসে রোহিঙ্গা যুবকসহ আটক ৩ গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার নিবন্ধন ...