
নিউজ ডেস্ক::
ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ২৮ শিশুমৃত্যুর মামলায় ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার গাফিলতিতে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে স্বাস্থ্য সচিবকে তলব করেছে হাইকোর্ট। আগামী ২৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল হককে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৩ আগস্ট ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে ২৮ শিশুমৃত্যুর ঘটনায় করা মামলা পরিচালনায় ‘অদক্ষতা ও অযোগ্যতার’ কারণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানাতে বলেছিল হাইকোর্ট। স্বাস্থ্যসচিব ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন আকারে তা জানাতে বলা হয়েছিল।
এর ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্য সচিবের পক্ষ থেকে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন ও সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামকে সতর্ক করা হয়েছে। যদিও ইতিপূর্বে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সার্বিক প্রেক্ষাপট ও কাগজপত্র পর্যালোচনায় ওই দুই কর্মকর্তা আইনানুগভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সক্ষম হননি। কিছু ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান রিড ফার্মার মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে খালাস দেন। খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- মিজানুর রহমানের স্ত্রী ও রিড ফার্মার পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আবদুল গনি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।
গত জানুয়ারি মাসে এই রায়ের বিরুদ্ধে পাঁচজনের পর্যাপ্ত সাজা চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে রিড ফার্মার বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ পানে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৮ শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
কারখানায় ভেজাল ও নিম্নমানের প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, রিড ফার্মার টেমসেট সিরাপ (প্যারাসিটামল) এবং নিডাপ্লেক্স সিরাপ (ভিটামিন বি কমপ্লেক্স) খেয়ে কিডনি অকেজ হয়ে শিশু মারা গেছে মর্মে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর জনস্বার্থে ওই ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক এম আর খান এবং এইচ এস কে আলম ওই দুটি সিরাপের নমুনা সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করান। ২৯ জুলাই ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার রিপোর্টে বলেন, এগুলোতে ক্ষতিকর ডাই ইথাইল গ্লাইকল মেশানো হয়েছে। যা মূলত প্লাস্টিক বা চামরার রঙের থিনার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই প্যারাসিটামল পান করে শিশু মারাও গেছে। মামলা করার পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
টি
পাঠকের মতামত