প্রকাশিত: ১৯/১২/২০১৬ ৩:০১ পিএম

পূর্বপশ্চিমবিডি:

অসন্তোষে আগুনে আস্থার জল ঢালার চেষ্টা করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। থানা পুলিশের দেওয়া মামলার তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পাবলিক প্রসিকিউট (পিপি) ও মামলার বাদি সন্তুষ্ট না হওয়ায় পুলিশের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের উপর না-রাজি আবেদন দিলে মামলা তদন্তের নির্দেশনা পিবিআইকে দিচ্ছেন আদালত। পিবিআই চট্টগ্রামে কার্যক্রম শুরুর পর প্রায় ৮ শতাধিক মামলার তদন্ত সম্পন্ন করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে জনগণের পুরোপুরি আস্থা তৈরি করতে পিবিআইকে আরো সমৃদ্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, পিবিআই নিজ উদ্যেগে কিছু মামলা তদন্ত করে। এ তদন্তকে ছায়া তদন্ত বলা হয়। আবার পুলিশ হেডকোয়াটার্স এর নির্দেশে কিছু মামলা তদন্তের নির্দেশনা পায় পিবিআই। আবার আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশের তদন্ত সম্পন্ন হওয়া মামলায় অসন্তোষ দেখিয়ে আদালত থেকে কিছু মামলা তদন্তের নির্দেশনা পায় পিবিআই।

পিবিআইয়ের মামলা তদন্তের সফলতা উল্লেখ করতে গিয়ে বনজ কুমার মজুমদার আরো জানান, পিবিআইয়ের কাজই শুধু মামলার তদন্ত করা। এ সংস্থার সদস্যরা শুধু তদন্তের পিছনেই সময় ব্যয় করে। তাছাড়া ১৪ প্রকার তালিকার মামলা পিবিআই চাইলে তদন্তের অনুমতি পায়। আর এ সংস্থার সফলতার পিছনে তদন্ত কর্মকর্তাদের একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে কাজ শুরু করে পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) আদলে এ ইউনিটটি গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় গত বছরের এপ্রিলে ইউনিটটির কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। গত এক বছরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে ইউনিটে যুক্ত হয়েছেন ১২ জন। এসেছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও গাড়ি। এরপর গত ৩১ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। চট্টগ্রামে পিবিআইয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাড়াও ৬ জন পরিদর্শক এবং ৫ জন উপ-পরিদর্শক আছেন বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, দেশে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর মামলায় অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার বিষয়টি মাথায় রেখে ২০১১ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নামে একটি পৃথক তদন্ত ইউনিট গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তদন্তাধীন মামলার জট কমাতে মূলত প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই এ ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

তবে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাদেও অভিমত, তাদের মূল কাজ মামলা তদন্ত হলেও এক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় আলামত সংকট। তাই তদন্তের স্বার্থে কোনো ঘটনার পরপর যাতে কেউ আলামত নষ্ট না করে, সেজন্য জনসচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলছেন সংস্থার কেউ কেউ।

এদিকে থানা পুলিশের প্রস্তুতকৃত মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের উপর বাদীর নারাজি আবেদনের সংখ্যা বাড়ছেই। মহানগর পাবলিক প্রসিউকিউটর এডভোকেট মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে এরকম প্রায় অর্ধশত মামলা পুনরায় তদন্তের আবেদন জানিয়ে আদালতে আমিও আবেদন জানিয়েছি। এর মধ্যে কিছু মামলা গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি আবার কিছু মামলা পিআইবিকে তদন্তের র নিদের্শ দিয়েছেন আদালত। তবে তদন্তে আস্থার জায়গাটা পিবিআই বলে জানান তিনি।

জানা যায়, চট্টগ্রামে নগর পুলিশের দোষে এক রিক্সাচালক জেল খাটছে আড়াই বছর ধরে। খুলশী ও গোয়েন্দা পুলিশের কারসাজির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রামে ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ জোড়া খুনের ঘটনায় দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর পর এজাহারভুক্ত আসামিকে পিবিআই কর্মকর্তা গ্রেফতার করেছে। অথচ, এই জোড়া খুনের মামলায় আড়াই বছর ধরে জেল খাটছে রিক্সাচালক নুরুল আলম প্রকাশ ভুট্টো। পুলিশের কারসাজিতে এই রিক্সাচালকের জীবনের আড়াই বছর কারাগারে।

এদিকে পুলিশের দোষেই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল এই রিক্সাচালককে শোন এরেস্ট দেখিয়ে আসামিকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাহবা নিয়েছে থানা পুলিশ। কিছুদিন আগে দুই খুনের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি রাসেল প্রকাশ ভুট্টোকে গ্রেফতার করে পিবিআই পুলিশ।

কারণ এর আগে গত ১৪ মে এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তে পিবিআই আদালত থেকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ পায়। ২০১৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে খুলশী থানার এসআই রাসেল মিয়া। তবে এই অভিযোগপত্রে নারাজি দিয়েছিল বাদি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই মামলাটি খুলশী থানার আওতায় থাকলেও ডিবি পুলিশ প্রত্যেকটি আসামি ধরতেই সহযোগিতা করেছে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, সাইনবোর্ডধারী নেতা বশিরকে বাঁচানোর জন্যই এ কারসাজি।

সূত্রে আরো জানা যায়, কাট্টলীর বেঁড়িবাধ থেকে উদ্ধার করা লাশ শনাক্ত করতে না পারা কিংবা সহিংসতার মামলা থেকে আসামিদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ছাড়াও পিবিআইতে আরো বেশকিছু চাঞ্চল্যকর মামলা পুনরায় তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। এরমধ্যে কিছু মামলায় বাদি নারাজি দিয়েছেন, কিছু মামলায় সরকারি কৌঁসুলি, আবার কিছু মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার ওপর আদালত অসন্তুষ্ট হয়ে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরমধ্যে রয়েছে ২০১৩ সালের ২৪ জুন সিআরবি সাত রাস্তার মাথায় সংঘটিত জোড়াখুন, ২০১২ সালের বন্দর থানার ঈশান মিস্ত্রি হাটের পূর্ব পাশে কর্ণফুলী নদীর সংযুক্ত খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাতনামা পুরুষের মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধার, ২০১৩ সালে কালুরঘাট মোহরায় কাভার্ডভ্যান থেকে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস পণ্য আত্মসাৎ, ২০১৫ সালে বাকলিয়া তুলাতলির বাসা থেকে এসআই অমিত চন্দদেরদের নামে ইস্যুকৃত সরকারি পিস্তল চুরি, হালিশহর শ্যামলী আবাসিক এলাকার সার্জেন্টের বাসা থেকে সরকারি পিস্তল চুরি, নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের ভেতরে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, শাহ আমানত বিমান বন্দরের কার্গো হাউজের অফিস থেকে টাকা চুরি, পতেঙ্গা বাহির সিগন্যাল থেকে নাবিকের লাশ উদ্ধারসহ একাধিক হত্যা ও নারী নির্যাতন মামলা পিবিআইকে পুনরায় তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

জানা গেছে, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটে জনবল মাত্র ২৩ জনএ ইউনিটে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আছেন ছয়জন পরিদর্শক ও ছয়জন উপপরিদর্শক। সে হিসেবে একজন কর্মকর্তা গড়ে ২০টি চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্ত করছেন। তদন্ত কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আছেন চার সহকারী উপপরিদর্শক ও ছয় কনস্টেবল। পুরো ইউনিটটির দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। প্রতি মাসে প্রায় ৩০টি চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্ত শেষ করেছে পিবিআই। তবে কিছুদিনের মধ্যেই পিবিআই চট্টগ্রামে লোকবল নিয়োগ দেয়া সম্পন্ন হবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

পিবিআই চট্টগ্রাম সূত্রে জানা গেছে, খুন, ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, চোরাচালান ও কালোবাজারি, মানব পাচার, সাইবার ক্রাইম, ধর্ষণ, অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যসংক্রান্তসহ ১৫ ধরনের মামলা তদন্ত করতে পারে পিবিআই।

পিবিআই কর্মকর্তারা আরো জানান, চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলোর রহস্য উদঘাটনে প্রথমে মাঠে নামে থানা পুলিশ। কিন্তু আলোচিত অনেক মামলার কূল-কিনারা খুঁজে পান না তারা। এরপর এসব মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আদালত এসব প্রতিবেদনকে ত্রুটিযুক্ত উল্লেখ করে গ্রহণ করেন না। আদালতের নির্দেশে এ ধরনের জটিল মামলাগুলোর তদন্ত করছে পিবিআই। এরই মধ্যে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর মামলার তদন্তে সাফল্য পেয়েছে পিবিআই।

পিবিআই সূত্রে আরো জানা যায়, ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকায় মা-ছেলে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ মামলাটি তদন্ত করেন ডবলমুরিং থানার পাঁচজন উপপরিদর্শক। তদন্ত চলাকালে গ্রেফতার হওয়া আসামি মোক্তারের স্বীকারোক্তিতে ঘটনায় জড়িত ১৪ জনের নাম পায় পুলিশ। এর মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। বাকি তিনজনের ঠিকানা পাওয়া না যাওয়ায় তাদের অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত ভার পায় সিআইডি। তদন্তে ওই তিনজনের ঠিকানা উদঘাটন করতে না পেরে দীর্ঘ ৪ বছর পর ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর সিআইডির পরিদর্শক হোছাইন খান একই আসামিদের নামে ফের অভিযোগপত্র জমা দেন।

এরপর আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পেয়ে মাঠে নামেন পিবিআই। তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সূত্রের খবরে ৮ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকা থেকে রুবেল, ইসমাইল ও রোকেশ নামে তিন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পিবিআইয়ের দল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন।

সূত্রে আরো জানা যায়, প্রযুক্তিগতভাবে পিবিআই সমৃদ্ধ। প্রতিটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার ছায়া তদন্ত করে থাকে পিবিআই। ২০এপ্রিল বোয়ালখালীতে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উদঘাটনে পিবিআই কাজ করে। এমনকি নিহতের স্বামী পলাতক অসীমের অবস্থান শনাক্ত করে দিয়ে তাকে গ্রেফতারে ভূমিকা রাখে পিবিআই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য জানান, একজন থানা পুলিশের পরিদর্শককে মামলার তদন্তসহ নানা কাজ সম্পন্ন করতে হয়। নগরীর নিরাপত্তা বজায় রাখাও সবচেয়ে বড় একটি কাজ। এক্ষেত্রে পিবিআই স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়ে মামলার তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই আস্থার জায়গা আরো শক্তিশালী করতে পিবিআইকে আরো সমৃদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে ইতিবাচক মিয়ানমার

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সুই। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিমসটেক ...

সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির আভাস

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী সপ্তাহজুড়ে সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই সঙ্গে সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টির ...