প্রকাশিত: ০৪/১১/২০১৭ ৭:৫৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৩৪ এএম

বিশেষ প্রতিবেদক :
রাখাইনের আকাশে যখন উড়ে বেড়াচ্ছে কালো ধোয়া। বাতাসে বারুদের গন্ধ । গ্রামে গ্রামে লাশের স্তুপ। যেখানে বেঁচে থাকার স্বপ্নই দু:স্বপ্ন। ঠিক সেই মুহুর্তে উখিয়ার কুতুপালংয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিশুরা মনের আনন্দে আঁকছে ফুল, পাখি, নদী , গাছপালা আর পাহাড়ের ছবি। কখনো বা কচি হাতের রংতুলিতে মনের মাধুরি মিশিয়ে আকঁছে প্রিয়জনের প্রতিচ্ছবি। কখনো সাজছে বাঘ, বানর আর ভাল্লুকের বেশে। আবার মনের আনন্দে খেলছে সমবয়সীদের সাথে।
কচি বয়সে নিষ্ঠুর নির্মমতার স্বাক্ষী রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্যই উখিয়ার কুতুপালংয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একশ’ত শিশু বান্ধব কেন্দ্র। আর সেসব কেন্দ্রগুলো প্রতিদিনই হাজারো শিশু পদচারণায় মুখরিত হয়।
সূত্র জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৬ লক্ষ রোহিঙ্গার ৬০ শতাংশই শিশু। কোনো না কোনো ভাবে যাদের সকলেই মানসিকভাবে বির্পযন্ত। এসব শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের লক্ষ্যেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে তোলা হয়েছে একশো শিশু বান্ধব কেন্দ্র। আর এবিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুবান্ধব কেন্দ্র খোলা থাকে। সকল বয়সী শিশুদের জন্য এটি উন্মুক্ত। ইচ্ছেমত সময়েই তারা ওখানে যেতে পারে।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা শিশু করিম বলেন, আমি প্রতিদিনই এখানে আসি। খেলতে পারি বলেই আসি। এখানে আসতে আমার অনেক ভাল লাগে।
অন্য আরেক শিশু শামিম বলেন, এখানে এসে আমরা ছক্কা খেলি, হরিণ খেলি, ছবি আকি। গান গাই । আর কত কিছু করি।
সরেজমিনে গতকাল উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়ার গুলশান পাহাড়ের শিশু বান্ধব কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩০ ফুট ৪০ ফুটের একটি কক্ষে জনা পঞ্চাশেক রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে। এদের অনেকেই ছবি আকঁছে। কেউ কেউ নানা ধরণের পোষাক খেলছে বন্ধুদের সাথে। আবার অনেকেই দু:সহ স্মৃতি ভুলে প্রান খুলে গাইছে গান। এ যেন রোহিঙ্গা শিশুদের স্বর্গরাজ্য।
এসময় রোহিঙ্গা শিশু মালেকা বলেন, প্রায়ই প্রতিদিনই আমি এখানে আসি। এখানে দুই তিনঘন্টা সময় ব্যয় করি। যতক্ষণ আমি এখানে থাকি ততক্ষণ আমি ভাল থাকি। মনে হয় এ যেন অন্যরকম এক জগৎ।
ওই কেন্দ্রের শিশুদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সুমাইয়া বলেন, এখানে আসা শিশুদের কাছ থেকে আমরা কখনো রাখাইন সম্পর্কে জানতে চাই না। তাদের অতীত নিয়ে কোন প্রশ্ন করি না। আমরা সবসময় চেষ্টা করি শিশুদের হাসিখুশি রাখতে। আমাদের ভাল লাগে তাদের সাথে খেলতে, দুষ্টমি করতে।
এ বিষয়ে ইউনিসেফ এর কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ফারিয়া সেলিম বলেন, মানসিক বির্পযস্ত শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে অনেকগুলো উপায় রয়েছে। এরমধ্যে প্রথমধাপ হচ্ছে খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চা। এখানে আসলে শিশুরা ছবি আকতে পারে, খেলতে পারে, গান গাইতে পারে। এর মধ্যে দিয়েই তাদের মন থেকে ফেলে আসা দু:সহ স্মৃতিগুলো মুছে যাবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সদ্য স্বচক্ষে দু:সহ স্মৃতি দেখা আসা শিশুদের মুখে হাসি ফোটানোয় বাংলাদেশ সরকারের এ একটি বড় অর্জন। রোহিঙ্গা শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা সহ এতিম শিশুদের সুরক্ষায় সরকার বিশেষ কিছু ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। তারই একটি এই শিশু বান্ধব কেন্দ্র।

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...