প্রকাশিত: ১৬/০৫/২০১৭ ১০:১৩ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৬:০৭ পিএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি কক্সবাজারের ঐতিহাসিক জনসভায় ইয়াবা বিরোধী কঠোর বক্তব্যের পর কিছু সংখ্যক ইয়াবা পাচারকারী নিজেকে এই ব্যবসা থেকে গুটিয়ে নিলেও এখনো অনেকেই জড়িত রয়েছেন ইয়াবা পাচারে। ওই সময় প্রশাসন কিছুটা তৎপর হলেও এখন তেমন কোন তৎপরতা না থাকায় আগের নিয়মে কৌশল পাল্টিয়ে ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে পাচারকারীরা।

গত সোমবার উখিয়া-টেকনাফ, চট্টগ্রামে ২ লাখ ৪৩ হাজার ইয়াবাসহ ১৩ জনকে আটক করেছে বিজিবি ও পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে মাদক পাচার আইনে মামলা রুজু করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কিছু ইয়াবা ব্যবসায়ী যারা আগে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তারা নিজের অস্থিত্ব রক্ষার্থে গা ঢাকাসহ অন্যত্রে পাড়ি জমিয়েছেন। এমনই কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে বিভিন্ন সূত্রে।

তাদের মধ্যে রয়েছেন-উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামের এনামুল হক এনাম। ইয়াবা ব্যবসা করে এনাম অল্প সময়ের মধ্যে বালুখালীতে কোটি টাকায় জমি ক্রয় করে নির্মাণ করেছে বাড়ি। কক্সবাজার, বান্দরবান এলাকায় রয়েছে তার কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে স্পেশাল সার্ভিস, নোহা গাড়ীসহ কোটি কোটি টাকার বৈধ-অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তিনি।

একই ভাবে ঘুমধুম বেতবুনিয়া এলাকার আলি আকবর নিজে চলে গেছেন আত্মগোপনে। তারও রয়েছে বিশাল অবৈধ সম্পদ। এই সম্পদগুলো একমাত্র ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে গড়েছেন বলে এলাকাবাসির অভিযোগ। অথচ আলি আকবর ২ বছর পূর্বে টেকনাফ একটি আবাসিক হোটেল বয় হিসেবে চাকরি করেছেন। তাদের মতো রাজাপালং ইউনিয়নের লম্বাঘোনা এলাকার খোকা ওরফে ইয়াবা খোকা নির্মাণ করেছেন বিলাস বহুল বাড়ী। বাড়ীর চারপাশে বসিয়েছেন অন্তত ১২টি সিসি ক্যামরা। তিনিও ইয়াবা ব্যবসা করে এসব সম্পদের মালিক হয়েছে। কারণ আজ থেকে ২ বছর পূর্বে তিনি মাইক্রোবাসের হেলপার হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তাঁর প্রাইভেট কার, নোহা গাড়িসহ অঢেল সম্পদ রয়েছেন উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়িতে।

আরেকজন রাজাপালং ইউনিয়নের হিজলিয়া এলাকার বাবুল। ইতিমধ্যে গড়ে তুলেছেন দেড় কোটি টাকা খরচ করে একটি আলিসান বাড়ী। কোটবাজারে সেলামি দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকার। সেও দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে আড়াল করতে বসবাস করে যাচ্ছেন ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তাদের মতো উখিয়ার অন্তত ৪০/৫০ জন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী চলে গেছেন আত্মগোপনে।

একইভাবে টেকনাফ উপজেলার ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত কালো টাকা সাদা করতে মোঃ হোছন চট্রগ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। এছাড়াও মিয়ানমারের এনাম নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর ৩ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে। তার বড় ভাই ইছমাইল ছিল স্বরাষ্টমন্ত্রণালয়ের তালিকাভৃক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল হুদার সাবেক কেরানী। তার বিরুদ্ধেও টেকনাফ থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। ইছমাইলও বর্তমানে কক্সবাজারে বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।এভাবে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা তাদের কালো টাকা সাদা করার জন্য বিভিন্ন ভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও জায়গা জমি কিনে নিচ্ছে। ব্যাপক হারে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অন্যত্র পাড়ি দেওয়ার ঘটনায় সাধারণ জনমনে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আইনের আাওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রসাশনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সম্পদের খোঁজ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন তথা দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসি।

সূত্রে আরো জানা গেছে, মোহাম্মদ হোছনের মইজ্জারটেক এলাকার বাসায় নিয়মিত চলে ইয়াবা লেনদেন। তার বাসায় যাওয়ার সময় গত সোমবার কর্ণফুলী থানা এলাকায় ৬১০০ পিস ইয়াবাসহ ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযানে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণপাড়ের মইজ্জারটেক এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটকরা হলেন মোঃ আজম (৪২), দিদার (৩৫), ইয়াছিন (২৪), নুুরুল হক (২১), হাফেজ নুর কাজল (২৫), ছগির (৩৫), ইয়াছিন (২৯), আবদুর নবী (৩০) ও জাকির হোসেন (৩০)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার অভিযানে মইজ্জারটেকসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে উক্ত ইয়াবা সহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এসময় একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রুজু করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মতো আরো অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী ইতিপূর্বে টেকনাফ ছেড়ে কক্সবাজার, বান্দরবান,চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে উখিয়া-টেকনাফে বিজিবি পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৩৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৪ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে। টেকনাফ থানার ওসি মাঈন উদ্দিন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী এক জনপ্রতিনিধির বসতবাড়ী সংলগ্ন মরিচ ক্ষেত থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার মূল্য ২০ লাখ টাকা। এসময় ৪ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়।

অপরদিকে ৩৪ বিজিবি’র সহকারি পরিচালক মোঃ মুসলেহ উদ্দিন বলেন, টেকনাফ থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহি নাফ স্পেশাল সার্ভিসে অভিযান চালিয়ে ৪৭ হাজার ২৮০পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে মরিচ্যা বিজিবি। এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এখন সাধারণ মানুষের অভিমত প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার পর ইয়াবা পাচার বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও অদৃশ্য কারণে পাচার অব্যাহত রয়েছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাউলাই মারমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রশাসন ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ধরতে। ছোট হউক বড় হউক কোন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ছাড় দেওয়া হবেনা। তবে উপরের কঠোর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছে প্রশাসন।

পাঠকের মতামত