প্রকাশিত: ২৭/০৭/২০১৭ ৩:১২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৪:০৮ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমার থেকে অন্তত ১৫টি রুটে বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে। তারপর কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের ৩৭ স্পট বা এলাকা হয়ে ইয়াবা দেশের ভেতরে ঢুকছে। ইয়াবার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের মুখে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। টেকনাফকে ‘ডেঞ্জার জোন’ বা বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে শনাক্ত করে নানা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গোয়েন্দা তথ্য ও পরিকল্পনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকা দিয়ে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়লেও দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয় তিন বছর আগে। যদিও অভিযানের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তাগিদ রয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কালের কণ্ঠকে বলেছেন, আবারও ওই এলাকায় বিশেষ অভিযান চালানোর ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৯ এপ্রিল টেকনাফকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বলে আখ্যায়িত করে সেখানে অধিদপ্তরের বিশেষ জোন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠায় ডিএনসি। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও টেকনাফকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে টেকনাফে ডিএনসির বিশেষ জোন স্থাপন, নাফ নদে মাছ ধরা কঠোরভাবে বন্ধ করা এবং ডিএনসির সমন্বয়ের মাধ্যমে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড নিয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে সাঁড়াশি অভিযানের পরিকল্পনা চলছে।

যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইয়াবা প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে সরকার কাজ করছে। কক্সবাজার-টেকনাফ সীমান্ত নিয়ে আমরা বিশেষভাবে পরিকল্পনা করছি। নাফ নদে ছোট ছোট নৌকায় মিয়ানমারে গিয়ে ইয়াবা বহন করে নিয়ে আসা সহজ। ইয়াবার বিস্তার রোধে সেখানে স্থায়ীভাবে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। সাময়িকভাবে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে জেলেদের পুনর্বাসনও করবে সরকার। ইয়াবার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও আমাদের কথাবার্তা হচ্ছে। ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই কক্সবাজার-টেকনাফে অভিযান চালায়। তিন বছর আগে বিশেষ অভিযানে কয়েকজন ইয়াবা ডিলার মারা যায়। বাকিরা এলাকা থেকে পালিয়েছে। তাই সেখানে তেমনভাবে অভিযান চালানো হয়নি। এখন আবার বিশেষভাবে অভিযানের ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি। ’

ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ইয়াবা চোরাচালান রোধে টেকনাফে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি বিশেষ জোন স্থাপনের প্রস্তাবনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি ইয়াবা প্রতিরোধে সম্মিলিত স্পেশাল ফোর্স গঠনের জন্যও আমরা চাপ দিয়ে আসছি। ’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, অতীতে ইয়াবা কারবারিদের যত তালিকা হয়েছে তাতে অন্তর্ভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের ৯০ শতাংশের বাড়িই কক্সবাজার-টেকনাফে। বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে অন্তত ১৫টি রুট দিয়ে ইয়াবা ঢোকার কথা বলা হচ্ছে, যার কেন্দ্র টেকনাফ ও কক্সবাজারে। টেকনাফ দিয়ে চোরাচালান হয় এমন ৩৭টি স্পট শনাক্ত করা গেছে। পার্শ্ববর্তী উপজেলা উখিয়া ও রামু লাগোয়া সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির কিছু পয়েন্টেও ইয়াবা কারবার চলছে।

ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর মাত্র ৯ জন লোকবল কাঠামো দিয়ে টেকনাফে অধিদপ্তরের একটি সার্কেল অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়। জরাজীর্ণ ভবনে চলছে সে অফিস। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সেখানকার আলমারি থেকে এক লাখ ৮১ হাজার ৯১৩ পিস ইয়াবা ও আড়াই কেজি গাঁজা চুরি হয়। সেগুলো ছিল ১৭টি মামলা ও সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আলামত। এক বছরেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি ডিএনসি। কর্মকর্তাদের দাবি, কম লোকবল ও অন্যান্য সুবিধা না থাকায় টেকনাফে প্রয়োজনীয় অভিযান চালাতে পারেন না তাঁরা। এ কারণেই একজন উপপরিচালককে (ডিডি) প্রধান করে টেকনাফে বিশেষ জোন স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে।

যেসব রুটে ঢুকছে : সংশ্লিষ্ট তথ্য মতে, ইউএনওডিসি (জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধসংক্রান্ত দপ্তর) বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য মতে ইয়াবা পাচারের প্রধান কয়েকটি উৎস ও গন্তব্য শনাক্ত করে। এগুলো হচ্ছে, মিয়ানমারের সিটওয়ে থেকে নৌপথে কক্সবাজার অথবা চট্টগ্রাম, মংডু থেকে বাউলি বাজার-সাহেব বাজার-ঘুনধুম হয়ে কক্সবাজার, মংডু থেকে বাউলি বাজার-সাহেব বাজার-পালেটোয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থাং ইয় থেকে সেন্ট মার্টিনস হয়ে কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম।

তিন বছর নেই বিশেষ অভিযান : ডিএনসির সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের এপ্রিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টাস্কফোর্স কক্সবাজার এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালালে শীর্ষ ইয়াবা কারবারি নূর মোহাম্মদ, জাহেদ হোসেন জাকু, ফরিদুল আলমসহ পাঁচজন নিহত হয়। গ্রেপ্তার হয় শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। এরপর গত তিন বছরে এমন অভিযান আর হয়নি। ডিএনসির পরিচালক সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তেমন অভিযান চালানোর সামর্থ্য আমাদের নেই। বিশেষভাবে সম্মিলিত ফোর্স গঠন করে অভিযানের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। নির্দেশনা পেলে আমরা সমন্বয়ের কাজ করব। ’ টেকনাফ মডেল থানার ওসি মাঈন উদ্দীন খান বলেন, ‘এখানে নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান হয়। আমরা রুটিনকাজের পাশাপাশি করে থাকি। র‌্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থাও অভিযান চালায়। ’

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সেই অভিযানের পর বড় ডিলাররা গাঢাকা দেয়। সম্প্রতি কয়েকজন জনপ্রতিনিধির মদদে কারবারিরা টেকনাফে ফিরতে শুরু করেছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীর দুই গ্রুপের সংঘর্ষে মোস্তাক আহম্মদ ওরফে হাজী মফিজ নামে এক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে নিহত হয়। সুত্র, কালেরকন্ঠ

পাঠকের মতামত

বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৪

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের ...

বৈষম্য মুক্ত শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাসূলুল্লাহর (স) আদর্শই একমাত্র পথ- মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, বৈষম্য মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আওয়াজ ...

সিনহা হত্যাকাণ্ড: সেনাপ্রধানের সঙ্গে মা-বোনের সাক্ষাৎ

সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ ...