
তাদের কারো জন্ম নাফ নদের ওপর নৌকায়। কারো নদের পাড়ে।কারো বা নদীর তীরে ধানক্ষেতে, জঙ্গলে, কোনো গাছের নিচে, রাস্তায় বা খোলা আকাশের নিচে। অর্থাৎ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদের আশপাশে তাদের জন্ম। গত দুই মাসে এ রকম আনুমানিক তিন-চার শ রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম হয়েছে সীমান্তে। মিয়ানমার থেকে আসা এসব ‘সীমান্ত শিশু’ কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে ঠাসাঠাসি করে কোনো রকমে বেঁচে আছে।
এমন শিশুর জন্ম দেওয়া একজন মা ফাতেমা বেগম (৩০)। মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব থেকে বাঁচতে গর্ভবতী অবস্থায় মাইলের পর মাইল পথ হেঁটেছেন তিনি। যখন নাফ নদের তীরে পৌঁছে নৌকায় পা দিয়েছেন, তখনই তাঁর প্রসব বেদনা ওঠে। অগত্যা তীরে উঠে খোলা আকাশের নিচেই জন্ম দিলেন পুত্রসন্তানের।
দুই দেশের সীমান্তের নাফ নদ সাক্ষী হয়ে রইল প্রকৃতির বুকে এই ফুটফুটে নিষ্পাপ শিশুর আগমনের। ভূমিষ্ঠ হয়েই এই শিশু অঝোরে কাঁদতে শুরু করে। তার কান্না শুনে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীরা ছুটে আসতে পারে—এই ভয়ে তড়িঘড়ি করে আবার নৌকায় ওঠেন সদ্যঃপ্রসব করে যন্ত্রণাকাতর মা। নিজের বুকের ধনকে নিয়ে এসে ফাতেমা আশ্রয় নেন উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের ই ব্লকে।
পাঁচ দিন আগে বাংলাদেশে ঢুকেছেন ফাতেমা। তিনি বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমার স্বামীকে মিয়ানমারের সেনারা ধরে নিয়ে গুম করে ফেলেছে। ছোট ছোট তিনটি সন্তান নিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে আছি। ’
ফাতেমার মতোই আরেক দুঃখিনী মা নবীন সোনা। মিয়ানমারের খেয়ারীপাড়ার এই নারীর কোলে ২৫ দিন বয়সী এক কন্যাসন্তান। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পথে সীমান্তে নাফ নদের তীরে ধানক্ষেতে এই কন্যার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
শুধু এই দুজনই নয়, রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোতের মধ্যে এ রকম বহু ‘সীমান্ত শিশু’র জন্ম হয়েছে। অনেক শিশু পৌষের কনকনে শীতে অনাহারে-অর্ধাহারে বস্তি ঘরে কোনো রকমে ঠাসাঠাসি করে বেঁচে আছে।
অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে বেসরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা (এনজিও) স্বাস্থ্য, পুষ্টি, স্যানিটেশন বিষয়ে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে অ্যাকশন কন্ট্রোল ফেম (এসিএফ) কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিশুদের নিয়ে কাজ করছে। শেড নামের একটি এনজিওর কর্মকর্তা জিয়াউল হক আজাদ কালের কণ্ঠকে জানান, কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবিরে সদ্য অনুপ্রবেশকারী এক হাজার ৮০০ রোহিঙ্গার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ৯০ জন নবজাতক রয়েছে। এসব নবজাতকের জন্ম হয়েছে গত দেড়-দু মাসে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে বাংলাদেশের উখিয়া পর্যন্ত এলাকার পথে পথে। বেসরকারি সংস্থা এসিএফ এসব নবজাতকের স্বাস্থ্যগত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের তত্ত্বাবধানে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা আবু সিদ্দিক জানান, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নবজাতকের সংখ্যাও বাড়ছে। অন্যদিকে টেকনাফের লেদা অনিবিন্ধত রোহিঙ্গা বস্তির নেতা দুধু মিয়া জানান, ওই শিবিরেও সাত হাজারের মতো সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের মধ্যেও বেশ কিছুসংখ্যক নবজাতক রয়েছে, যাদের জন্ম হয়েছে মিয়ানমার থেকে লেদা শিবিরে আসার পথে। সুত্র;কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত