
আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম::
বিমানবন্দরের স্ক্যানার ফাঁকি দিতে পশুর চামড়া দিয়ে সেলাই করে তৈরি করা হয় বিশেষ রকমের প্যাকেট। সেই প্যাকেটে ইয়াবা ঢুকিয়ে করা হয় প্যাকেটজাত। বিমানবন্দর কাস্টমসের চোখ ফাঁকি দিতে ওই প্যাকেট আন্তর্জাতিক একটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিমানে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এভাবে চার মাসে চারটি ইয়াবার চালান যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে একটি চক্র। প্রথম তিনটি চালান ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কাছে নিরাপদে পৌঁছালেও চতুর্থ চালানটি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর কাস্টমসের হাতে ধরা পড়ে। চট্টগ্রামেও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় চক্রের এক সদস্য। তদন্তে নেমে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচার চক্রের ছয় সদস্যের একটি সিন্ডিকেটের হদিস পায় পিবিআই।
তাই ইয়াবা পাচার চক্রের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তিন সদস্যকে ধরতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। প্রশাসনিক অনুমতির জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজির কাছে করেছেন আবেদনও।
ইয়াবা চোরাচালান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর ইন্সপেক্টর সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘নগরীর খুলশী থানার একটি ইয়াবা মামলার তদন্তে নেমে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাচার চক্রের সন্ধান পাই। চক্রের ছয় সদস্যের একটি দলের নাম আসে সামনে। দেশে তিনজনকে শনাক্ত করে সম্প্রতি চার্জশিট দাখিল করেছি আদালতে। আর যুক্তরাষ্ট্রে যারা ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। তাই যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।’ খবর সমকালের
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকা থেকে ইয়াবাসহ এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলার তদন্তে নামে পিবিআই। তখন দেশে ও বিদেশে অবস্থান করা ছয় আসামিকে শনাক্ত করেন তারা। এদের মধ্যে ইয়াবা মামলার তদন্ত শেষ করে আন্তর্জাতিক ইয়াবা মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত নোয়াখালীর সুধারাম থানার পশ্চিম এওজবালিয়া গ্রামের মো. ফারুক ওরফে ফারুক সওদাগর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের সরখাল হাজি বাড়ির জালাল উদ্দিন, টেকনাফের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম ওরফে মঞ্জুরকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল দেয় পিবিআই।
এ মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলেও নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. হাফিজকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে এ ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মো. হাফিজ, নাজমুল রুশো ও মো. আশরাফকে শনাক্ত করে পিবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় পলাতক আসামিদের তথ্য সংগ্রহ, আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও মামলা-সংশ্নিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমনে আদালতের অনুমতি চান তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সন্তোষ চাকমা। শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। এরপর ১৮ আগস্ট বাংলাদেশে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পিবিআই। ৬ অক্টোবর চার্জশিটটি যাচাই-বাছাই করে আদালতে জমা দেয় কোর্ট পুলিশের প্রসিকিউশন শাখা। এরপর ইয়াবা পাচারে নাম আসা অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে তদন্ত কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মামলাটি তদন্ত করতে চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি আবেদন করেন। চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ
করেছেন- মামলাটির তদন্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (ক্রাইম-ইস্ট) বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি পেলে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হলে, আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হবে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত ফারুক কুরিয়ারে যুক্তরাষ্ট্রে ইয়াবা পাঠানোর পর তার মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠাত হাফিজ। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিন লিবার্টি এভিনিউ থেকে সফটওয়্যারভিত্তিক দুটি মানি ট্রান্সফার সংস্থার মাধ্যমে ডলার পাঠাত। মানি সেন্ডের স্লিপের ছবি তুলে তার কপি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফারুকের মোবাইলে পাঠাত। এরপর ফারুক ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ঢাকার মোহাম্মদপুর শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করত। প্রতিটি চালানে দুই হাজার ইয়াবা পাঠানো হতো যুক্তরাষ্ট্রে। বিনিময়ে মোহাম্মদ ফারুকের প্রতি মাসে আয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। আর জালাল উদ্দিন প্রতিটি চালান পাঠিয়ে পেত পাঁচ হাজার টাকা। পুলিশ ফারুক ও জালালকে গ্রেফতার করলেও চক্রের অপর সদস্য টেকনাফের মঞ্জুরুল আলম ওরফে মঞ্জুরকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পাঠকের মতামত