প্রকাশিত: ২৮/০৮/২০১৭ ১০:১৯ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ২:২৭ পিএম
মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোহিঙ্গা যুবক মোবারক

নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোহিঙ্গা যুবক মোবারক

বৃহস্পতিবার ২৪ আগস্ট,রাত তখন তিনটা।মিয়ানমারের নাচিদং এলাকায় একটি মাছের ঘেরে ঘুমাচ্ছিলেন ইলিয়াছসহ চার জন। হঠাৎ গুলির শব্দে জেগে ওঠেন ইলিয়াছ। বাইরে কী হচ্ছে, টর্চ লাইট মেরে তা দেখতে গেলেই গুলিবিদ্ধ হন তিনি। অন্য তিন জন কোনোমতে পালিয়ে বাঁচেন।

ওইদিন রাতে মিয়ানমারের মংডু এলাকার নাচিদং গ্রামে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানের সময় রোহিঙ্গা নাগরিকদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ওই এলাকার বাসিন্দাদের গুলি করে হত্যার অভিযোগ করেন ইলিয়াছের মামা হামিদ হোসেন। তার দাবি, ‘ওই রাতেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ইলিয়াছ গুলিবিদ্ধ হয়।’

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইলিয়াছসহ আরও চার জন মাছের ঘেরে ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে ঘের থেকে বের হয়ে টর্চ লাইট মারতে না মারতেই টর্চের আলো লক্ষ্য করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইলিয়াছ সেখানে পড়ে যায়। তার সঙ্গে থাকা অন্য তিন জন পেছন দিয়ে বের হয়ে কোনও মতে পালিয়ে বাঁচে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক ঘণ্টা ইলিয়াছ সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিল। পরে পালিয়ে যাওয়া ওই তিন জন ফিরে এসে তাকে উদ্ধার করে ভোর চারটার দিকে বাংলাদেশ সীমান্তের উলোবুনিয়া রাস্তার মাথায় নিয়ে আসে। পরে সেখান থেকে দালালের মাধ্যমে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকাল ৭টায় কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শনিবার গভীর রাতে তাকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়।’

কিভাবে সীমান্ত পার হলেন জানতে চাইলে হামিদ হোসেন বলেন, ‘সীমান্তের দুই পাড়ে কিছু লোক আছেন। তারা টাকার বিনিময়ে বর্ডার পার করে দেন। বিজিবি সদস্যদের টাকা দিলে তারাও মাঝে মধ্যে অনুমতি দেন। তবে রোহিঙ্গারা সরাসরি বিজিবি সদস্যদের টাকা দেয় না। যাদের সঙ্গে বিজিবি সদস্যদের ভালো সম্পর্ক আছে, তাদের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়।’

বর্ডার পার হতে কত টাকা খরচ করতে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা পার করে দিতে ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। ওই ব্যক্তিদের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয় (বাংলাদেশ) পাওয়া যায় বলে আমরা খুশি হয়েই তাদের (দালালদের) এই টাকা দেই।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় টাকা ছাড়াও তারা (দালালরা) আমাদের পার করে দেন।’

হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ইলিয়াছের মতো মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ আরও তিন জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। একই ওয়ার্ডের ৬৩ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন ইদ্রিস (১০) নামে এক শিশু। মংডু’র সাহেব বাজার এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর ছোড়া গুলি তার মাথার ডান পাশে বিদ্ধ হয় বলে দাবি করেন তার বাবা মো. রশিদ।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক ইদ্রিস চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি

মো. রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবার সকালে ঘরের সামনে বসে মোবাইল ফোনে খবর দেখছিলাম। আরও কয়েকজনসহ ইদ্রিস খেলছিল। তখন গোলাগুলির শব্দ শুনে দৌঁড়ে আসার সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি এসে তার মাথার ডান পাশে বিদ্ধ হয়।’

তিনি জানান, সকাল ৯টার দিকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই সীমান্ত অতিক্রম করে দুপুরে ইদ্রিসকে নিয়ে তিনি কুতুপালং পৌঁছেন। পরে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শনিবার রাতে তাদের চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে তিনি জানান।

কিভাবে সীমানা পার হলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ ছেলেকে নিয়ে বিজিবি’র কাছে কান্নাকাটি করলে তারা আসার অনুমতি দেন।’

একই ওয়ার্ডের ৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছে মোবারক (১২) নামে আরেক শিশু। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি তার গলার সামনে দিয়ে প্রবেশ করে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।

রবিবার রাতে ওই ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে চার রোহিঙ্গা নাগরিক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ইলিয়াছ ও মোবারকের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। ইলিয়াছের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তার মাথায় অপারেশন করা লাগতে পারে। তবে অবস্থার অবনতি না হলে হয়তো অপারেশন ছাড়াই ভালো হতে পারে।’

মোবারকের বিষয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘তার গলাভেদ করে গুলি বের হয়ে গেছে। তার স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লেগেছে। পা দু’টি অবশ হয়ে আছে।’ তবে ইদ্রিস ও জিয়াবুল নামে অন্য দু’জনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা হামিদের হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিজিবি সদস্যরা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে সাহায্য করে কিনা তা জানতে যোগাযোগ করা কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খানের সঙ্গে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, বিজিবির কোনও সদস্য এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। এমনকি মিয়ানমার সীমান্তে দালাল চক্রের অস্তিত্বের কোনও তথ্যও তার জানা নেই। তবে যদি এরকম কোনও দালাল চক্র সেখানে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিজিবি ব্যবস্থা নেবে।

পাঠকের মতামত

শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে পোস্ট, এসিল্যান্ড প্রত্যাহার

শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিরাজুম মুনিরা ...

আলোচিত স্কুলছাত্রী টেকনাফের তাসফিয়া হত্যা: এবার তদন্ত করবে পুলিশ

চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের ...