প্রকাশিত: ১৯/০৬/২০১৭ ১০:০০ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:০৩ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট ::
আমার মেয়েটা ঘরে থাকলে খালি বই নিয়ে বসে থাকতো। লেখাপড়া ছাড়া আর কিছুই বুঝত না। একটু ডাকলেই বলতো, ‘পড়ালেখা করে বড় হতে হবে এবং পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে। এখন কোনো কাজ নয়, পড়তে দাও।’ আগামী জেএসসি পরীক্ষায় মেয়েটা ভালো রেজাল্ট করার জন্য দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবে অথবা পুলিশে চাকুরী করে অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে, পরিবারের হাল ধরবে, দরিদ্র মা-বাবার অভাব-অনটন দূর করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন চাপা পড়ে গেল ধসে পড়া পাহাড়ের নীচে। চোখের জল মুছতে মুছতে সেই স্বপ্নধসের করুণ বর্ণনা দিচ্ছিলেন চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে পাহাড় ধসে নিহত ডলুপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ম্যে ম্যাও ক্যায়াংয়ের মা থাইংগ্যা উ ক্যায়াং।
থাইংগ্যা ক্যায়াং কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, ‘কোনো রোগ-ব্যাধিতে আমার একমাত্র মেয়েটা মারা গেলে মনকে বুঝাতে পারতাম। কিন্তু রমজানে স্কুল বন্ধ থাকার সুবাদে পাশের পাড়ায় তার বাবার ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েই পাহাড় চাপা পড়লো। থাইংগ্যা আরো বলেন, ‘দাদুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে সেদিন সেখানে রাত কাটানোটাই আমার মেয়েটার জন্য কাল হয়ে এসেছিল। সেদিন আমি তাকে নিষেধ করেছিলাম বেড়াতে না যেতে। কিন্তু সে কথা শোনেনি।’ স্কুল বন্ধ থাকার কারণেই অনেকটা জেদ করেই দাদুকে দেখতে গিয়ে সে ফিরে এলো লাশ হয়ে, বলতে বলতে ডুকরে কেঁদে উঠেন থাইংগ্যা ক্যায়াং।
গত ১৩ জুন ভোরে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পাহাড় ধসে উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের ছনবইন্যা এলাকার ক্যায়াং পাড়ায় তিন পরিবারের এক মহিলা ও এক কন্যা শিশুসহ তিনজন নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত হওয়া ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ম্যে ম্যাও ক্যায়াং ক্যেলাও অং ক্যায়াংয়ের একমাত্র কন্যা। এক কন্যা ও তিন ছেলের মধ্যে ম্যে ম্যাও সবার বড়। এখন বড় সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবারই যেন শোকে স্তব্ধ। ক্যেলাও অং ক্যায়াংয়ের স্ত্রী থাইংগ্যা উ ক্যায়াং জানান, ঘটনার পর থেকে তার স্বামী কন্যার শোকে পাগলপ্রায়। এ কয়দিনে তিনি একবেলাও ভাত খাননি এবং খাওয়ার সময় হলে শুধু মেয়ের কথা বলে কান্না করেন। সন্তানহারা এ মা জানান, তারাও অন্য সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন। এখন মেয়ে হারিয়ে নিজেরাও ভয় পাচ্ছেন কখন তারাও পাহাড় চাপা পড়েন।
গতকাল সকালে চন্দনাইশ থানা প্রাঙ্গণে চট্টগ্রামের ডিআইজি এস এম মনির উজ জামান কর্তৃক পাহাড় ধসে নিহতদের পরিবারে নগদ অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদকের সাথে নিহত ছাত্রীর মা থাইংগ্যা উ ক্যায়াংয়ের সাথে কথা হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার ভোরে পাহাড় ধসের ঘটনায় ধোপাছড়ির ক্যায়াং পাড়া এলাকার ১৩টি ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এসময় দুই শিশু ও দুই মহিলাসহ মোট চারজন মারা যান।
– আজাদী

পাঠকের মতামত

উপকূলের ম্যানগ্রোভে বিশ্বস্বীকৃতি—দ্য আর্থশট প্রাইজ জিতলো ফ্রেন্ডশিপ

বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ পুরস্কার ‘দি আর্থশট প্রাইজ ২০২৫’ জিতেছে বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। ...

রোহিঙ্গার হাতে এনআইডি : নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আসামি চসিকের কর্মচারীও

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) শুলকবহর ওয়ার্ড কার্যালয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন এবং পরবর্তীতে এটি ব্যবহার ...

রোহিঙ্গা সংকটে মানবপাচার রোধে একসঙ্গে কাজ করবে আইওএম ও এইচসিআই

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং কানাডার প্রাচীনতম মুসলিম ত্রাণ সংস্থা হিউম্যান কনসার্ন ইন্টারন্যাশনাল (এইচসিআই) ও ...

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ সম্পন্ন

উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ...

রোহিঙ্গা নারীকে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বরখাস্ত

এক রোহিঙ্গা নারীকে অবৈধভাবে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ...