প্রকাশিত: ০৮/০৭/২০১৮ ৯:৩৫ এএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ১:০০ এএম

এইচ. এম এরশাদ ::
মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর বর্বরতায় সীমানা চিহ্নিত খাল জোয়ারভাটা নদী নাফের বুক ছিড়ে পানিতে ভেসে প্রাণ রক্ষায় রোহিঙ্গা নারী-শিশু, কিশোর-কিশোরীদের অনুপ্রবেশের আপ্রাণ চেষ্টা ইত্যাদি সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন সাংবাদিকরা। রোহিঙ্গা সঙ্কটকে পুরোবিশ্বের সামনে তুলে ধরতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন কক্সবাজারের কিছু সংবাদকর্মী। সাংবাদিকদের রিপোর্টিংয়ের কারণে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারের উপর। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ে অবগত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। তবে অবহেলিত কক্সবাজারের ওসব সাংবাদিক।
জানা যায়, গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে কক্সবাজার জেলায় কর্মরত কিছু সংখ্যক ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মী রোহিঙ্গা বিষয়ে এ পর্যন্তও রিপোর্টিংয়ের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা সরকার ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে নিয়মিত পাচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ব্যক্তিরাও পেয়েছে সরকার ও একাধিক এনজিওর কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ সহ বিভিন্ন সহযোগিতা। তবে যাদের কারণে রোহিঙ্গা সঙ্কট পুরো বিশ্বে জেনেছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা বন্ধে এবং তাদের উপর চাপ সৃষ্টিকল্পে সোচ্চার হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মহল। যাদের সচিত্র প্রতিবেদনে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসহায় জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে বহু দাতা সংস্থা। অনুপ্রবেশকারী নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে একাধিক রাষ্ট্র। সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট সহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, ফাস্টলেডি ও মন্ত্রীবর্গ। কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যাদের টানা চারমাস ধরে চোখে ঘুম ছিলনা, গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে ঠিকমত খাওয়া, ঘুম, গোসল এমনকি পরিবারের খোঁজখবরও নিতে পারেননি তারা। বর্তমানে ওসব সাংবাদিকরা অবহেলিত। কক্সবাজারের গণমাধ্যমকর্মী ও সচেতন মহলের কাছে এ প্রশ্ন ঘুপাক খাচ্ছে।
সচেতন মহল বলেন, মিয়ানমারের ওপর যে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে একাধিক দিক থেকে রিপোর্টিংয়ের কারণে হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ও জনগণসহ গণমাধ্যমের কাজ সত্যি প্রশংসাজনক। শনিবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে অনুষ্টিত কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের বিশেষ সাধারণ সভায় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরকার, স্থানীয় জনগণ ও পর্যটন শহরে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রশংসা করে সাংবাদিক নেতা এ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর বর্বর অত্যাচারে পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী লাখ লাখ রোহিঙ্গার দু:খ দুর্দশা ও মানবিক কারণে তাদের স্থান দেয়ার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রেখেছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়। কক্সবাজারের সাংবাদিকগণ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে ধারাবাহিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে পুরো বিশ্বকে জানান দিয়েছে। তারা পেশাদারিত্বের খাতিরে একাধিক দিক থেকে রিপোর্টিংয়ের কাজে অলসতা দেখাননি মোটেও।
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরোয়ার সোহেল বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে সচিত্র প্রতিবেদন করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কষ্টের বর্ননা দিয়ে শেষ করা যাবেনা। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকের মূল্যবান ক্যামেরা, ল্যাপটপ ইত্যাদি ভিজে গেছে লবণাক্ত পানিতে। রোহিঙ্গাদের করুণচিত্র ফুটে আনতে অনেকে সাঁতার কেটেছে নাফ নদীতে। ক্ষিধায় কাতর সংবাদকর্মীরা ওইসময় স্থানীয় হোটেল রেস্তোরায় খাবারও পায়নি। তারপরও পেশাদারিত্বের খাতিরে স্থানীয় কিছু সাংবাদিক নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে সজাগ ছিল সর্বদা। রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাংবাদিকরা বহু দানবীর ব্যক্তিকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নিজেরাও যতটুকু সম্ভব ওইসময় ত্রাণসামগ্রী নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সেবায় অন্তত দেড় শতাধিক এনজিও দায়িত্ব পালন করছে। তন্মধ্যে কয়েকটি এনজিও অনুমোদনও লাভ করেনি। শুধুমাত্র এনজিওব্যুরো বরাবর আবেদন করেছে তারা। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীরা ইতোপূর্বে রোহিঙ্গা স্রোতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরী করেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলায় কর্মরত কিছু সাংবাদিক। কিন্তু তাদের তালিকা এ পর্যন্ত কেউ করতে দেখা যায়নি।
সিনিয়র সাংবাদিক ইকরাম চৌধুরী টিপু বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে সাংবাদিকদের হাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অথচ তারা প্রাতিষ্টানিকভাবে যেমন অবহেলিত, তেমনি সরকার বা কোন সংস্থা থেকেও কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়েছে সংবাদকর্মীরা। ওই সময় প্রশাসন থেকে পাওয়া যায়নি যানবাহন সুবিধা। গত বছরের ২৬ আগস্ট থেকে শুরু করে অন্তত ৩ মাস ধরে কয়েকজন সংবাদকর্মী শেয়ার করে নিজেদের টাকায় মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে রোহিঙ্গা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও নিজ নিজ গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে গণমাধ্যম প্রশংসার কাজ করেছে সত্যি, তবে পেশাদারিত্বে আত্মতুষ্টির স্থান নেই।

পাঠকের মতামত