
হুমায়ুন কবির জুশান::
পাঁচ মাস আগেও বন্ধুদের সঙ্গে হেসে-খেলে বিদ্যালয়ে যেত শিশু তানিম (১২)। পড়াশোনায় আগ্রহও ছিল তার। পাঁচজনের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে বই-খাতা ফেলে কাজে নামতে হয়েছে তাকে। এখন সে চার চাকার টেম্পো চালকের সহকারী। টেম্পোর পিছনে দাঁড়িয়ে থাইংখালী, বালুখালী,কুতুপালং ও উখিয়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ আরাকান রুটে কাটে তার দিনের ৮-১০ ঘন্টা। শুধু তানিম নয়, তার মতো আরও অনেক শিশু এখন উখিয়ায় পরিবহন খাতে কাজ করছে। এদের মধ্যে আবার রোহিঙ্গা শিশুও রয়েছে। এই শিশুদের সবাইকে দিনে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা শ্রম দিতে হয়। তাদের অর্ধেকই নিজের কাজের ঝুঁিক সম্পর্কে কিছু জানে না। দেখা গেছে টেম্পো গাড়িতে কর্মরত শিশুরাই বেশি কাজ করছে। টেম্পোতে শিশুদের মূল কাজ চালককে সহায়তা করা ও যাত্রী ওঠানো –নামানো এবং ভাড়া আদায় করা। তবে অনেক সময় চালক না থাকলে গাড়ির ষ্ঠিয়ারিংয়েও হাত দিতে হয় তাদের। দিনে ৮০ থেকে ১০০ টাকা আয় তাদের। ২০১৩ সালে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩৮ ধরনের কাজকে শিশুদের জন্য ঝুকিঁপূর্ণ ঘোষণা করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন এমন এক যাত্রী করিম বলেন, উখিয়া উপজেলায় যেসব টেম্পো ও টমটম চলাচল করে এগুলোর বেশির ভাগই পুরানো। অভিজ্ঞ চালকেরা এসব টেম্পো চালাতে চান না। তাই কখনো কখনো চালকের অভাবে সহকারীর হাতে ষ্ঠিয়ারিং তুলে দিচ্ছেন মালিকেরা। প্রশাসন ও মালিক-শ্রমিক সবাই বসে এ বিষয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। দেখা গেছে এসব শিশুর জীবনে বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। এদের অন্তত ৪৫ শতাংশ শিশু কাজ ছেড়ে পড়াশোনা করতে চায়। সামাজিক সেচ্ছাসেবি সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, উখিয়াতে কত জন শিশু পরিবহন ও চায়ের দোকানে কাজ করছে, সে তথ্য কারও জানা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টেম্পো ও টমটমের মালিক বলেন, অনেকেই শিশুদের এই কাজে নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে এই খাতে শিশুদের নিয়োগ বন্ধ করা যাচ্ছে না।
হুমায়ুন কবির জুশান,
উখিয়া কক্সবাজার।
০১৮১৯৫১৬০২০।
পাঠকের মতামত