প্রকাশিত: ০৩/০৩/২০১৭ ৯:৪৪ পিএম

উখিয়া নিউজ ডটকম::

মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ও উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির ও বস্তিতে বসবাস করা এবং গ্রাামে-গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা ওমরা ভিসায় সৌদি আরব পাড়ি জমাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিগত সময় রোহিঙ্গা নাগরিকরা কৌশলে বিভিন্ন এলাকার ভূয়া ঠিকানা দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় বাংলাদেশী পার্সপোর্ট সংগ্রহ করে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর সময় কমপক্ষে শতাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক আটকের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারী চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল পাসপোর্ট সহ ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এর আগেও চট্রগাম আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক আটকের ঘটনা ঘটেছে। এরপরও বেশীর ভাগ রোহিঙ্গা ওমরা ভিসায় পাড়ি জমাচ্ছে সৌদি আরব। বিদেশে গিয়ে এসব রোহিঙ্গারা চুরি, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার ফলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের উপর এর নীতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে জনশক্তি রপ্তানি ও বিদেশে কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস সৌদি আরবে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন ও জনশক্তি রপ্তানী আশাতীত হ্রাস পেয়েছে। এতে প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণ ও কমে যাচ্ছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে । উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবির ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরের রেজিঃ ও আন-রেজিঃ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে সে দেশের লোকজনদের কাছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বৈধ-অবৈধ রোহিঙ্গারা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বাধার সম্মূখিন হচ্ছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন ও শিক্ষার পর্যাপ্ত মসজিদ ও মাদ্রাসা নেই মর্মে সৌদি আরব সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের কাছে মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপনের নামে মোটা অংকের চাঁদা বানিজ্য করছে মর্মে এখানকার শরণার্থীরা জানান। রোহিঙ্গা বস্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক জানান, কিছু রোহিঙ্গা বিদেশে থাকা তাদের আত্বীয়স্বজনদের সহায়তায় সৌদি আবর যাচ্ছে একথা ঠিক। তবে তা সংখ্যায় সামান্য।

ক্যাম্প সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের উগ্রপন্থি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন বা আরএসও সহ বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থি রোহিঙ্গা সংগঠনের নেতারা এখনো বাংলাদেশে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে। এসব সংগঠন দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঢাকার ফকিরা পুল, পুরানা পল্টন, চট্টগ্রাম, নয়া পল্টন সহ সিলেটের জিন্দা বাজারস্থ কিছু রিক্রুটিং এন্ড ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে ওমরা হজ্বের নামে সৌদি আরব পাচার করে দিচ্ছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কৌশলের আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভূঁয়া নাম, ঠিকানা দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সংশি¬ষ্ট পাসপোর্ট কর্মকর্তা ও থানাকে ম্যানেজ করে পাসপোর্ট বানিয়ে রোহিঙ্গাদের পাচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার ঠিকানা ব্যবহার না করার পেছনে জানা গেছে, এজেন্সি ও দালালরা এ দুই জেলায় সংশি¬ষ্ট পুলিশ ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও পাসপোর্ট অফিসগুলো রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও তৎপর বিধায় ঢাকা সহ অন্যান্য জেলায় এতসব ঝামেলায় পড়তে হয় না।এছাড়াও কোন এজেন্সি যদি অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে ১৫ জন রোহিঙ্গাও বিদেশে পাঠাতে পারে এবং তারা যদি ফেরত নাও আসে তাতে ক্ষতি নেই। কেননা বাংলাদেশ থেকে প্রেরিত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ফিরতি এয়ার টিকেট ওই সব দালাল ও এজেন্সির লোকেরা সংগ্রহ করে ফেলে। এসব পাসপোর্টে ছবি পাল্টিয়ে পূর্বে থেকে সৌদি আরবে অবস্থানকারী (অবৈধ ভাবে) বাংলাদেশী বা রোহিঙ্গাদের নিকট মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এয়ার টিকেট সহ বিক্রি করে থাকে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সৌদি আরব গমনের ব্যাপারে শরণার্থী ফজল করিম, আজিজুল হক, আবদুর রহমানসহ অনেকে বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দাতা দেশের সহাতায় প্রায় ১৩শ জনের মত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ থেকে ৩য় দেশে বা আমেরিকা, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যন্ড সহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে পুর্নবাসন করেছে। এসব পুর্ণবাসিত রোহিঙ্গাদের প্রেরিত অর্থে তাদের নিকট আতœীয়রা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে হজ্ব ও ওমরা হজ্বের নামে সৌদি আরব পাচার হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া রোহিঙ্গাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থে চট্রগ্রাম,কক্সব্রবাজার শহর সহ বন বিভাগের রক্ষিত বনভূমি ও উপকুলের চরাঞ্চলের খাস জমির দখল কিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছে। অন্যদিকে বিদেশে অবস্থান করলেও এখানে শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের প্রদত্ত যাবতীয় সুযোগ সুবিধা তাদের পরিবারের অন্যান্যরা ভোগ করছে বলে একাধিক রোহিঙ্গা জানান।

এ ব্যাপারে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ সামসুদ্দোজা উখিয়া নিউজ ডটকমকে বলেন, তালিকাভুক্ত শরণার্থীরা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে সৌদি আরব গমন সম্পর্কে আমার জানা নেই।

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর বিদ্রোহীদের দখলে

মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা দেশটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নিয়েছে। মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী তা’আং ...

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতির দাবি

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার ও দূরপাল্লার ট্রেন পটিয়া স্টেশনে যাত্রা বিরতিসহ বিভিন্ন দাবিতে রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ...