![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/2016/09/1474634709.jpg)
উখিয়া নিউজ ডটকম::
পহেলা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসব। চাই পান্তা ইলিশ। জেলাব্যাপি ইলিশের বাজারে বৈশাখের হাওয়া লেগেছে। তাই দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ইলিশের দামও ততই চড়ছে। আর এটাকে ঘিরে জেলার বাজারগুলোতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। পহেলা বৈশাখের চাহিদাকে পুঁজি করে মায়ানমারের বড় বার্মিজ ইলিশ এনে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে হিমাগারে সংরক্ষিত মাছ। তাও আবার আকাশছোঁয়া দামে, যা গ্রাহকদের গলা কাটা হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। অবশ্য ইতিমধ্যেই ইলিশ চলে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার অনেক বাইরে।
এদিকে দেশের স্বার্থে এবং ইলিশ রক্ষায় পহেলা বৈশাখে ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করার পরামর্শ সুধীজনদের। তাদের মতে, ইলিশের সঙ্গে বাংলা নববর্ষের কোনো যোগসূত্র নেই। তবু সংস্কৃতির ধুয়া তুলে শহরের মানুষ অনেকটা ঘটা করে পান্তার সঙ্গে ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ গড়ে তুলেছে। এ ছাড়া পহেলা বৈশাখে ইলিশ খেতে নিরুৎসাহিত করতে চলছে প্রচারণাও।
ইলিশ ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছের চাহিদা অনেক বেশি। ওজন ভেদে ইলিশের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুন। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ওমান ও বার্মার ইলিশকে পদ্মার ইলিশ বলে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করছেন । এতে ক্রেতাসহ সাধারণ ব্যবসায়ীরা প্রতারিত হচ্ছে।
বর্তমানে দেশি ইলিশ বেশি একটা বড় হয় না। এজন্য যারা বড় ইলিশ চান, তারা বার্মিজ ইলিশই কিনে নিয়ে যান। কিন্তু দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ ইলিশের স্বাদ কম এবং দামও বেশি।
দেশি এবং বার্মিজ ইলিশ দেখে সহজে চেনা না গেলেও ভালোভাবে পরখ করে দেখলে ব্যবধান বোঝা যায়। দেশি ইলিশের আঁশ হয় বড় আর বার্মিজ ইলিশের আঁশ হয় ছোট ছোট।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন বলেন, বাজারে দিন দিন বড় দেশি ইলিশের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ৫০০-৬০০ গ্রামের বেশি ওজনের দেশি ইলিশ পাওয়াই মুশকিল। তাই অনুষ্ঠান হলে বার্মিজ ইলিশই তাদের একমাত্র ভরসা।
তবে তিনি এটাও বলছেন, এই বার্মিজ ইলিশ দেশি ইলিশের চেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
খুচরা মাছ ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, এখন বাজারে যেসব মাছ আছে তার বেশির ভাগই বার্মিজ। এগুলো কয়েক মাস আগে থেকে সে দেশে কোল্ডস্টোরেজে রাখা ছিল। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের বার্মিজ ইলিশ নিয়ে আসছেন। তবে দেশি ইলিশও বাজারে রয়েছে বলে জানান তিনি।
পাইকারি মাছ বিক্রেতা হাশেম বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ হাজার কেজির অধিক বার্মিজ ইলিশ আমদানি করা হচ্ছে। কারণ, আমাদের দেশে বর্তমানে ৭/৮শ’ গ্রামের বড় ইলিশ নেই। বড় ইলিশের চাহিদা মেটাতে তাই আমাদেরকে মায়ানমার থেকে মাছ আমদানি করতে হয়’।
তবে সঠিক প্রক্রিয়ায় দেশে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে কি-না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের ইলিশ বিষয়ক গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, দেশে বড় ইলিশ না থাকায় বার্মিজ ইলিশ আমদানি হচ্ছে বেশি। তবে দেশি ইলিশের চেয়ে বার্মিজ মাছে পুষ্টি কম রয়েছে এবং স্বাদও কম।
ইলিশে রয়েছে অ্যাসেনসিয়াল ফ্যাটি এসিড। এটি মস্তিষ্কের বুদ্ধি বিকাশে খুবই উপকারী। হার্টের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, প্রজননতন্ত্র গঠন ও বিকাশে সাহায্য করে। এটি ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে মৃত্যুর ঝুঁকিও কমায়।
ড. আনিসুর রহমান আরো বলেন, মায়ানমার থেকে যে মাছগুলো আমদানি করা হচ্ছে, সেগুলো মান নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও কাস্টমসের সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সঠিক পরীক্ষা ছাড়া যদি ফরমালিনযুক্ত মাছ আমদানি করা হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই বার্মিজ ইলিশ আমদানির ক্ষেত্রে সঠিক তদারকির প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
পাঠকের মতামত