প্রকাশিত: ২২/০৪/২০১৮ ৭:৩৪ পিএম , আপডেট: ১৭/০৮/২০১৮ ৩:৫০ এএম

উখিয়া নিউজ ডটকম : গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতার পর থেকে বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। তারা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে। সাত মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও তারা ফিরে যেতে পারেনি স্বদেশভূমিতে। তারা নিজেরা যেমন কষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে, তেমনি গাছ কেটে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে ঠেলে দিয়েছে হুমকির মুখে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় সঙ্গে করে তেমন কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি। তারা যা সামনে পেয়েছে, তা-ই সংগ্রহ করেছে ঘর তৈরির জন্য। নির্বিচারে পাহাড় ও বন কেটে উপকরণ সংগ্রহ করেছে। প্রতিদিনের রান্নার জন্য রোহিঙ্গারা বন থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করছে।

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পাহাড় কেটে, বন ধ্বংস করে একের পর এক রোহিঙ্গা শিবির গড়ে তোলা হচ্ছে। যে এলাকায় এই শিবিরগুলো গড়ে উঠেছে, সেখানে ছিল বন্যপ্রাণীর বসতি। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ওই এলাকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে দিয়েছে।

ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের শিবিরগুলো প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন স্বীকৃত তিনটি এলাকার প্রকৃতি ধ্বংস করেছে। এগুলো হচ্ছে- টেকনাফ উপদ্বীপের উপকূল এলাকা, সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও সোনাদিয়া দ্বীপ। এ ছাড়া শিবিরগুলোর কাছে আছে দুটি সংরক্ষিত এলাকা- হিমছড়ি ন্যাশনাল পার্ক ও টেকনাফ অভয়ারণ্য।

প্রস্তাবিত ইনানি ন্যাশনাল পার্কও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পাহাড়ি এলাকা ও টেকনাফ উপদ্বীপ পরিযায়ী পাখির আন্তর্জাতিক উড়ালপথের অংশ। তারা মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলেশিয়ার মধ্যকার দীর্ঘপথ উড়ার পর এখানে কয়েক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এই বিশ্রামের পরিবেশ নষ্ট হলে পাখিরা এই আন্তর্জাতিক পথ ছেড়ে দেবে। এতে কিছু প্রজাতির পাখি বিপন্ন হবে।

সমুদ্র উপকূল ও পাহাড় একইসঙ্গে থাকায় এই অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্যে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এই বৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে। এ এলাকায় আছে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ। কিন্তু বন নিধনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা শিবিরগুলো এ বৈচিত্র্য বিনষ্ট করছে। তাছাড়া শরণার্থী শিবির তৈরি করতে জমি পরিষ্কার করা হয়েছে, সেবা দেয়ার জন্য রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে, পানির কূপ ও শৌচাগার তৈরি করা হয়েছে।

এতে বন ধ্বংসের পাশাপাশি ভূমিক্ষয় হচ্ছে। ছোট ছোট নালা বন্ধ হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের শিবিরের বাইরে আসা নিষেধ থাকলেও তারা তা মানছে না। তারা বেআইনিভাবে বন্যপ্রাণী শিকার করছে। হাতিসহ কিছু প্রাণীর অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার অনেক বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তাই বলে তাদের দ্বারা জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস ও বন উজাড় মেনে যায় না। রোহিঙ্গাদের হাত থেকে বন ধ্বংস এড়াতে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

রোহিঙ্গা ও স্থানীয় মানুষের জন্য বিকল্প জ্বালানি কর্মসূচি গ্রহণ, শিবিরে হাতির প্রবেশ ঠেকাতে গাছ ও বাঁশের বেড়া তৈরি, বন ধ্বংস হওয়া এলাকায়, ন্যাড়া পাহাড়ে, বাতিল হওয়া শিবিরের জায়গায় বনায়নের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। সরকার ছোট ছোট ক্যাম্প গুটিয়ে কুতুপালং ও বালুখালী এলাকায় বড় ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের রাখার পরিকল্পনা করছে।

এ উদ্যোগ হয়তো ব্যবস্থাপনার দিক থেকে বাস্তবসম্মত। তবে পরিবেশের পরিপ্রেক্ষিতে তা স্পর্শকাতর। সর্বোপরি এ সমস্যার সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো।

পাঠকের মতামত

বদির কাছে হারলেন স্ত্রী

কক্সবাজার ৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারকে ৩ ভোটে পরাজিত করে উখিয়ার মরিচ্যা পালং ...

গদি নেই তবু সাবেক এমপি বদি!

আবদুর রহমান বদি। কক্সবাজার-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছিলেন, তাও আবার ক্ষমতাসীন দলের টিকিটে। মাদক ...