প্রকাশিত: ২৫/০৫/২০১৬ ৭:৩৯ এএম

yabaআহমদ গিয়াস, কক্সবাজার :

মুখে দাঁড়ি, মাথায় টুপি, দেখলে মনে হয় কামেল পীর। কিন্তু বেশভূষায় ভাল মানুষের আকৃতি ধারণ করলেও আসলে তিনি একজন শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী। নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধিও। এভাবে টেকনাফে গত নির্বাচনে বিজয়ী ৮০ ভাগ জনপ্রতিনিধি ইয়াবা ব্যবসায়ী।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই ইয়াবা ব্যবসা করে গত ৬/৭ বছরে আয় করেছেন কয়েক শত কোটি টাকা। কোটি কোটি ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন বিলাসবহুল বাড়ী। হাকাচ্ছেন দামী গাড়ী। অথচ ইয়াবা ব্যবসা করার আগে তারা ছিলেন দিন মজুর, কেউবা কাঠুরিয়া, কেউ কেউ ঠেলাগাড়ী চালক।

টেকনাফ থানার ওসি আবদুল মজিদ টেকনাফে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শতকরা ৮০ ভাগ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন- এদের অনেকের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। অনেকেই ছিল মামলার পলাতক আসামী। কিন্তু নির্বাচনের সময় গোপনে এলাকায় এসে নির্বাচন করে টাকা ঢেলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার পরও অনেকেই পলাতক রয়েছে।

একই তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী।

তিনি বলেন- উখিয়া-টেকনাফের অধিকাংশ মানুষ এখন ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে টেকনাফের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে সীমান্ত জনপদটি ইয়াবার স্বর্গ রাজ্য হয়ে ওঠেছে। একারণেও দেশও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন- এনবিআর ও দুদক যদি সক্রিয় হয় এবং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাহলে কেউ এই ধরনের অবৈধ ব্যবসার সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু ওই দুটি সংস্থার নিস্ত্রীয়তার কারণে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না।

বিজিবি ছাড়া অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত বলে তিনি মনে করেন।

সাবেক এই সংসদ সদস্য আরো বলেন- টেকনাফের কিছু কিছু পাড়া আছে, যেখানে সকলেই কোন না কোনভাবে ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। সেখানে কোন সৎ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ধরনের একটি গ্রামের নাম সাবরাং এর নাজিরপাড়া। গত পক্ষকাল আগে ৫ সাংবাদিক সেখানে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের হামলার শিকার হয়।

জানা যায়, ইয়াবা ব্যবসা করে সাম্প্রতিককালে বিত্তশালীতে পরিণত হওয়া ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব দেখলে সাধারণ মানুষের চোখ ছানাবড়া হয়ে ওঠতে পারে। এরমধ্যে একজন হ্নীলার ৮নং ওয়ার্ডের সদ্য নির্বাচিত মেম্বার নুরুল হুদা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকার ৬নং আসামী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় রয়েছে কমপক্ষে ২০টি মামলা। এমনকি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আরো মামলা রয়েছে বলে জানান টেকনাফ থানার এসআই সাফায়েত।

স্থানীয়রা জানান, নুরুল হুদারা একসময় খুব গরীব ছিল। তারা ঠেলা গাড়ী চালাত। কাঠুরিয়া হিসাবে বন থেকে লাকড়ী এনে বিক্রি করেও জীবন চালাত। এখন সে একাই ১১৩ কানি জমির মালিক। এছাড়া প্রাইভেট কার ও নোয়া গাড়ী রয়েছে ৪টি, ট্রাক ৪টি ও পিকআপ ২টি। গাজীপুর ও চট্টগ্রাম শহরেও তার জমি রয়েছে।

হ্নীলার লেদা এলাকার মৃত আবুল কাশেমের ছেলে নুরুল হুদা ছাড়াও পরিবারের সকলেই এই ব্যবসায় জড়িত। তার ছোট ভাই নুরুল কবির টেকনাফ থানার তালিকাভূক্ত ১ নং ইয়াবা ব্যবসায়ী। সে সাগর পথে ঢাকা, চট্টগ্রাম, এমনকি ভারতেও ইয়াবা পাচার করে। যশোর সীমান্তে এক একর জমির উপর তার একটি দোতালা বাড়ী রয়েছে। এই বাড়ীটিতেই ভারতে পাচারের জন্য ইয়াবা মজুদ রাখা হয়। নুরুল কবিরের ব্রিকফিল্ডের ম্যানেজার হাশেম যশোরের জমিটি কিনে দেয়। এলাকায় ২ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ী করেছে। কবীরের ৫৫ কানি জমিও রয়েছে। এছাড়া ৪টি ডাম্পার, একটি এস্কেভেটর ও একটি ব্রিকফিল্ডের মালিক নুরুল কবীর। তার প্রায় ২ হাজার ভরি স্বর্ণও রয়েছে। যা মাটির নীচে পুঁতে রাখা হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ৩শ কোটি টাকার মালিক সে। তাছাড়া তার ভাই শামসুল হুদা ও আবছার (ইয়াবা ও হত্যা মামলায় জেলে) এর বিরুদ্ধে ১০ থেকে ২০টি করে মামলা আছে। কবীরের আরেক ভাই শামসুল হুদ্,া তাদের মামাত ভাই জাফর আলম ও জাহাঙ্গীর আলম (পিতা: মৃত লাল মিয়া) একই সিন্ডিকেটের সদস্য। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর লেদা মোচনী বিট এলাকা সংলগ্ন চার কানি জমি কেনে ৪০ লাখ টাকা দিয়ে। এতো গেল এক সিন্ডিকেটের কথা। একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার জামাল আহমদ ও তার ছেলে আজম সাগরপথে ইয়াবা পাচারে জড়িত। থাকে চট্টগ্রামে। চারটি জমি আছে চট্টগ্রাম শহরে। ২টি ইমারত আছে। এলাকায় প্রায় ৭৫ কানি জমি আছে। বর্তমানে বহু মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছে।

একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার বাবুল সম্প্রতি সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করে বাড়ী করেছে এলাকায়। একসময় সে চুরি-চামারী করে জীবিকা নির্বাহ করত। এখন শত কোটি টাকার মালিক।

জানা যায়, এসব মেম্বার নির্বাচন চলাকালে একেক জন দেড় বা ২ কোটি টাকা খরচ করেছে। মেম্বার নুরুল হুদার আপন ফুফাত ভাই হেলাল একই সিন্ডিকেটের সদস্য। থাকে চট্টগ্রামে। সেখানে ৫ তলা ভবন করেছে। সে বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ ধরাও খায়। পরে আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই ব্যবসায় ফিরে যায়। সে এক চালানে ১০ থেকে ২০ লাখ পিস ইয়াবা আনে। কমিশন পায় প্রতিবড়ি ৪টাকা হারে। তার ডজনখানেক গাড়ীও আছে। তারমধ্যে ৪টি বাস, ২টি ট্রাক ও ৪টি প্রাইভেট কার। হেলাল গত ৩/৪ মাস মগপাড়ার মংচালু চৌধুরীর কাছ থেকে আগে ৩৫ কানি জমি কিনেছে প্রতিকানি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দরে। শুধু তাই নয়, আরো ৩৫ কানি জমি কেনার জন্য বায়না করেছে। বর্তমানে খারাংখালী, আলীখালী ও লেদায় তার ১৩৫ কানি জমি আছে। অথচ তার পিতা জালাল সওদাগর পান দোকান করত। কোনমতে সংসার চালাত।

(চলবে)

পাঠকের মতামত

বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে-মুচড়ে গেল ইউএনওর গাড়ি

নির্বাচনী দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। দুর্ঘটনায় ...

সময়ের আলো’র নাইক্ষ‌্যংছড়ি প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ পেলেন সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ

দেশের শীর্ষ স্থানীয় জাতীয় দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে চুড়ান্ত নিয়োগ পেলেন ...