প্রকাশিত: ১৮/০৯/২০১৭ ৮:৩৮ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:২২ পিএম

এম.এ আজিজ রাসেল::
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে গ্রামীণফোনের নিবন্ধিত সিম। কক্সবাজার গ্রামীণফোনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি উখিয়া ও টেকনাফের দালাল চক্রের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এই অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন রকম কাগজপত্র ছাড়াই গ্রামীণফোনের এসব সিম বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর রোহিঙ্গাদের নামে নিবন্ধন না থাকায় এসব সিম ব্যবহার করে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সুধী মহল। কক্সবাজার শহর থেকে গ্রামীণফোনের ডিলার অফিস থেকে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন দালাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। শহরেও সক্রিয় হয়ে উঠেছে গ্রামীণফোনের ডিষ্ট্রিবিউশন অফিস কেন্দ্রীক একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করে আসছে নিবন্ধিত গ্রামীণফোনের সিম। তাদের মূল টার্গেট রোহিঙ্গা। গত ১৭ আগষ্ট বরিবার বিকালে কাগজপত্র ছাড়া গ্রামীণফোনের সিম বিক্রিকালে শহরের বিলকিস মার্কেটের সম্মুখ থেকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গ্রামীণফোনের এক বিক্রয়কর্মীকে আটক করলেও জনভীড়ের মধ্যে সে পালিয়ে যায়। এসময় একটি টেবিল, একটি আইপড ও গ্রামীণফোনের ১৩টি সিম জব্দ করা হয়। পরে সদর থানার এসআই শফিক ও এএসআই শামীমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা জব্দকৃত মালামাল নিয়ে থানায় যায়।

গোয়েন্দ সংস্থার সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে একটি সিন্ডিকেট আইডি কার্ড বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না নিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে গ্রামীণ ফোনের সিম বিক্রি করে আসছে। বিষয়টি অনুধাবন করে রবিবার গ্রামীণফোনের একটি সিম বিক্রিকালে হাতনাতে এক বিক্রয়কর্মীকে আটক করা হয়। যার সিম নাম্বার ০১৭৮৩-৭৩৮৮৫৭। পরে ভীড়ের মধ্যে সে পালিয়ে যায়। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা শহরের গ্রামীণফোনের ডিলার জনৈক হাবিব। তার প্রধান অফিস রশিদ কমপ্লেক্সের ৩য় তলায়। হাবিবের মিশন বাস্তবায়ন করে আসছে এস, আর মামুন নামে এক যুবক। সে বিলকিস মার্কেট, এবি সুপার মার্কেট, জিলানী মার্কেট, আসাদ কমপ্লেক্সসহ আশপাশে দোকান ও উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন দোকানসহ ভ্রাম্যমান টেবিল বসিয়ে গ্রামীণফোনের সিম বিক্রি করে আসছে। তবে সিম বিক্রির সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হচ্ছে না। সিম গুলো পূর্ব থেকে বিভিন্ন নামে-বেনামে নিবন্ধিত করা।

মংডুর চারখম্ব এলাকা থেকে কামাল হোসেন (২৫) নামে এক যুবক গত একসপ্তাহ আগে বাংলাদেশে এসেছেন। তার স্ত্রীর নাম আয়েশা। পরিবারের ৯ জন কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্প সংলগ্ন আম গাছতলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখা গেল।

এসময় তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সিম কেনার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারেই আমার মোবাইল ছিল। বাংলাদেশে আসার পর একজনের কাছ থেকে ২০০০ টাকায় একটি সিম (গ্রামীণফোণের) কিনেছি।’ কার কাছ থেকে সিম কিনছেন? জানতে চাইলে কামাল হোসেন বিক্রেতার নাম বা মোবাইল নম্বর দিতে পারেননি। তবে তিনি জানান, মূলত দালালরা গোপনে সিম প্যাকেজ আকারে বিক্রি করছেন। রোহিঙ্গারাও এর সুযোগ নিচ্ছেন। মো. রহিম (২১) দশ দিন আগে বাংলাদেশে এসে ১৫০০ টাকায় একটি সিম (গ্রামীণফোনের) কিনে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সবাই হারিয়ে যায়, তাই মোবাইল দরকার। তাছাড়া আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে মোবাইল দরকার।’

মো. রফিক নামে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, কুতুপালংয়ে আসার পর কক্সবাজার শহরের এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৫০০ টাকায় গ্রামীনফোনের সিম কিনেছি। এ ক্ষেত্রে কোনও কাগজপত্র লাগেনি। সিম খুব ভালোই চলছে।’ তিনি জানান, বেশির ভাগই (গ্রামীণফোনের) সিম পাওয়া যাচ্ছে। তবে অন্য রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল এর সিমও পাওয়া যায়। নূর কামাল হোসেন (৩০) নামে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, একটি মোবাইল ও সিম (গ্রামীণফোনের) পাঁচ হাজার দুইশ টাকায় কিনেছি। যার মধ্যে কুতুপালংয়ের বাজারের একটি দোকান থেকে সিমটি ৮০০ টাকায় কিনেছি। সিম কিনতে কাগজপত্র বা ছবি দিতে হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, কোনও কাগজপত্র লাগেনি।’

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার গ্রামীণফোনের ডিষ্ট্রিবিউশন ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, বর্ডারের কাছে গ্রামীণফোনের কোন টাওয়ার নেই। যার কারণে নেটওয়ার্ক কম। সেখানে আমাদের সিমও ব্যবহার হয় কম। আর রোহিঙ্গাদের কাছে সিম বিক্রির কোন প্রশ্নই আসে না।

এ বিষয়ে গ্রামীণ ফোনের ডিলার হাবিব জানান, আমরা সরাসরি কোম্পানীর সাথে জড়িত। অনেক ব্যবসায়ী আমাদের কাছ থেকে পাইকারী সিম কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সিম গুলো এক্টিভেট না। আইডি কার্ড দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করলে তারপর এক্ট্রিভ হবে। আইডি কার্ড না নিয়ে যারা সিম বিক্রি করছে তাদের নামে অবশ্যই রেজিষ্ট্রেশন করা আছে। তদন্ত করলে তা বের হবে।

সদর থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া জানান, গত রবিবার কাগজপত্র ছাড়া নিবন্ধিত সিম বিক্রিকালে গ্রামীণ ফোনের ১৩টি সিম বিলকিস মার্কেটের সম্মুখ থেকে জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, এভাবে সিম বিক্রিতে ঝুঁকি আছে। কারণ যেসব নাগরিক সুবিধা আমার ভোগ করি, তারাও সেটা চাইবে। বৈধভাবে না পেলে তারা অবৈধভাবে পেতে চাইবে। তাই একটা বৈধ প্রক্রিয়া শুরু করা উচিৎ। অনেক দেশ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সিম দিয়ে থাকে। এরপর সেট ব্লক হয়ে যায়। আমরা সেটাও করতে পারি। তবে তাদের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত করা যাবে না। তাহলে দালাল ও অবৈধ পথ উৎসাহিত হবে। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অপারেটরদের সিম তাদের কাছে কারা বিক্রি করছে তা খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া এগুলো নজরদারির জন্য মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব প্রক্রিয়া রয়েছে। তারপরও আমরা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

পাঠকের মতামত

খেলাভিত্তিক শিক্ষায় ব্র্যাকের তথ্য বিনিময় অনুষ্ঠান

শিশুদের খেলাভিত্তিক শেখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা ও মনোসামাজিক বিকাশ নিশ্চিতে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ...

১২ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ধর্মীয় প্রচার কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ...