প্রকাশিত: ০৯/১২/২০১৭ ৮:২৬ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৯:৫৬ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটা বড় অংশই নারী ও শিশু। এই নারীদের একটা বড় অংশ আবার বিধবা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন অনেকের স্বামী। সরেজমিনে বাংলাদেশের একটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রয়টার্সের দামির সাগোজি। সেখানে গিয়ে ২৩০ জনেরও বেশি নারীকে অঝোরে কাঁদতে দেখেন তিনি। পাহাড়সম বেদনা নিয়ে ক্রন্দনরত এই নারীদের কেউ স্বামী হারিয়েছেন। কেউবা হারিয়েছেন নিজের জন্মদাতা বাবাকে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ ২৫ হাজার। এই লাখ লাখ মানুষের মধ্যে এমন ভাগ্যবিড়ম্বিত নারীদের সংখ্যা খুব কম নয়।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার পর পাঁচ সন্তানকে নিয়ে হেঁটে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন রোহিঙ্গা নারী রশিদ জান। এ যাত্রায় তার সময় লেগেছে ১০ দিন। নিজের মৃত স্বামীর কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এ নারী।
জঙ্গি আখ্যা দিয়ে গ্রামের আরও চার পুরুষসহ রশিদ জানের স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়। শেষ পর্যন্ত তার স্বামীর পরিণত কি হয়েছে সেটা জানা নেই এই নারীর।
১৯ বছরের রোহিঙ্গা নারী আয়েশা বেগম। বার্মিজ সেনারা তার স্বামীকে হত্যার পর অন্যদের সঙ্গে পালিয়ে তিনিও বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন।
আয়েশা বেগম জানান, তার স্বামীকে তুলে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। পরে তিনি রাস্তার পাশে স্বামীর তিন খণ্ড লাশ দেখতে পান। সেখানে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকেন এই নারী।
পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ১৩ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশু আদিজা। সেদিন আদিজা চিৎকার করে উঠে এবং পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে। কিন্তু মুখোশধারী কিছু পুরুষের হাত তার কাপড় ছিড়ে ফেলে। চিৎকার করে ক্ষমা চাইতে থাকে আদিজা, কাকুতি-মিনতি জানায় ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু ১৩ বছর বয়সী ওই মেয়ে রেহাই পায়নি। বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এর কিছুক্ষণ আগেই চোখের সামনে নিজের বাবা-মাকে গুলিতে মারা যেতে দেখে সে।
রাখাইনে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে একটি কাঠের টেবিলের নিচে লুকিয়ে ছিল তারা। বাবা-মা’র মৃত্যুর পর জঙ্গলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ধরা পড়ে যায় এক সেনাসদস্যের হাতে। আদিজার ভাষায়, ‘আমি অসহ্য ব্যাথা পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার শুধু একটা বিষয়ই মনে হচ্ছিলো। আমি আর পবিত্র নেই। আমার আর কখনও বিয়ে হবে না।’
কক্সবাজারের এই শরণার্থী শিবিরের অন্তত ৫০টি তাঁবুতে কোনও পুরুষ মানুষ নেই। এগুলো মূলত এতিম ও বিধবা নারীদের আবাস।
এ বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের ৫১ শতাংশই ভয়ঙ্কর মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষায় নিয়োজিত জাতিসংঘের স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অনেক রোহিঙ্গা নারী তাদের কাছে সেনাসদস্যদের হাতে ধর্ষিত হওয়ার বিভৎস অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে আটজনের সঙ্গে কথা বলে রয়টার্স এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক প্রধান জেন লিবি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতার পর থেকে ৮০০টিরও বেশি যৌন সহিংসতার ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
বিভৎসতার শিকার এই নারীরা নিজেদের বাড়িঘর হারিয়েছেন, স্বামী হারিয়েছেন। তাদের নিজেদের কোনও দেশ নেই। মানচিত্রহীন এই মানুষগুলো এখন বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।
পাঁচ সন্তানকে নিয়ে একটি কক্ষে থাকেন রোহিঙ্গা নারী রিহানা বেগম। সেখানে কিছু ধর্মীয় বই ও জামাকাপড় আছে। মেঝেতে হালকা মাদুর বিছিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই কষ্টের দিনে কোনও ত্রাণ হারাতে চান না এই নারী। মেয়েকে নিয়ে হয়তো চিকিৎসকের কাছে গেলেন! কিন্তু এই সময়ে কেউ ত্রাণ সেটা হয়তো জুটবে না তার। অথচ এই সামান্য ত্রাণই তার কাছে অনেক কিছু।

পাঠকের মতামত

ইউএনওর ‘স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ’, পদ হারালেন জামায়াত নেতা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা মডেল কলেজে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং উপজেলা জামায়াতের ...

জামিন নামঞ্জুর,ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

চট্টগ্রামের একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ...

বিসিআরসি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড- ২০২৫ এ ভূষিত হলেন পুলিশ সুপার মো: নাইমুল হক পিপিএম

পর্যটন খাতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ নাইমুল হক পিপিএম ময়মনসিংহ ...

সাজেদা বেগমকে গর্জনিয়া ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পন

শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি:: গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ...