স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার করার মতো কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার। তিনি বলেন, ‘বাবুল আক্তারকে কেন গ্রেফতার করব? এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই, যে কারণে তাকে গ্রেফতার করব।’ বুধবার বিকেলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি একথা বলেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার বাবুল আক্তারকে অব্যাহতি দেওয়ার পরপরই আলোচনায় উঠে আসে তিনি গ্রেফতার হচ্ছেন কিনা। কারণ, গত ২৪ জুন তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর থেকেই মিতু হত্যার রহস্য ঘনীভূত হতে থাকে। একই সঙ্গে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, আবার জোর করে তার কাছ থেকে পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়েছে বলেও গুঞ্জন ওঠে। তবে দীর্ঘদিন বাবুল আক্তার নিজেই এ বিষয়ে চুপ ছিলেন।
এর ৩৮দিন পর গত ৩ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে গিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেন বাবুল আক্তার। এরপর গত ৯ আগস্ট চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনপত্র প্রত্যাহার চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে আরেকটি আবেদন করেন তিনি। ওই আবেদনপত্রের একটি অংশে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিগত ২৪-০৬-২০১৬ ইং তারিখে পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে এবং আমার সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই চাকরি। এমতাবস্থায় উক্ত অব্যাহতি পত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি।’ এরপর বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে আসে।
একাধিক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘তার পদত্যাগপত্র দেওয়ার পর আমরা অনেকদিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু ওই সময়ে বাবুল প্রত্যাহারের কোনও আবেদন করেননি। কিন্তু যখন তার পদত্যাগপত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি, তখন তিনি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। তখন পুলিশ সদর দফতরের আর কিছু করার ছিল না।’ আইজিপি আরও বলেন, ‘স্ত্রী হত্যার পর মানসিক অবস্থার কারণে স্বেচ্ছায় তিনি পদত্যাগ করেছেন। এজন্য তাকে বাধ্য করা হয়নি।’
অব্যাহতির পর বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বক্তব্য পরিষ্কার। তদন্তের কোনও জায়গায় যদি তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কখনও তার কোনও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তখন সেই তথ্য-প্রমাণ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ তো আছেই। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই, যে কারণে তাকে গ্রেফতার করব।’
মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তার জড়িত কিনা জানতে চাইলে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাবুল মিতু হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়। আর মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও পুলিশ আমাকে কিছু জানায়নি। আমি সংবাদমাধ্যম থেকে যেটুকু জানতে পেরেছি, তার বাইরে কিছুই জানি না।’ পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাবুল চাকরি ফিরে পেতে আবেদন করেছিল। সে বলেছে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরও কিভাবে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলো তা আমি বুঝতে পারছি না। তবে বাবুল চাইলে এর বিরুদ্ধে আদালতে যাইতে পারে।’
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকায় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন। সুত্র:; bangla Tribune
পাঠকের মতামত