প্রকাশিত: ২৬/০২/২০১৭ ১০:৩৭ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি যেন মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছে। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে কোন অবস্থাতেই থামছেনা মৃত্যুর মিছিল। শুধুমাত্র গত ২৫ দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই সড়কের চকরিয়া অংশের ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় বেশ কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় শিশু, নারীসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শিশু, নারীসহ অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি। তন্মধ্যে তিনটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হয় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে আসা পর্যটকবাহী দুটি মাইক্রোবাস ও একটি নোয়াহ গাড়ি। এই তিনটি দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছে বেশি।
প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল শুরু হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি ও বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তাদের বেশিরভাগই এসব দুর্ঘটনার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত উপস্থাপন করেছেন। বেশিরভাগই দাবি করেছেন, গত ২৫ দিনে এই মহাসড়কের চকরিয়া অংশে যেসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, তম্মধ্যে বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই পতিত হয়েছে পর্যটকবাহী গাড়িগুলো। এসব পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে আসার জন্য ব্যবহার করেছেন নোয়াহ, মাইক্রোবাসের মতো একেবারে ছোট গাড়িগুলো। তাছাড়া যেখানে দূরপাল্লার বাসগুলোও মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত হয় সেখানে এত ছোট গাড়িগুলো একেবারেই নিরাপদ ছিল না সুদূর ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রায়।
মহাসড়কের চকরিয়া থানা ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার, আবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দূরত্ব আরো ১৬০ কিলোমিটার। সবমিলিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দূরত্ব দাঁড়ায় ৪২০ কিলোমিটারে। কিন্তু এতদূর পথ পাড়ি দিতে গিয়ে যেখানে দূরপাল্লার বাসগুলোও প্রতিনিয়ত নিয়ন্ত্রণ হারায়, সেখানে এতদূর যাত্রায় একেবারে ছোট গাড়ি বিশেষ করে নোয়াহ, মাইক্রোবাসের মতো গাড়ি ব্যবহার করার কারণে বার বার দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পর্যটকেরা। তার উপর যোগ হয়েছে মহাসড়কে লবণ পরিবহনের সময় গলে পড়া পানিও। এক্ষেত্রে পর্যটকদের উচিত হবে সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাত্রায় এত ছোট গাড়ি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। তা না হলে এই মৃত্যুর মিছিল থামবে না।’
সার্জেন্ট নিজাম উদ্দিন আরো বলেন, ‘প্রথমতো ছোট গাড়ি চেপে এসব পর্যটক ঢাকা থেকে কক্সবাজার বেড়াতে আসছেন। এই অবস্থায় পর্যটকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই সতর্কতাকে গুরুত্ব না দিয়ে উম্মাদনা, গান-বাজনা, হৈ-হুল্লার মধ্য দিয়ে পথ চলতে থাকে তারা। আর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এই মহাসড়কে গাড়ির চলাচল তেমন না থাকায় চালকও সেই উম্মাদনায় মিশে গিয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। দ্রুতগতিতে চলমান থাকাবস্থায় পথিমধ্যে কোন কারণে হালকা ব্রেক কষলেও লবণ পানিতে সড়ক পিচ্ছিল থাকায় তা ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনের একটি এসি বাসের চালক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘পরিবহন জগতে যেমন দক্ষ, সৎ এবং ভালমানের চালক-হেলপার রয়েছেন, তেমনিভাবে অসৎ, নেশাগ্রস্ত এবং অদক্ষ চালকেরও অভাব নেই। তাদের কাছে জীবনের কোন মায়া নেই বললেই চলে। এ কারণে তারা এই মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। তাই বার বার দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে অকালেই প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সরাসরি ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৪২০ কিলোমিটার যাত্রায় ভালমানের দূরপাল্লার বাসগুলো মোটামুটি নিরাপদ। এর বাইরে অন্য কোন পন্থায় এই যাত্রা বেশি বেদনাদায়ক। কেননা একেবারে ছোট গাড়িগুলো নিয়ে এতদূর পথ পাড়ি দেওয়ার মানে হচ্ছে প্রাণপ্রদীপকে হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলা করা। তাছাড়া ব্যস্ততম এই মহাসড়ক সম্পর্কে চালকদের সঠিক ধারণা না থাকা, বিপজ্জনক বাঁক ছাড়াও লবণ পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় আরো বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠে নোয়াহ, মাইক্রোবাসের মতো ছোট গাড়িগুলো।’
নিরাপদ সড়ক চাই চকরিয়ার সভাপতি মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া অংশের ৩৬ কিলোমিটারজুড়েই বেশি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে গত ২৫ দিনে। আমাদেরও এসব দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে কেন্দ্রে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। অচিরেই এই প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানে কয়েকটা বিষয় আমরা স্পষ্ট করে তুলে ধরব। তন্মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থান পাবে সরাসরি ঢাকা বা উত্তরবঙ্গ থেকে কোন অবস্থাতেই যাতে ছোট যানগুলো ব্যবহার করে পর্যটক হিসেবে কক্সবাজার বেড়াতে আসা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেওয়া। প্রয়োজনে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এই বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে। শুধুমাত্র একটি বিষয় বাস্তবায়ন হলেই দুর্ঘটনায় পর্যটকবাহী গাড়িগুলো আর পতিত হবে না।
মহাসড়কের বানিয়ারছড়াস্থ চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আবুল হাসেম মজুমদার ও মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ মো. সেলিম মিয়া বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী আর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী দূরপাল্লার বাসগুলো মহাসড়কের চকরিয়া অংশে ঢোকার আগমুহূর্ত থেকে অসম প্রতিযোগিতায় থাকে কার আগে কে তাড়াতাড়ি চকরিয়া পৌঁছে যাত্রী বাগিয়ে নেবে। এই অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে গিয়েও একেবারে ছোট যানগুলো বড় বাসের খপ্পড়ে পড়ে।
চকরিয়ার কয়েকজন সচেতন ব্যক্তির অভিযোগ, ‘মূলত মহাসড়কটির নিরাপত্তা বিধানের জন্য হাইওয়ে পুলিশকে নিয়োজিত করেছে সরকার। কিন্তু চকরিয়া অংশের ৩৬ কিলোমিটারের মহাসড়ক পাহারা দেওয়ার জন্য দুটি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না। তবে হাইওয়ে পুলিশে জনবল এবং পরিবহন সংকটও একটি বড় সমস্যা জানিয়ে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু সুদৃষ্টি দিলেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
– সুত্র, আজাদী

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...

খাদ্য সংকটে সেন্টমার্টিন

হেলাল উদ্দিন সাগর :: বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ...