প্রকাশিত: ০১/১১/২০১৭ ৯:২৪ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১১:৩৭ এএম

rohiসমালোচনার মুখে মিয়ানমারে ইসরায়েলের অস্ত্র রফতানি স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাভিগদর লিবারম্যান মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র রফতানির রাশ টেনে ধরেছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বার্মিজ সেনাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় দেশটিতে ইসরায়েলি অস্ত্র রফতানিতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাস্তবেই এটি স্থগিত হওয়ার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ফ্রান্সভিত্তিক গোয়েন্দা তথ্য বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিনের খবরে বলা হয়েছে, কৌশলগতভাবে মিয়ানমারে সামরিক সরঞ্জাম রফতানির লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার এমন খবর প্রকাশ করেছে ম্যাগাজিনটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা দফতর।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরব ব্যক্তিদের একজন মানবাধিকারবিষয়ক ইসরায়েলি আইনজীবী ইটে ম্যাক। দেশটিতে অস্ত্র রফতানির বিরুদ্ধেও তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তবে মিয়ানমারের কাছে ইসরায়েলি অস্ত্র রফতানি স্থগিতের খবরকে পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করছেন না এ অ্যাক্টিভিস্ট। তার মতে, এমন খবর সন্দেহজনক।

ইটে ম্যাক বলেন, এই প্রতিবেদনের কোনও সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত দেশকে অস্ত্র সরবরাহের খবর নতুন নয়। ইতোপূর্বে কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা সুনির্দিষ্ট কিছু অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেছিল; কিন্তু কোনও দেশের কাছে অস্ত্র রফতানির বন্ধের মতো কিছু ঘটেনি। তারপরও আমি বিশ্বাস করতে চাই মিয়ানমারের কাছে ইসরায়েলের অস্ত্র বিক্রির খবর সত্য।

তিনি বলেন, অনেক পশ্চিমা দেশ অস্ত্র বিক্রি করলেও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই আলাদা। এই পার্থক্যের জায়গাটি হচ্ছে, যেখানে যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধ সংঘটিত হয়, সেখানে আপনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টকে পাবেন। যে প্রতিষ্ঠানগুলো অস্ত্র রফতানি করছে, যে কর্মকর্তারা এই বাণিজ্য অনুমোদন করছেন, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী জামানায় যে অল্প কয়েকটি দেশ তাদের কাছে অস্ত্র রফতানি করতো তাদের মধ্যে ইসরায়েল একটি। শুধু রুয়ান্ডার গণহত্যায় দেশটির কাছে অস্ত্র রফতানিতে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার পর সেখানে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে ইসরায়েল।

২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞর ভয়াবহতায় জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতায় দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করতে ইসরায়েলের আহ্বান জানায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিরি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রাখাইনে হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং ইসরায়েল সরকার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামরিক জান্তাদের এক প্রধান জেনারেল মিন অং লাইং ইসরায়েল সফর করেছেন। কেনাকাটার এই সফরে তিনি ইসরায়েলের সামরিক কারখানা পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট রিউভেন রিভলিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ইসরায়েলের সেনা প্রধানের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেন। জেনারেল লাইং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস ও এলটা সিস্টেমস এবং সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেন।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর সামরিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান টার আইডিয়াল কনসেপ্টস এর ওয়েবসাইটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিটি ছিল ইসরায়েলের নির্মিত কর্নার শট রাইফেলস হাতে প্রশিক্ষণের। ছবির সঙ্গে ছিল এক বিবৃতি যাতে উল্লেখ করা হয়েছে মিয়ানমার অভিযানে এই সব অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেছে।

ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, কোম্পানিটির প্রধান সাবেক ইসরায়েলি পুলিশ কমিশনার শ্লোমো আহারনিশকি। তবে এখন আর ওয়েবসাইটটি কোথাও মিয়ানমারের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে না। শুধু এশিয়া ব্যবহার করা হয়।

চলতি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ইসরায়েলের হাইকোর্টে মিয়ানমারের কাছে অব্যাহত অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করে মানবাধিকারকর্মীদের এক আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মার্চ মাসে প্রাথমিক শুনানিতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণলায় যুক্তি তুলে ধরে জানায়, এ বিষয়ে আদালতের কিছু করার নাই, বিষয়টি পুরোপুরি কূটনৈতিক।

৫ জুন ইসরায়েলের সংসদে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বিষয়ে নিসেট সদস্য তামার জ্যান্ডবার্গের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিবারম্যান জানান, ইসরায়েল আলোকিত বিশ্বকে (পশ্চিমা দেশ) অনুসরণ করে। প্রথমত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে। ইসরায়েল নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের অনুগামী এবং একই নীতি অনুসরণ করে। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, নিসেট প্লেনাম এই ধরনের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ক্ষেত্র নয় এবং ইসরায়েল আলোকিত বিশ্বের জারি করা সব নির্দেশনা অনুসরণ করে।

হারেৎজ লিখেছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্য সঠিক নয়। মিয়ানমারের কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে লিয়েবারম্যানের বক্তব্য অজ্ঞতা না কি ইসরায়েলের অস্ত্র রফতানির বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নন (যদিও তিনিই অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেন) কিংবা চোখে ধূলো দেওয়ার কোনও চেষ্টা, তা স্পষ্ট নয়।

ইতিহাস অনুসারেও লিবারম্যানের দাবি সঠিক নয়। আর্জেন্টিনায় যুদ্ধাপরাধে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকার সময় ইসরায়েল আর্জেন্টিনাকে অস্ত্র দিয়েছে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ইসরায়েল সার্বিয়ার সেনাদের অস্ত্র দিয়েছে। যেসব অস্ত্র দিয়ে বসনিয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইসরায়েল, হারেৎজ।

পাঠকের মতামত

রাইসির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হলো কোরআনের তিন আয়াত

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিলেছে দুর্ঘটনার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর। তবে ...

হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর শঙ্কা

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাব্দুলাহিয়ান নিহত হয়েছেন বলে শঙ্কা প্রকাশ ...

বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বুথিডং শহর দখল করেছে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যভিত্তিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বুথিডং শহরতলির ...