প্রকাশিত: ০৩/০৯/২০১৭ ৬:৪৭ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:০৯ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
‘এক সময় সংসার চালাতে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। আর এখন প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমাদের কি ঈদ বলতে কিছু আছে? স্বামী হারিয়ে পালিয়ে এসেছি। তিন দিন মুখে কিছু যায়নি। তবু স্বস্তি যে এদেশে আশ্রয় পেয়েছি’- বলছিলেন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার থাইংখালীর পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা আমিনা বেগম।

শনিবার দুপুরে কথা হয় তার সঙ্গে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা আরো কয়েক নারী।

আমিনা জানান, মিয়ানমারের বলিবাজারে তার বাড়ি। স্বামী নুরুল আমিনকে সেদেশের সেনারা জবাই করেছে। এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে তিনি জঙ্গলে পালিয়ে ছিলেন। দুই দিন পর শনিবার বাংলাদেশে ঢুকেছেন।

তিনি বলেন, ‘শুনেছিলাম বিজিবি, কোস্ট গার্ড রোহিঙ্গা ঢুকতে দিচ্ছে না। খুবই চিন্তা ছিলাম। কিন্তু আসার পর কেউ বাধা দেয়নি। এখন সমস্যা খাওয়া আর থাকা।’

আমিনার মতো হাজার হাজার রোহিঙ্গার কাছে এই মুহূর্তে ঈদের কোন মানে নেই। প্রাণ নিয়ে নাফ নদ পেরিয়ে আসতে পারাটাই তাদের কাছে বড় স্বস্তি।

হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ও উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর আহমদ জানান, প্রতিদিনই হাজার হাজার রোহিঙ্গা আসছে।শনিবারও উখিয়া-সীমান্ত দিয়ে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের দিন শনিবার নাফ নদের সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা আসছে। তাদের ঈদের দিনটা কাটছে বনে-জঙ্গলে। ঈদ নিয়ে এসব মানুষের কোন ভাবনা নেই। খুঁজছেন একটু আশ্রয়।

উখিয়া টেংখালী পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধ করিম আলী জানান, নতুন করে আসা রোহিঙ্গারা অনেকে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদায় আশ্রয় নিয়েছে।কিন্তু তিনি ওখানে জায়গা না পেয়ে পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অচেনা একব্যক্তি তাদের ঝুঁপড়ি তৈরি করতে বাঁশ ও একটি বড় পলিথিন দিয়েছেন। তাকে তিনি চেনেন না।করিম আলী জানান, পরিবারের সবাই না খেয়ে আছেন তিন দিন।

আয়েশা নামের এক রোহিঙ্গা নারীও বলেন একইভাবে আশ্রয় নেওয়ার কথা। তিনি তিন দিন মিয়ামারের পাহাড়ে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশে ঢোকার পর অচেনা এক লোক তাকে কলা-বিস্কুট দিয়েছেন। এরপর আর কোন খাবার মেলেনি।

উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) আলমগীল ফরহাদ বলেন, ‘পালংখালী পাহাড়ের ৫ কিলোমিটার এলাকায় লাখের মতো রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। এদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। অনেকে গ্রামে গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। এটা দেশের জন্য মঙ্গলকর হবে না।’ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের দ্রুত একখানে করার দাবি জানান তিনি।

অনুপ্রবেশকারী নুর বানু ও ইয়াছমিন আক্তার বলেন, ‘গত বছর ঈদে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছি। আর এবার নিজের ঘরবাড়ি আত্মীয় স্বজন ফেলে পালাতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা বলে আমাদের এ হাল।’

তারা জানান, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গাদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করছে। নিষ্পাপ শিশুদেরও রেহাই দিচ্ছে না।

এদিকে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয়ের খোঁজে আসা দিলু মিয়া বলেন, ‘মরতে মরতে প্রাণে বেচেঁ এপারে এসেছি। অল্পের জন্য পরিবারের ৮ জন বেচেঁ গেলাম’। তিনি বলেন, ‘সোমবার শিলখালী গ্রামে আগুন দেয় সেনারা। লোকজনের চিৎকার শুনে পরিবার নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যাই। এরপর জঙ্গলে হেলিকপ্টার দিয়ে আকাশ থেকে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন দেয়। সেখান থেকে পালিয়ে এপারে আসি।’

লেদা বস্তির রোহিঙ্গা নেতা আবদুল মতলব বলেন, ‘নতুন অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গারা আশ্রয়েরে জন্য ঘোরাঘুরি করছে। অনেকে জায়গা না পেয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।’

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে দেড় হাজার রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...