
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে এক ভিডিও কনফারেন্সে সুস্থ-সবল দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন তার এক আইনজীবী। বুধবার নিজের আইনজীবীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় তাকে সুস্থ দেখা যায়।
গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির হাজার হাজার মানুষ প্রায় প্রতিদিন জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। এই বিক্ষোভে সামরিক বাহিনীর সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটেছে। সেনাবাহিনীর ক্রমবর্ধমান বলপ্রয়োগের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এমনকি কয়েক সপ্তাহের সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমারে নিযুক্ত দূতাবাসের অপ্রয়োজনীয় কর্মীদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজধানী নেইপিদোতে গৃহবন্দি অং সান সু চি তার আইনজীবীদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশটির জান্তা সরকার সু চির এই আবেদনে সাড়া দেয়নি। এর ফলে বুধবার পুলিশের উপস্থিতিতে আইনজীবীদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে অং সান সু চি আলোচনা করেছেন বলে তার আইনজীবী মিন মিন সোয়ে টেলিফোনে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
৭৫ বছর বয়সী অং সান সু চিকে ‘মা’ হিসেবে উল্লেখ করে মিন মিন সোয়ে বলেন, ‘আমায়কে (মিয়ানমারের স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ ‘মা’) সুস্থ দেখা গেছে। তার ত্বকের সমস্যাও ভালো হয়েছে।’ ভিডিও কনফারেন্সে অভ্যুত্থানের পর সু চির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর আনা অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির অনেক নেতাকর্মীকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সামরিক বাহিনী। মিয়ানমারের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে সরকারি আইন লঙ্ঘন করে ছয়টি ওয়াকিটকি আমদানি এবং ব্যবহার, করোনাভাইরাস-বিধি লঙ্ঘন করে জনসমাবেশসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি দু’টি সংবাদ সম্মেলনে অং সান সু চির বিরুদ্ধে ঘুষগ্রহণের অভিযোগ করেছে সামরিক বাহিনী। তার আইনজীবীরা বলেছেন, এসব অভিযোগ বানোয়াট। সু চির বিরুদ্ধে আনা ঘুষের অভিযোগকে তামাশা বলে মন্তব্য করেন তারা। আগামী বৃহস্পতিবার মামলার পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া মিয়ানমারের জান্তা সরকার বলছে, গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি করেছে সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি। কিন্তু দেশটির নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য কয়েক দশকের চড়াই-উৎড়াইয়ের পর সামরিক শাসন আবারও ফিরে আসায় দেশটিতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) বলছে, মিয়ানমারে গণতন্ত্রকামীদের বিক্ষোভে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৫২১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ১৪১ জনই মারা গেছেন গত শনিবার; যা মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হওয়ার পর একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু।
এদিকে, দেশটির সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে সশস্ত্র জাতিগত বিদ্রোহীগোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষও ছড়িয়ে পড়েছে। সহিংসতায় পালিয়ে যাওয়া হাজার হাজার শরণার্থী প্রতিবেশি দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এএপিপি বলছে, মঙ্গলবারও দেশটির বিভিন্ন শহরে নেমে আসা হাজার হাজার মানুষের ওপর চড়াও হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৮ জনের প্রাণ গেছে।
সূত্র: রয়টার্স।
পাঠকের মতামত