![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/2017/02/Screenshot_7-1.jpg)
মির্জা মেহেদী তমাল, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে ফিরে ::
উখিয়া থেকে টেকনাফের সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এই ৫০ কিলোমিটার পথের অন্তত ২০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে শুধু সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। কাকভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা একভাবেই সারিবদ্ধভাবে ঠায় বসে থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই তাদের সামনে হঠাৎ কোনো জিপ থামে। দ্রুতগতিতে কে বা কারা তাদের মাথা পিছু ৫০০ কখনো এক হাজার টাকার নোট দিয়েই লাপাত্তা। টাকা বিতরণকারীদের কারও মুখে দাড়ি, কারও ক্লিন সেভ।
উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে গত মাসে রাতের আঁধারে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মাঝে নগদ টাকা বিতরণ করেছেন কয়েকজন বিদেশি। মধ্যরাতে আলখেল্লা পরা এই বিদেশি সাহায্যকারীরা পাকিস্তান ও তুরস্কের বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এভাবে মধ্যরাতে রোহিঙ্গা শিবিরে টাকা বিতরণের শুধু ঘটনাই নয়, অচেনা লোকজনেরও আনাগোনা বেড়ে গেছে শিবিরগুলোতে। স্থানীয়রা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রবেশ করতে গেলে বাধা দেওয়া হলেও এসব অপরিচিত লোকজন ঢুকে পড়ছে অনায়াসেই। এতেকরে একদিকে আতঙ্ক যেমন বাড়ছে, তেমনি রাতের আঁধারে টাকা বিতরণকারীদের পরিচয় নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সদ্য অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টার্গেট করে নতুন করে তৎপর হয়েছে ইত্তেহাদুল জামিয়া নামে একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা পুরুষ শরণার্থীদের নিয়ে বস্তির ভিতরে বৈঠক করেছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে।
গত ২৪ জানুয়ারি থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে টেকনাফ-উখিয়ার শামলাপুর, হোয়াইক্যং, উনছিপ্রাং, কুতুপালং, নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির, লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে, বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন ভিন্ন তৎপরতার আশঙ্কাজনক তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে জানা যায়, গত অক্টোবরের শেষের দিকে এমন করে টাকা বিতরণ করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে জঙ্গি তৎপরতার আশঙ্কা করছে।
টাকা দিয়েই গাড়ি নিয়ে লাপাত্তা
উখিয়া থেকে টেকনাফ সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে বসে থাকতে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের। এভাবে কেন এই বসে থাকা? এমন প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের জবাব ছিল, ভিক্ষার জন্য তারা বসে থাকে। একপর্যায়ে সত্যটা বেরিয়ে এলো দাতাদের মুখ থেকে। তারা বলেন, প্রতিদিনই গাড়িতে করে এসে দুই ব্যক্তি তাদের টাকা দিয়ে যান। তারা মধ্যরাতেই আসেন বেশি। কখনো কাকভোরে। কোনোদিন আবার দিনের বেলাও। ঠিক কখন আসবে—এই তথ্য তাদের জানানো হয় না বলে ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাদের বসে থাকতে হয়। টাকা নিয়ে নিজ নিজ ডেরায় ফিরে যায়।
মধ্যরাতে বিদেশি
শিবিরের মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষকরা এসব ত্রাণ বিতরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও গভীর রাতে আলখেল্লা পরা বহিরাগত লোকজনকে দেখা যায় ওই কাজে। ওই বহিরাগত লোকজন দেখতে বিদেশিদের মতো। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে রাতের আঁধারে নগদ টাকা বিতরণকারীরা পাকিস্তানি ও তুর্কি বলে সন্দেহ অনেকের।
কুতুপালং অনিবন্ধিত শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা (রোহিঙ্গা মাঝি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই বিদেশিরা রাতের কোনো একসময় চুপি চুপি শিবিরে ঢোকে। শিবিরের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকের সঙ্গে বিদেশিদের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় চলছে গোপনে ত্রাণ বিতরণের কাজ। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসনও এ ব্যাপারে অনেকটা না দেখার কৌশল নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের নতুন শিবিরে অচেনা আগন্তুকদের ত্রাণ বিতরণের প্রেক্ষাপটে লেদা অনিবন্ধিত শিবিরের প্রবেশপথে দিল মোহাম্মদের বাড়িতে অভিযান চালায় বিজিবি। ওই সময় জব্দ করা হয় প্রায় ৪০০ কেজি চাল ও ৩৫টি কম্বল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৌদি আরবের জেদ্দা কিলোআরবাতাস এলাকায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ আবদুর রহিম ২০০ রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য নগদ টাকা, কম্বল ও ২০ কেজি করে চালের ব্যবস্থা করেন। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্নভাবে অর্থ ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে, এমন সংবাদ আমাদের নজরে আসছে। পুলিশ কৌশলে এদের কার্যক্রম মনিটর করছে। যে কোনো মুহূর্তে ওই সব স্থানে অভিযানেরও পরিকল্পনা আছে। ’
ইত্তেহাদুল জামিয়া তৎপর
উখিয়া-টেকনাফে নতুন রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে পরতা শুরু করেছে জঙ্গি সংগঠন ইত্তেহাদুল জামিয়াতুল ইসলাম। সম্প্রতি এ সংগঠনের সভাপতি হাফেজ সালাউল ইসলামসহ চারজন সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শামলাপুরে গোপন বৈঠক করার সময় বিজিবির হাতে আটক হন। সংগঠনের সভাপতি গ্রেফতারের পর রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সংগঠনটির অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, কুতুপালং ও নয়াপাড়া ক্যাম্পে এই সংগঠনের নামে বেশ কয়েকটি মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিক্তিক কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়নে। সুত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন
পাঠকের মতামত