

মনখালীর পাহাড়ি ছরায় ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার জনপ্রিয় মেম্বারের মরদেহ, এলাকায় চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
কক্সবাজারের উখিয়ায় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঘটে গেছে তিনটি নির্মম হত্যাকাণ্ড—প্রথমে ডাকাত দলের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন এক গৃহকর্তা, এরপর মাদকাসক্ত পিতার হাতে নিহত হয়েছে চার বছরের শিশু কন্যা, আর সর্বশেষ বস্তাবন্দি মরদেহ হয়ে উদ্ধার হলেন জনপ্রিয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন দূর্জয় ওরফে কামাল মেম্বার। এই ধারাবাহিক ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী পাহাড়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছরায় ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত কামাল মেম্বার (৪০) ছিলেন জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। তার স্বজনদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, সোমবার (৭ জুলাই) রাতে তিনি নিখোঁজ হন। পরিবারের সদস্যরা সারারাত খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাননি। মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয়রা মনখালী পাহাড়ি ছরায় বস্তাবন্দি লাশটি দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। পুলিশ আড়াইটার দিকে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানা পুলিশ ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের ভাষ্য, কামাল মেম্বার একজন মানবিক, সরলপ্রাণ এবং জনপ্রিয় জন-প্রতিনিধি ছিলেন। ইউনিয়নে চলমান নানা অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী ও সোচ্চার। তার নির্মম হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত কি না—এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই ইউনিয়নে মাত্র কয়েকদিন আগে নিদানিয়া এলাকার নুরার ডেইলে সশস্ত্র ডাকাতির সময় গুলিতে নিহত হন গৃহকর্তা নুরুল আমিন। এর রেশ কাটতে না কাটতেই মনখালী কোনারপাড়ায় এক মাদকাসক্ত পিতা লোহার রড দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন নিজের ৪ বছরের ফুটফুটে কন্যা কানিজ ফাতেমা জ্যোতিকে। এলাকাবাসী বলছেন, আমরা মনে করেছিলাম আগের ঘটনাগুলোই ভয়ংকর। কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির মরদেহ যদি বস্তায় ভরে ছরায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আর কার নিরাপত্তা আশা করতে পারি? স্থানীয় প্রবীণ মো. ইউসুফ বলেন, সামাজিক, পারিবারিক ও প্রশাসনিক—তিন স্তরেই ভেঙে পড়েছে নিরাপত্তার দেয়াল। এই হত্যাকাণ্ডগুলো কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির নয়, পুরো ইউনিয়নের জন্য অশনি সংকেত। তবে এ ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এলাকায় ডাকাতি, হত্যা, মাদকাসক্তি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হলেও এখনো কোনো শক্ত অবস্থান বা গৃহীত পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না উখিয়া থানা পুলিশের। একের পর এক প্রাণ ঝরে পড়ছে, কিন্তু নেই কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধ। নিহত ইউপি সদস্য কামাল হোসেন দূর্জয় একজন উদ্যমী তরুণ নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজে তিনি ছিলেন অগ্রণী ভূমিকার অধিকারী। তার মৃত্যুতে এলাকাবাসী শোকাহত ও ক্ষুব্ধ। এই মুহূর্তে প্রয়োজন দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত। এলাকাবাসী দাবি করেছেন, এই তিনটি হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদ্ঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি পুরো ইউনিয়নে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
অন্যথায়, উখিয়াকে আবারও সন্ত্রাস ও মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে সময় লাগবে না বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। গত ২৩ জুন : সশস্ত্র ডাকাতির সময় গুলিতে নিহত গৃহকর্তা নুরুল আমিন। ৫ জুলাই : মাদকাসক্ত পিতার হাতে খুন ৪ বছরের শিশু কন্যা কানিজ ফাতেমা জ্যোতি। ৮ জুলাই : নিখোঁজের একদিন পর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার ইউপি সদস্য কামাল হোসেন দূর্জয়ের। এইসব ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে—এমনটাই বলছেন সচেতন মহল।
পাঠকের মতামত