প্রকাশিত: ২৯/১০/২০১৭ ৮:০৯ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৪৩ এএম

 

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

এশিয়ার সব দেশে সব জনগোষ্ঠিরই মানুষ বেড়েছে। কিন্তু মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বেলায় ঘটেছে উল্টোটা। গত চার দশকে দেশটির রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মানুষের সংখ্যা বাড়ার বদলে কমেছে। নিপীড়ন নির্যাতন, রোগব্যাধি ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যু, দেশ থেকে দলে দলে বিতাড়ন ও জাতিগত নির্মূল অভিযানই এই জনহ্রাসের কারণ।

১৯৭০ সালেই রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যা ছিল ৪০ লাখ। এখন তাদের সংখ্যা সারাবিশ্বে ৪০ লাখের অনেক কম। এমনটাই দাবি করলেন মিয়ানমার থেকে পলিয়ে আসা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষিত, বিত্তবান ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা যুবক।

কতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচনা হচ্ছিল তাদের সঙ্গে। এদের অনেকের পরিবার এখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের শহরাঞ্চলে বাস করে। সেনাকর্তাদের মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে এখনো কোনো রকমে টিকে আছেন এরা। প্রায়শই এদের কারো কারোর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়, কুশল বিনিময় হয় তাদের। এছাড়া ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়।

এমন এক রোহিঙ্গার ধনাঢ্য মামা রাখাইন রাজ্য থেকে মোবাইল ফোনে কল করে তাদের জানিয়েছেন তার সর্বশেষ হাল হকিকত।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারে যাওয়ার পরেও অনেক বিষয়ে একমত হতে পারেনি তার মিয়ানমার প্রতিপক্ষ।

প্রত্যাবাসন কবে হবে, কীভাবে পালিয়ে আসাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ও ভরসা পাওয়ার মতো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বা নিজেদের অবস্থান খোলাসা করেনি মিয়ানমার পক্ষ।

অনেক রোহিঙ্গা যারা এখনও বাংলাদেশে আসেনি এবং বাংলাদেশে যারা এসেছে তাদের সকলকে এক কাতারে চিন্তা করেই মিয়ানমার সরকার যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করতে চায়। এখনও রাখাইনে যারা মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে, তাদেরও সম্ভবত বাংলাদেশে চলেই আসতে হবে যাচাই-বাছাইকালে নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য। এরকমই ঘোরপ্যাঁচ আর ছলচাতুরির ধোঁয়াশা তৈরি করে রেখেছে মিয়ানমার।

মিয়ানমারে যেসব রোহিঙ্গা আছে তাদের আইডিপি ক্যাম্পে(অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ) ঢুকতে হবে। বাঙ্গালি নামেই কার্ড নেওয়ার জন্য তাদের চাপ দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। এই কার্ডকে এনভিসি বা ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড বলা হয়। অর্থাৎ এই চাতুরির মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাঙ্গালি তথা বাংলাদেশি বলে প্রমাণ করবার অপচেষ্টা তাদের।

মিয়ানমারের অনেক রোহিঙ্গা আবার বাধ্য হয়ে বা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রয়োজনে এরই মধ্যে বাঙ্গালি পরিচয়ে কার্ড গ্রহণও করেছে। মিয়ানমারের অন্যসব জনগোষ্ঠির নাগরিকদের মতো রোহিঙ্গাদের কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্বীকৃত নাগরিক অধিকার নেই। ফলে তারা অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিতে বাধ্য হচ্ছে। তারা বাঙ্গালি বলে এনভিসি ভেরিফিকেশন কার্ড নিয়ে থাকে।

এই যুবকরা জানান, গত চার দশকের বেশি সময় ধরে তাদের চিন্তা ভাবনা আড়ষ্ঠ, মানবাধিকারকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। নাগরিক অধিকার ও জাতীয় পরিচয় থেকে তাদের বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। শিক্ষালাভের বা চাকুরি লাভের এমনকি সর্বজনীন চিকিৎসা লাভের অধিকার কোনোটাই নেই তাদের। নিজ দেশেই দেশহীন তারা।

এসব অধিকারহীন কোনঠাসা অবস্থাতেও বাঁচতে দেয়া হচ্ছে না তাদের। দশকের পর দশক ধরে অত্যাচার নির্যাতন ও দমন পীড়নের শিকার হয়ে বহু রোহিঙ্গা মারা গেছে ও যাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের জন্মহার যেমন বেশি, মৃত্যুহারও বেশি। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার অধিকার স্বীকৃত না হওয়ায় এদের শিশুরা নানা রোগব্যাধির শিকার, পুষ্টিহীনতার শিকার হয়ে অকালে মারা যায়। রোহিঙ্গাদের মাতৃমৃত্যুর হারও অনেক বেশি। নানা সংক্রামক রোগের শিকার হলেও রাষ্ট্র তাদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসে না আলাপচারিতায় জানালেন এই রোহিঙ্গা যুবকরা।

তারা বলেন, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী প্রায়শই রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হানা দেয়, লুটপাট করে

এবং হত্যাকাণ্ড চালায়। দশকের পর দশক ধরে চলছে এসব। জাতিগত নির্মূল অভিযান (এথনিক ক্লিনজিং) চলছে দশকের পর দশক ধরে। অথচ বিশ্ববাসীর কাছে এই খবর ততোটা পৌঁছায়নি এতোদিন। রোহিঙ্গারা দিনের পর দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে থাকায় দেশটিতে তাদের সংখ্যা আর বাড়ছে না। বরং দিনকে দিন কমছে। যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে যেতে পেরেছে বা পারছে তারা নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে করে।

তারা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে মিয়ানমারে একদিন হয়তো কোনো রোহিঙ্গা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রোহিঙ্গা যুবকদের একজন বলেন, ১৯৭০ সালেই রোহিঙ্গাদের মোট সংখ্যা ছিল ৪০ লাখ। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দেওয়া হয় যে তাদের জন্ম হার খুব বেশি।এটা ঠিক হলেও তাদের মৃত্যুহার যে অবিশ্বাস্য রকমের বেশি তা কিন্তু কেউ বলে না। এখন গোটা বিশ্বে ৪০ লাখ রোহিঙ্গাও নেই।

তার ভাষায়, মিয়ানমারে এখন মাত্র ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গা টিকে আছে। গত সাড়ে চার দশকে বাকি সব রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করা হয়েছে বা বিভিন্নভাবে হত্যা ও গুম করা হয়েছে। প্রাকৃতিক নিয়মে এ অঞ্চলে অন্যসব জাতিগোষ্ঠির মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও রোহিঙ্গাদের সংখ্যা কেবল কমেই চলেছে।

নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে তারা।

রোহিঙ্গাদের সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা না হলে, বিতাড়ন না করা হলে তাদের সংখ্যা আসলেই বাড়ত। সুত্র: বাংলানিউজ

 

পাঠকের মতামত

দুই রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে ভৈরবে এসে আটক

জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলেন দুজন রোহিঙ্গা। ...

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...