প্রকাশিত: ০৭/০৯/২০১৬ ৮:১০ এএম

babulউখিয়া নিউজ ডেস্ক::

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার গতিপথ কি মুছাতেই থেমে গেল! এ প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মিলছে না পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে। মিতু হত্যার তিন মাস পার হয়েছে। তিন মাস পরও এই মামলার কোনো কিনারা হয়নি। পুলিশের ‘বিশ্বস্থ সোর্স’ মুছা তবে কোথায়? পুলিশের দাবি, তার খোঁজে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ নানা স্থানে অভিযান চলছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। অন্যদিকে তার পরিবারের সদস্যদের ধারণা, মিতুর পরিণতি বরণ করতে হয়েছে মুছাকে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির নগর গোয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, এ মামলায় মুছাসহ কয়েকজন আসামি এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। ইনফ্যাক্ট এখনো আমি অভিযানে আছি। কবে নাগাদ মামলার তদন্ত শেষ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু সময় লাগছে সত্য, তবে আমি চাইছি পূর্ণাঙ্গ একটা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে।

এদিকে গতকাল মিতু হত্যা মামলার বাদী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। মামলার তদন্তে এটি প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত আবু মুছার নামটি এসেছে গ্রেপ্তারকৃতদের জবানবন্দিতে। তবে পুলিশেরই একটি অংশের দাবি, মুছা এ হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কারী। পরিকল্পনাকারী অন্যজন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট (সিটিআই)। মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, মুছাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। এদিকে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার বলছেন, ২২ জুন সকাল ৭টায় বন্দর থানাধীন কাটগড় এলাকায় নূর নবী নামে এক ব্যক্তির বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তার ভাসুর সাইদুল আলম সিকদার ওরফে সাকুকে আটক করে। এর আগে তাদের সবাইকে জিম্মি করে আটক করে নিয়ে যায় বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম। এরপর থেকে মুসার আর কোনো হদিস পাচ্ছেন না তারা। মুসার স্ত্রী বলেন, তার ভাসুরকে ৯ দিন পর পুলিশ আদালতে হাজির করলেও মুসাকে আটকের কথা স্বীকার করছে না। তার ধারণা, আসল হোতার নাম বেরিয়ে পড়বে, তাই তার স্বামী মুসাকে পুলিশ গুম করেছে।

মিতু হত্যাকাণ্ডের ক’দিন আগেই পদোন্নতি পেয়ে বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার হয়েছেন। এটি পুলিশের কমান্ড কাঠামোতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর। এই স্তরের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা কোনো কারণ ছাড়া ঘটতে পারে না বলেই বিশ্বাস করেন পুলিশের অনেক কর্মকর্তা। তাহলে কার নির্দেশে ঘটেছে এই হত্যাকাণ্ড? পুলিশের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা মনে করেন, তদন্তকারীদের এখন খুঁজে বের করতে হবে ঘটনার পেছনে কে রয়েছে।

মিতুর খুনিরা ছিল ভাড়াটে এবং সংঘবদ্ধ খুনিচক্রের ভয়ংকর সদস্য। এই খুনিদের কে ভাড়া করেছে, সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। হত্যাকাণ্ড সংঘটনে জড়িত প্রত্যেকেই ভাড়াটে কিলার। এ বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করলেও পরিকল্পনাকারী সম্পর্কে তাদের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে স্বামী বাবুল আক্তারই রয়েছেনণ্ডএমন অভিযোগ ওঠে। ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর এ অভিযোগ এবং সন্দেহ আরও জোরালো হয়। এছাড়া এ ঘটনা নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছেন বাবুল আক্তার। এরই মধ্যে জানাজানি হয় তার পদত্যাগপত্র দেয়ার কথা। বাবুল আক্তারের পদত্যাগ করা না করা নিয়েও চলে নানা আলোচনা। ঘটনার তিন মাস পরও কর্মস্থলে যোগ দেননি, ছুটিও নেননি। তার চাকরি নিয়েও চলছে এক ধরনের লুকোচুরি। একবার বলা হচ্ছে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বলেই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। ক’দিন আগে দেখা যায়, সেই পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করার আবেদন নিয়ে ছুটোছুটি করেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি হয় কাল। তার অব্যাহতির ফলে তাকে কেন্দ্র করে চলা জল্পনার অবসান হলো। তবে মিতু হত্যার কোনো কিনারা হয়নি।

এদিকে গত ২৯ জুলাই অস্ত্র মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। এটি নিয়েও স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। এতে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মনির হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে ঘটনার ‘পরিকল্পনাকারী’ কামরুল শিকদার ওরফে মুসাকে কার নির্দেশে ভোলা অস্ত্র দিয়েছিলেন তা বলা হয়নি। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলির উৎস অজানা রেখে অভিযোগপত্র জমা দেয়ায় তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

পুলিশ বলছে, মিতু খুনের ঘটনায় পৃথক একটি হত্যা মামলা হয়েছে, যার তদন্তে রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। খুনের মূল হোতাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার ওপরই বর্তায়।

গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। প্রথমে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। ঘটনার তিনদিন পর ৮ জুন হাটহাজারী থেকে আবু নছর গুন্নু নামে মাজারের এক খাদেমকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১১ জুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহজামান রবিন নামে আরেকজনকে। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে তাদের থাকার তথ্য পেয়েই গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। কিন্তু ঘটনার ২১ দিন পর ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে কিলিং মিশনের দুই সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর মিতুর কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সবার নাম প্রকাশ পায়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় সাতজন। এরা হলো মুছা, ওয়াসিম, নবী, আনোয়ার, রাশেদ, শাহজাহান ও কালু। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহ করে ভোলা। এদের মধ্যে ওয়াসিম, আনোয়ার, ভোলা ও শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। এছাড়া মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেয়ায় মুছার ছোট ভাই সাইদুল ও অস্ত্র জমা রাখায় ঠেলাগাড়ি চালক মনিরকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নবী ও রাশেদ কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। মুছাকে নিয়ে পুলিশ ও তার স্বজনদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে। বাকি রয়েছে কালু। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেণ্ডএমন দাবি পুলিশ কিংবা তার পরিবার কোনো পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।আজাদী

পাঠকের মতামত

সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী সপ্তাহজুড়ে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির ...