প্রকাশিত: ৩০/০৮/২০১৭ ৮:০৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:২৩ পিএম

রফিক মাহমুদ,,সীমান্ত থেকে ফিরে::
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। নিরস্ত্র রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের গুলি করে সেনারা হত্যা করছে বলে দাবি করেছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। সেদেশের সেনারা রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তার। এ পর্যন্ত প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন। গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গা সালভ্যাশন আর্মি (আরসা) পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালানোর পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে সন্ত্রাসবাদের বিরোধী অভিযান ঘোষণা পর,মংডু, বুচিডং ও রাচিডং এলাকায় সেনাবাহিনীর এই অভিযান ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছে।

গতকাল মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ঘুমধুম জলপাইতলী জিরোপয়েন্ট গেলে সেখানে কথা হয় মংডুর ঢেকিবনিয়া, মিয়ার পাড়ার বাসিন্দা নুর বেগম (১৮) সাথে। নুর বেগমের কান্নায় সীমান্তের আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। দুই অবুঝ শিশুকে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি জানান, শুক্রবার সকালে সেনাবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। সরকারি বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) আমাদের গ্রামেই অন্তত ৭/৮ জনকে হত্যা করেছে। আমার স্বামী ওমর ফারুক(২১)কেও তারা আমার চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করেছে। আমাকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে তারা। কোন মতে দুই শিশু ৫ বছরের সুমাইয়া ও ১বছরের হালিমাকে কোলে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। ৪ দিন ধরে ভাত পানি খেতে পারিনি। এখানে খোলা আকাশের নিচে রয়েছি। আমার প্রিয় স্বামীকে তারা নির্যাতনের পরে কিভাবে হত্যা করেছে তা বলে বুঝাতে পারবনা। আমার স্বামী সেখানে দিন মজুরের কাজ করত। অথচ তারা সন্ত্রসী আখ্যা দিয়ে তাকে হত্যা করে। তিনি আরও বলেন, আজকে শুনেছি ১১টার দিকে বাড়িটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার বাড়ির উপর আগুনের ধোয়া ও লীলাশিখা দেখা গেছে। আমাদের গ্রাম ছাড়াও পাশের কয়েকটি গ্রামে একই ভাবে নির্যাতন ও হত্যা করেছে। সেখানে নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। পাশের বাড়ির এক নবজাতকেও তারা হত্যা করেছে শিশুটির মায়ের সামনে। এখন আমার দুই শিশু ছাড়া আর কেউ নেই পৃথিবীতে। নুর বেগমের প্রশ্ন কিভাবে বেঁচে থাকবে অবুঝ দুই শিশুকে নিয়ে? কোথায় পাবে মাথাগোজানোর জায়গা?

একই কথা বলেছেন, ঢেকিবনিয়া এলাকা থেকে পালিয়ে এসে জলপাইতলীতে আশ্রয় নেওয়া সনজিদা (১৭)। সনজিদা তার ভাই আব্দুল নবী (৩০)কে হারিয়ে এখন পাগলের মত চোখে মুখে আতংকের চাপ নিয়ে শুধু কান্না করছে। সনজিদার কোলে রয়েছে ৩মাসের এক শিশু। যদিও শিশুটি তার ভাই আব্দুল নবীর। তিনি জানান, তার ভাইকে সেনাবাহিনীরা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমাকেও বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে। আমার পিতা ইউসুফ আলী আগেই মারা গেছে। আমি মা, ভাবি ও ভাইয়ের ২ সন্তানকে নিয়ে প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে ৩দিন ধরে এখানে রয়েছি।

মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকা ঘুমধুম জলপাইতলী,উখিয়ার পালংখালীর রহমতেরবিল সহ এপার ও ওপারে খোলা আকাশের নিচে বাসিন্দা হওয়া অসংখ্য নুর বেগম এবং সনজিদারা রয়েছে। কেউ তাদের প্রিয় স্বামীকে হারিয়েছে, আবার কেউ হারিয়েছে প্রিয় সন্তান ও ভাইকে। সন্তান হারিয়েছে তার মা ও বাবাকে। তাদের আপন স্বজন, সহায় সম্বল,ঘর বাড়ি হারানোর আর্তনাদে পুরো সীমান্তের আকাশে কালো মেঘের ছায়া ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। এপারে বর্ডার গার্ড় বাংলাদেশ (বিজিবি)ও কড়া সর্তক অবস্থান আর ওপারে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও জান্তাবাহিনীর গুলির শব্দ। আকাশেও মাঝে মধ্যে হেলিকাপ্টাওে মহড়া। আতংক আর হতশাই এখন তাদের বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...