প্রকাশিত: ১৫/০২/২০২০ ৯:৫৭ এএম
ফাইল ছবি

শফিক আজাদ, উখিয়া ::

ফাইল ছবি

যুবকরা যাচ্ছে উন্নত জীবনের স্বপ্ন নিয়ে, যুবতি মেয়েরা যাচ্ছে বিবাহের আশায়। আর কেউ কেউ যাচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের কাছে। এভাবে প্রতিনিয়ত ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন ভাবে বেরিয়ে সাগরপথে পাড়ি জমাচ্ছে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। এদের অনেকে গন্তব্যে পৌছতে সক্ষম হলেও অনেকের সলিল সমাধি হয়ে সাগরে। সরজমিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের ও ভিকটিমের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার মানব পাচারের পুরোনো রুট হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সহস্রাধিক বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। অনেকে আবার পথেই খাদ্য ও পানির অভাবে মারা যায়। ওই বছরেই থাইল্যান্ডে গণকবর আবিস্কৃত হয়। এর পর মানব পাচার রোধে কিছুদিন ব্যাপক তৎপর ছিল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে কিছুদিন কার্যত বন্ধ ছিল মানব পাচার। স¤প্রতি মানব পাচারকারীরা বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত ১১ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবে অন্তত ১৫ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। এর আগে ২০ জানুয়ারি রাতে টেকনাফের বাহারছড়া উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর সময় ২৩ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছরের ২৪ নভেম্বর মহেশখালীর মগচর থেকে আরও ২৫ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে পুলিশ। ১৫ নভেম্বর উখিয়ার সোনারপাড়া উপকূল থেকে ১১ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন তরুণী। ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতে পাচার করার সময় চুয়াডাঙ্গা থেকে দুই রোহিঙ্গা নারীকে আটক করে পুলিশ। ২৭ জানুয়ারি ঢাকার আফতাবনগরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ১৩ রোহিঙ্গা নারীকে উদ্ধার করে র‌্যাব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। চাকরি দেওয়ার নামে যুবকদের মূলত মালয়েশিয়ায় নিয়ে ‘বিক্রিথ করে দিচ্ছে তারা। এছাড়া যুবতি মেয়েদের বিয়ের প্রলোভনে নিয়ে গেলেও তাদেরকে অনেককে বিভিন্ন হোটেলে-মোটেলে বিক্রি করে দিয়ে থাকে।
টেকনাফ সেন্টমার্টিন অদূরে নৌকা ডুবি থেকে উদ্ধার হওয়া কুতুপালং ৭নং ক্যাম্পের নজুমা বেগম (১৭), তার পিতা মারা গেছে মিয়ানমারে। সে খালুর বাসায় আশ্রয় নিয়ে বড় হয়েছে। সে জানায়, মোঃ রফিক নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসি ছেলের সাথে মোবাইলে সম্পর্ক হয় গত ২ বছর ধরে। সেই থেকে প্রতিনিয়ত ফোনে কথা হত। তার কথার উপর ভিত্তি করে, তাকে বিয়ে করার জন্য ক্যাম্প থেকে বের হয়ে হয়ে নৌকা করে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। কোস্টগার্ড কর্তৃক উদ্ধার হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে স্বস্ব ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি)’র জিম্মায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উদ্ধার হওয়ায় উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোঃ জুবাইর (৩০) জানান, তাদেরকে ক্যাম্প থেকে বের করে নিয়ে আসেন টেকনাফ। বাহারছড়া নোয়াখালী পাহাড়ার সৈয়দ আলমও নুরুল আলম নামের দুই দালাল। তাদের টেকনাফ জুমপাড়া পাহাড়ে ৫দিন রাখেন। পরে ১১ফেব্রুয়ারী একটি ট্রলারে ১৩৮জনকে তুলে দেয়। মঙ্গলবার ভোরে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় ৪৩জন জীবিত, আর ১৫জন মৃত উদ্ধার হলেও বাকীদের এখনো খোঁজ নেই। তারা কম খরচে স্বপ্নের মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন বলে এ প্রতিবেদককে জানায়।
ক্যাম্প-৭ এর হেড মাঝি মোঃ সাদেক বলেন, প্রতিনিয়ত ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোহিঙ্গারা বের হয়। এদের অনেকে ফিরে আসলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা নানান স্থানে পাড়ি দিচ্ছে। এদের বেশির ভাগ রোহিঙ্গা যুবতি নারীরা। তারা বিভিন্ন দেশে বিয়ে প্রলোভনে পড়ে এ ঝুঁকি নিচ্ছে সে জানায়। এই হেড মাঝি আরো বলেন, পালিয়ে যাওয়ার রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে সক্ষম হলেও অনেকের মারা গেছে সাগরে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ক্যাম্পের বøক মাঝি,ক্যাম্প প্রশাসনের কতা-ব্যক্তি এবং রোহিঙ্গা ও স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা মানবপাচারের সাথে জড়িত। এখানে কেউ প্রকাশ্যে আবার কেউ আন্ডারগ্রাউন্ডে জড়িত থাকে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়ে থাকে ভিকটিম। মাঝখানে লাভ হয় দালালেরা।

সচেতন মহল মনে করেন, ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা কৌশলে যাতে বের হতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনকে আরো আন্তরিকতার সহিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কথায় আছে ‘রক্ষক যদি ভক্ষক হন’ তাহলে যত চেষ্টা করেও তা রোধ করা সম্ভব হবেনা।
মানবপাচারের বিষয়ে কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসাইন জানান, মানবপাচারসহ যেকোন ধরনের অপরাধমূ¬ক কর্মকান্ড বন্ধে পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি মানবপাচার প্রতিরোধে ক্যাম্প ভিত্তিক এনজিও,আইএনজি মাধ্যমে বিভিন্ন সভা-সেমিনার, নাটক, ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ চলছে। এরপরেও কিছু দালালচক্র রোহিঙ্গাদের কৌশলে ক্যাম্প বের করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে এ ধরনের কিছু দালালদের চিহ্নিত করেছি। আর কিছু দালালকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি।
তিনি বলেন, শুধু ক্যাম্পে নয়, পুরো জেলায় মানবপাচার প্রতিরোধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

পুলিশ থেকে বাঁচতে জীবনটাই দিলেন সিএনজিচালক

গ্রামের চন্দনাইশে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ...

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চলন্ত সিএনজিতে সিলিন্ডার বি’স্ফোরণ, চালক নিহত

চট্টগ্রাম – কক্সবাজার সড়কে চন্দনাইশ এলাকায় চলন্ত সিএনজি অটোরিকশার সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুনে দগ্ধ হয়ে ...