
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে প্রশাসন ও স্হানীয় অধিবাসীদের সংঘটিত ঘটনায় ৩টি মামলায় এক হাজার ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সর্বশেষ অভিযানের পঞ্চম দিনে সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে অপর ২টি মামলায় ৬৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের পোর্ট অফিসার মো. আব্দুল ওয়াকিল বাদী হয়ে দায়ের করা মামলাটি নথিভুক্ত করা হয় বলে জানান, কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান।
তিনি জানান, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির উদ্দিন (৪৩)। এ ছাড়া মামলায় রাজনৈতিক নেতা, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকেও আসামি করা হয়েছে।
ইলিয়াস খান আরও জানান, বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের পঞ্চম দিন শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নুনিয়ারছড়া ও নতুন বাহারছড়ার অংশে কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা ছিল বিআইডব্লিউটিএসহ প্রশাসনের।
এর জন্য বুলডোজার নিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার চেষ্টাও করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা এগিয়ে গেলেও যেতে পারেননি বেশি দূর।
এর আগেই সকালে শহরের প্রধান সড়কের পাশাপাশি বিমানবন্দর সড়কে নেমে আসে শত শত স্থানীয় জনতা। শুরু করে বিক্ষোভ, ৪ রাস্তার মোড়ে দেয়া হয় ব্যারিকেড, জ্বালিয়ে দেয়া হয় টায়ার। গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর সড়কে ঠেলাগাড়ি ফেলে তৈরি করা হয় প্রতিবন্ধকতা।
এ সময় বুলডোজার ভাঙচুরের পাশাপাশি উচ্ছেদ অভিযানে থাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কর্মীদের বাধাদান ও হামলার চেষ্টা করা হয়।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং উচ্ছেদ অভিযানে বাধাদানের ঘটনায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।
পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযানের তৃতীয় দিন প্রতিবন্ধকতায় কার্যক্রম পণ্ড হলেও এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটারের বাঁকখালী নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে।
গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে এক হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে।
সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ প্রভাবশালী।
বিআইডব্লিউটিএ ’র সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএকে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
পাঠকের মতামত