প্রকাশিত: ১০/১০/২০১৬ ৭:২৯ এএম

shafi-556x330অনলাইন ডেস্ক : হিন্দুদের পূজার অনুষ্ঠানে কতিপয় মুসলমানের শরীক হওয়াকে সমর্থন ও উৎসাহিত করে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এমন উক্তি বা বক্তব্য দেয়া সম্পূর্ণ ইসলাম ও যুক্তি বিরোধী বলে উল্লেখ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমীর দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মানুসারীরাও এ ধরনের বক্তব্য স্বীকার করে না। যদি করত, তাহলে ভারতীয় মুসলমানদের পবিত্র কুরবানী’র উৎসবে হিন্দুরা হিংসাত্মক আক্রমণ ও বাধা দিত না।

গরু কুরবানীর হালাল কাজে বাধা দিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করতো না।

তিনি বলেন, গরু জবাই করা ও গরুর মাংস খাওয়া হিন্দুশাস্ত্রে নিষিদ্ধ থাকলেও ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে মুসলমানদের এই ধর্মীয় অধিকারে কেন বাধা দেয়া হচ্ছে? অপরদিকে মূর্তিপূজা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম, অথচ হিন্দুধর্মে এটাই উপাসনা ও পুণ্যের কাজ। কিন্তু মুসলমানরা তো ইসলামে নিষিদ্ধ মূর্তি পূজায় হিন্দুদেরকে কখনোই বাধা দেওয়ার দাবি বা আওয়াজ তুলেনি। আজ (৮ অক্টোবর) শনিবার সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে হেফাজত আমীর এসব কথা বলেন।

আল্লামা আহমদ শফী বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গাপূজা উপলক্ষে গত ৬ অক্টোবর সংবাদপত্রে প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন। দেশের সকল নাগরিকের সরকার প্রধান হিসেবে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দেওয়ার সাথে আমাদের দ্বিমত নেই। তাছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্যে নির্বিগ্ন পুজার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিবেন, সেটাও যৌক্তিক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পুজার বাণীর একটা অংশে বলেছেন, “দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে”। তিনি আরো বলেছেন, “আমার প্রত্যাশা, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই একসাথে উৎসব পালন করব”।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত ও আপত্তিকর। এই বক্তব্য বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলমানকে আহত করেছে। এমনকি ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল একজন মুসলিম নারী হিসেবে প্রধামন্ত্রীর ব্যক্তিগত পর্যায়েও এরূপ বক্তব্য রাখার কোনই সুযোগ নেই। অথচ আমরা শুনে থাকি, প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত নামায, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ আদায় করে থাকেন।

তিনি বলেন, এটা সকলেরই স্মরণ রাখা দরকার, ঈদ বা পূজা জাতীয় বা সামাজিক কোন রীতি বা অনুষ্ঠান নয়, এটা একেবারেই ধর্মীয় উৎসব। সুতরাং ধর্মীয় যে কোন আয়োজন-উৎসবে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরই স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, একটি বিষয় মুসলমানদের জেনে রাখা জরুরি যে, অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফভিত্তিক নাগরিক আচরণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ মনোভাব রাখা ইসলামের শিক্ষা। অমুসলিমদেরকে সব ধরনের সামাজিক ও মানবিক সহযোগিতা করা যাবে।

এতে ইসলাম কোনরূপ বাধা দেয় না। কিন্তু তাদের ধর্মীয় উপাসনা, পূজা বা আরাধনায় যে কোনরূপ অংশ নেয়া মুসলমানের জন্যে অবশ্যই হারাম। নিজে পূজা করা যাবে না, প্রতিমা তৈরিতে ব্যক্তিগত অর্থসাহায্য করা যাবে না, উপাসনায় দৈহিক, মানসিক, আর্থিক কোন ধরনের সহায়তা দেয়া যাবে না। যদি কোন মুসলমান ব্যক্তিগত পর্যায়ে অমুসলিমদের পূজা অর্চনায় শরীক হয়, পূজা অনুষ্ঠান উপভোগ করে, দেবীর কাছে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে, দেবীর বিভিন্ন গুণকীর্তন করে, তাহলে সে কোনভাবেই আর মুসলমান থাকে না।

তিনি বলেন, মুসলমানগণ পরস্পরের প্রতি ভাইয়ের মতো আচরণ করবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মীয় আচার-আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আচরণের প্রশ্নে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ না করে বরং সহনশীল ও সহিষ্ণু আচরণ করবে। মুসলিম দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণ অবশ্যই নাগরিক ও সামাজিক সকল সুবিধা ভোগ করবেন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ইদানীং সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায়সহ কিছু কিছু মহল থেকে এমন শ্লোগান তোলা হচ্ছে যে, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”। এটা কুফরী উক্তি। তিনি বলেন, মূলত এমন শ্লোগান তোলাটা মুসলমানদের ঈমানী চেতনাবোধ ধ্বংস করার নানামুখী ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ। তিনি বলেন, সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা-বিশ্বাস বাদ, ইসলাম বিরোধী শিক্ষানীতি প্রতিষ্ঠাসহ বিজাতীয় ভোগবাদি, নগ্নপনা ও বেহায়াপনার সংস্কৃতিকে অবাধ করে দেওয়ার পাশাপাশি নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে এদেশের মুসলমানদেরকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে, যেখানে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনাবোধ বলে কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবে না। দেখা যাবে, মুসলমান একদিকে নামায পড়ছেন, দাড়ি-টুপি ও হিজাব পরছেন।

আবার দাড়ি-টুপি ও হিজাব নিয়েই নাচ-গান ও পূজায় শরীক হওয়াসহ নানা অনৈসলামিক কাজেও সংকোচ ছাড়াই শামিল হচ্ছেন। অথচ কয়েক বছর আগেও দেখা যেত, সাধারণ-নাটক সিনেমা দেখার সময়ও ধর্মভীরু মানসিকতার ফলে মাথায় টুপি থাকলে সেটা খুলে রাখতে বা হিজাবহীন এমন মুসলিম নারীকেও আযানের আওয়াজ শুনলে বা কোন ধার্মিক পুরুষ মানুষ সামনে পড়লে মাথায় ওড়না টেনে দিতে দেখা যেত। এখন স্বাভাবিকভাবে এমন ধর্মভীরুতা দেখা যায় না। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের কুফল এভাবেই মনের অজান্তেই মুসলমানদের ঈমানীচেতনাবোধকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আল্লাহ আমাদের জাতিকে এমন অবস্থা থেকে হেফাজত করুন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে মুসলিম জাতিসত্তার জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেন।

পাঠকের মতামত

ইউসিবি ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে অঢেল সম্পত্তির প্রতিবেদন হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি ইউনাইটেড ...

ছাত্র-সংগঠনগুলোর ঐক্যে ফাটল, দুষছেন একে-অপরকে

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দলমত নির্বিশেষে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা ...