ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৪/০১/২০২৩ ৮:২৬ এএম , আপডেট: ২৪/০১/২০২৩ ৮:২৭ এএম

পাহাড়ের পর নব্য জঙ্গি সংগঠনের ‘সামরিক শাখার প্রধান ও বোমা বিশেষজ্ঞের’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মাঝে। আত্মগোপন নাকি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ক্যাম্পে জঙ্গিদের অবস্থান তা এখনো নিশ্চিত করে পারেনি র্যা ব। র্যােবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলছেন, নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন তারা। আর ক্যাম্পের ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে তার জন্য কার্যকরি তৎপরতা বজায় রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়ার দাবি নিরাপত্তা বিশ্লেষকের।

নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে ৫৫ জনসহ অনেককে প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যা ব মাঠে নেমে শনাক্ত করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার অবস্থান। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) ভোরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তার অবস্থান শনাক্তের পর র্যা্বের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যায় রনবীর এবং তার সহযোগী বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার। পরে পিছু নিয়ে গহীন পাহাড়ে গোলাগুলির পর অস্ত্র, গোলাবারুদ ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার করা হয় তাদেরকে। তবে, আত্মগোপন নাকি সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া, তা নিশ্চিত করতে পারেনি র্যানব।
এব্যাপারে র্যাকবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মূলত নব্য জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাশেকুর রহমান ওরফে রনবীর দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ করছিল। অর্থ সংগ্রহ করছিল। এটিও একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে, ক্যাম্পে তার সদস্য সংগ্রহ করা বা আত্মগোপনে থাকার আমরা সন্দেহ করছি এজন্যই সে ক্যাম্পে আসতে পারে। আমরা যেহেতু তাকে মাত্র গ্রেফতার করেছি, আমরা হয়তো জিজ্ঞাসাবাদে আরো বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবো।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির রয়েছে। যার অবস্থান পাহাড়ের পাশেই। তাই ক্যাম্পে শীর্ষ জঙ্গিদের অবস্থান নেয়াকে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়সহ জনপ্রতিনিধিদের।

উখিয়ার কুতুপালংস্থ রাজাপালং ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ ক্যাম্ েকাজ করছে। আজকে নতুন একটা বিষয় দেখলাম সেটি হচ্ছে, ক্যাম্পে জঙ্গি সংগঠন আশ্রয় নিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। র্যাটব একটি প্রশংসনীয় অভিযান চালিয়েছে। আশা করবো, এই ধরনের সাড়াশি অভিযানের মাধ্যমে ক্যাম্পে যারা এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার জন্য পরিকল্পনা করেছে তাদেরকে আটক করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সন্ত্রাসমুক্ত করবে।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শীর্ষ জঙ্গি সংগঠনের যে দুজন প্রধান নেতা গ্রেফতার হয়েছে সেটি আমাদের এই অঞ্চলের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলাতে নজরদারি বাড়ানোর জন্য এবং সেখানে যৌথ অভিযান চালানোর জন্য। যে জঙ্গিরা ধরা পড়েছে তাদের নিশ্চয়ই ডালপালা এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে আছে, তাদের অনুসারী এ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে আছে। আমাদের দাবি থাকবে, এ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যৌথ অভিযান চালিয়ে যে জঙ্গি সংগঠন এবং যে সন্ত্রাসীরা রয়েছে তাদেরকে এখান থেকে নির্মূল করার জন্য। তা না হলে যে কোন সময় কিন্তু তারা কক্সবাজার অঞ্চলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
এদিকে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এব্যাপারে র্যাববের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছি। এখানে যে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর র্যা ব ফোর্সেস, এবিবিএন, পুলিশ শুধু তাই নয় সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আমরা সবাই সমন্বিতভাবে একত্রে গোয়েন্দা তত্ত্বের ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছি। অবশ্যই আমাদের নজরদারি ছিল বলেই তো আমরা এই অভিযানগুলো করতে পারছি এবং নতুন যে জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান তাকে আমরা এখান থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মনে করি, দারি অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে অবশ্যই নজরদারি আরো জোরদার করব।
নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন সদস্য ও তাদের আশ্রয় এবং প্রশিক্ষণ দেয়া বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ১৪ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে র্যানব।
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৬ বছর চলছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা একটা গণ্ডিবদ্ধ জীবনযাপন করছে। তারা হতাশায় ভুগছে। কারণ তারা কবে স্বদেশে ফেরত যাবে, কোথায় যাবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ কি এটা চিন্তা করে। হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সবসময় যে কেউ উগ্রপন্থা হোক বা যেকোনো মাধ্যমে হোক আশার বাণী শুনায়, তাই স্বাভাবিকভাবে যে কেউ তাদের সহজে ভিকটিম বানাতে পারে।
মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে দেখা যাবে মিয়ানমার বিশেষ করে, আরাকান অঞ্চলের ওপর যে রিপোর্টটা দিয়েছে; সেখানে বলেছে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই রোহিঙ্গাদের বিষয়টা দ্রুত এবং যথাযথভাবে বিবেচনায় না আনে ও সমাধান না করে তাহলে এ অঞ্চলটা উগ্রবাদের একটা উর্বর ভূমি হিসেবে পরিগণিত হবে। যেটার কারণে উগ্রবাদ শুধু বাংলাদেশ মিয়ানমারেই নয়, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ এতদ্ব অঞ্চলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। উগ্রবাদের কারণে পুরো অঞ্চল অস্থির এবং সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। যা কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে।
মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, এখনো দুয়েকটা মানুষ ধরা পড়েছে মাত্র। এটা শুধুমাত্র আলামত। এটা হয়তো ভবিষ্যতে আরো কঠিন এবং কঠোর আগ্নেয়গিরি হিসেবে আছে। যদি ১১ লাখ রোহিঙ্গা দীর্ঘসময় গণ্ডিবদ্ধ জীবনযাপন আগ্নেয়গিরির বিষ্ফোরণের আগে যেমনটি ঘুমিয়ে থাকে ঠিক তেমন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
এই সংকট সমাধানের ব্যাপারে মেজর (অব.) মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, সরকার বা রাষ্ট্র যতই করুক এখানে প্রথম কাজ হলো প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদেরকে তার স্বদেশে, স্বঅঞ্চলে পুনর্বাসিত করা বা ফেরত পাঠাতে হবে। এটা হলো সরকারের এক নাম্বার কাজ। দুই নাম্বার কাজ হচ্ছে, এখন যে ধরণের আলামতগুলো দেখা যাচ্ছে তা অচিরেই যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো না হয় এটা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে এখনো একটা রোহিঙ্গাকেও আমরা ফেরত পাঠাতে পারিনি। কূটনীতিক উদ্যোগগুলো এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে। কূটনীতিক উদ্যোগে যেহেতু দুইজন রোহিঙ্গাও ফেরত পাঠানো যায় নি, বরং আরো রোহিঙ্গা কালকেও আমাদের দেশে এসে ঢুকেছে। সুতরাং কূটনীতিক উদ্যোগগুলো যাতে তামাশায় পরিণত না হয়, কাজের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফেরত যেতে বা প্রত্যাবর্তন করতে পারবে সেই ধরণের কূটনৈতিক উদ্যোগ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা দায়িত্বে আছে তারাই জানে কি ধরণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ যে গোয়েন্দা তৎপরতা সেটাকে জোরদার করতে হবে। তাহলে ভেতরে কি ঘটছে সেটা দ্রুত বের করা যাবে। নিশ্চই এটা আছে না হয় র্যাকব কিভাবে জানল যে তারা ক্যাম্পের ভেতরে কাজ করছে। আমার মনে হয়, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী যথেষ্ট তৎপর আছে। এই তৎপরতা আরো বজায় রাখতে হবে। এটাকে আরো সচল এবং আরো কার্যকরি করতে হবে। আসল এবং প্রথম কাজ হলো রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার

পাঠকের মতামত

মিয়ানমারে সংঘাত/টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকল আরও ৯ বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ...