ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৯/১২/২০২৩ ৯:১১ এএম

সালাহউদ্দিন-নাফিজা দম্পতির বিয়ের মেহেদির উজ্জ্বলতা একটুও কমেনি। জীবনের নতুন ইনিংসের চার দিনের মাথায় উজ্জ্বলতা বেড়ে দ্বিগুণ। জীবনের প্রথম বিসিএসেই পুলিশ ক্যাডারে ৫১তম হয়ে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মহেশখালীর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের। তাঁর এমন কৃতিত্বে অনেকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন ‘বউ ভাগ্য’কে!

সালাহউদ্দিনের বিসিএস জয়ের পেছনে তাঁর তৃতীয় শ্রেণি পাশ মা কুলসুমা বেগমের অবদানই সবেচেয় বেশি। তিনি তাঁর সেরা শিক্ষক। তবে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী নাফিজা আনজুমের ভূমিকাও কম নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে আলাপচারিতায় সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমার মা খুব একটা লিখতে-পড়তে না জানলেও, চক-স্লেট দিয়ে রোজ আমাকে নিজে যতটুকু পারেন হাতে ধরে ধরে লেখা শেখাতেন। তার হাতেই পড়াশোনার হাতেখড়ি। আমার জন্য রাত জেগে টেবিলের ওপাশে সারাদিনের গৃহস্থালির কাজের ক্লান্তি উপেক্ষা করে বসে থাকতেন, কখনো বা বসে বসে ঝিমুতেন। তাও নিজে কখনো আমার আগে ঘুমাতেন না।’
এদিকে ফল ঘোষণার চারদিন আগে সাত বছরের বেশি সময়ের প্রেমিকা নাফিজা আনজুমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক পরিণয় ঘটে সালাহউদ্দিনের। গত ২২ ডিসেম্বর ধুমধাম করে প্রিয়তমাকে ঘরে তুলেন তিনি। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রিয়জনকে পাওয়া রাজ্য জয়ের সুখ আরো বর্ণিল করলো ৪৩তম বিসিএসের ফলাফল।

এই অদম্য মেধাবী কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ফকিরাঘোনা গ্রামের সৈয়দ আহমদ ও কুলসুমা বেগমের বড় সন্তান। তাঁর পিতা যৌবনে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক ছিলেন। পরে পান ব্যবসায় জড়িয়ে সুবিধা করতে পারেননি। টানাপোড়েনের সংসারে সন্ধ্যাকালীন বয়স্কশিক্ষার পাঠদান করানোয় তার বাবাকে ‘সৈয়দ মাস্টার’ নামেই এলাকার লোকেরা বেশী চেনেন।
বিয়ের আগে-পরে নানা ধকল গেছে সালাউদ্দিন-নাফিজা দম্পতির। তাই সাফল্য উদযাপনের পাশাপাশি এখন রাউজানের কন্যাকে মহেশখালীর নানান দর্শনীয় স্থান দেখানো, শ্বশুরপক্ষের আত্নীয়-স্বজনদের নিজ বাড়িতে এনে দাওয়াত খাওয়ানো নিয়েই সালাহউদ্দিনের এখন যত ব্যস্ততা। হবার-ই তো কথা! গত সোমবার গৌধূলীলগ্নে ধলঘাটার হাঁসের চরে বসে সুর্যাস্ত দেখার ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন নবদম্পতি।
পারিবারক সুত্রে জানা গেছে, ফল প্রকাশের দিন গত মঙ্গলবার দুপুরে ঝাপুয়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে নববধূকে নিয়ে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। সেখানেই এক বন্ধুর মারফতে প্রথম খবরটা শুনেন তিনি। কিন্তু বিশ্বাস করেননি। তাৎক্ষণিক নিজেই পিএসসির ওয়েবসাইট ঘেঁটে পুলিশ ক্যাডারে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর মিলিয়ে নেন। এরপর বাবা-মাকে জানান। মুহুর্তেই খবরটা সমগ্র মহেশখালীতে ছড়িয়ে পড়ে। সীমাহীন অভিনন্দন বার্তায় ভরে যাচ্ছে তার ফেসবুক-মেসেঞ্জার। অনেকে সরাসরি বাড়িতে যাচ্ছেন। রাস্তাঘাট, বাজারে বের হলেই মানুষ বুকে টেনে নিচ্ছে।
সালাহউদ্দিনের মতে, জীবনে এর চেয়ে সুখকর দৃশ্য আর নেই। হাস্যোজ্জ্বল মুখে তিনি বললেন, ‘রাস্তাঘাটে অনেকে দূর থেকে দেখিয়ে দিচ্ছে-দেখ, আমাদের গ্রামের ঐ ছেলেটা এএসপি হয়েছে।’
প্রাথমিকভাবে প্রথাগত স্বপ্ন হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলেও মানুষের মুখে মাহাত্ম্য শুনে ডাক্তার হতে চেয়েছিলেন। তবে বয়স বাড়ার সাথে ঝোঁক বাড়ে ইউনিফর্মের দিকে।
পুলিশ ক্যাডার কেন প্রথম পছন্দ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘একমাত্র পুলিশই ভুক্তভোগী মানুষকে সরাসরি সেবা দিতে পারেন। সমাজে তাদের অনেক সম্মান। বলতে গেলে- জীবনের নানা বাঁকে ‘অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা’ পুলিশ হতে তীব্র প্রেরণা জুগিয়েছে।’
যদি পুলিশ ক্যাডার না হতেন?-‘বিসিএস অথবা প্রথম শ্রেণির কোনো সম্মানজনক সরকারি চাকরিতে যোগদান, তা-ও না হলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার বিকল্প চিন্তা ছিল,’ বলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁদের পারিবারিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। এইচএসসিতে অধ্যয়নকালীন টিউশন করিয়ে নিজের খরচ নিজে বহন করেন। তাঁর পড়াশোনার কোন ধরাবাঁধা রুটিন ছিল না। চারটা টিউশন করিয়ে যেটুকু সময় পেতেন কোচিংয়ের লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ায় মনোযোগী ছিলেন। আড্ডা-ঘুরাঘুরি সবই ছিল, তবে নিয়মিত পড়াশোনাটা চালিয়ে যান।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সবসময় পিছুটান কাজ করলেও লক্ষ্যে অবিচল ছিলাম। পঞ্চম শ্রেণীর ‘ট্যালেন্টপুল স্কলারশিপ’ শিক্ষাজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পারিনি সেটাই ছিল সবচেয়ে দুঃসময়। তখন চারপাশটা সংকীর্ণ মনে হয়েছিল। তবে পরিবার পাশে ছিল।’
দীর্ঘ এ পথচলায় বহু প্রতিকূলতার মোকাবেলা করতে হয়েছে তাঁকে। মানিয়ে নিতে হয়েছে নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়ার বন্ধুর পথ। তাঁর এ সাফল্যে রয়েছে বেশ কিছু মানুষের অবদান।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘মা-বাবা ছাড়াও বড় মামা, সেজ মামা, ভাই-বোন, শিক্ষকবৃন্দ, আমার স্ত্রী, শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অবদান মোটেও কম নয়। বড় মামা তো খবর শুনে হাউমাউ করে কেঁদে-ই দিলেন। আমার জীবনটা কাছের মানুষ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের আশীর্বাদপুষ্ট।’
প্রেমিকার বিয়ের চাপ, দুঃসময়ে তার অবদান কি? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে মানসিক, আর্থিক সবদিক দিয়ে সাপোর্ট দিয়েছে।’
স্ত্রীর চোখে স্বামী সালাহউদ্দিন খুবই পরিশ্রমী ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পুরুষ। নাফিজা আনজুম বলেন, ‘তাঁর কঠিন মুহুর্ত ছিল যখন-আমার বিয়ের জন্য একাধিক প্রস্তাব আসা শুরু হয়। আমার ফ্যামিলি ওকে রিজেক্ট করে দেয়। সবাই যখন তাঁকে হেয় করতো, তখনও আমি ছিলাম, সুখের মুহুতেও আছি। এর চেয়ে সৌভাগ্যের কিছু নেই।’
সবাই ‘বউ ভাগ্য’ বলছে, এটিকে কিভাবে দেখছেন? স্ত্রীর মতে, সবাই তাঁকে ভাগ্যবর্তী বললেও সব ক্রেডিট তাঁর স্বামীর। নাফিজা আনজুম বলেন, ‘আজ সে (স্বামী) মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে আমার আস্থার প্রতিদান দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।’
প্রসঙ্গত, সালাহউদ্দিনের বাড়ির লাগোয়া কেজি স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে মাসিক ৫০ টাকা বেতনে সেই স্কুলে সালাহউদ্দিনকে কেজি শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর মা। এরপর হোয়ানকের বানিয়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী, হোয়ানক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১২ সালে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।
ভবিষ্যতে একজন নিষ্ঠাবান, সৎ, জনবান্ধব ও দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবা করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন তিনি। সুত্র,দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

হেলালী-মাহবুব-জাফর প্যানেলের পূর্ণ বিজয় উৎসবমুখর পরিবেশে সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার’র নির্বাচন সম্পন্ন

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে বহুল প্রতিক্ষীত সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার-জেইউসি’র দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সর্ম্পন্ন হয়েছে। এতে ...

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, প্রাণ গেল দুই আরোহীর

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার মৌলভীর দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাককে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ২ জন ...

মিয়ানমার সীমান্তে অপহৃত বাংলাদেশি নাগরিক দুলালকে উদ্ধার করল বিজিবি

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পোয়ামহুরী সীমান্ত থেকে অপহৃত বাংলাদেশি নাগরিক দুলালকে (৪০) উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড ...

উখিয়া -টেকনাফ উপজেলা নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশে মুহাম্মদ শাহজাহান “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব অপরিহার্য”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনে ...

পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মীর কাসেম অসুস্থ, রোগমুক্তি কামনায় দোয়া প্রার্থনা

কক্সবাজার তথা বাংলাদেশের গৌরব পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মীর কাসেম। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে ইউনিয়ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ...