প্রকাশিত: ২৫/০৮/২০১৮ ২:৪১ পিএম

ডেস্ক রিপোর্ট  – মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য প্রথম বছর বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে উল্লেখযোগ্য খরচ হয়নি। তবে দ্বিতীয় বছরের জন্য সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। এছাড়া অনুদান আসবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গত একবছর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে উল্লখযোগ্য খরচ না হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে সরকার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ বাজেটেও রোহিঙ্গা খাতে পৃথকভাবে আরও  ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, ‘প্রথম বছর সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে উল্লেখযোগ্য কোনও ব্যয় নির্বাহ করা হয়নি। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনসহ (ইউএনএইচসি আর) বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সরকারি অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে ৫০০ কোটি টাকা। তবে রাস্তাঘাট নির্মাণ থেকে শুরু করে টয়লেট, টিউবওয়েল, ল্যাট্রিন ও গোসলখানা নির্মাণ, বিদ্যুতের লাইন টানা ও চিকিৎসা খাতে প্রায় ২০০  কোটির বেশি ব্যয় হয়েছে। ৪ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। আর রোহিঙ্গা শিবিরে সামরিক-বেসামরিক মিলিয়ে ৩ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। যাদের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ সরকারের তহবিল থেকেই বহন করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিবছর সরকারের প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এই অর্থ জোগাড়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। গত ৩-৬ মে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এডিবি’র ৫১তম বার্ষিক সভায় এ সংক্রান্ত পৃথক একটি সেশনের আয়োজন করা হয়। ওই সেশনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এডিবি প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাওকে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান।

সূত্র জানায়, গত একবছর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনসহ (ইউএনএইচসিআর) বিভিন্ন দাতাসংস্থা, বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা হলেও কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের বিভিন্ন তহবিল থেকে ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে।

সরকারের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,  রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে খাদ্য, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন খাতে। এ তিন খাতে এখন পর্যন্ত কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়া ওইসব এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য হারে ব্যয় হচ্ছে।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার সরকার মূলত বাংলাদেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এডিবির প্রেসিডেন্ট নাকাও। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। এ কাজে এডিবি তৎপর থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নাকাও। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করবে এডিবি।

ভাসানচরে পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকার আশ্রয়ন-৩ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। নৌবাহিনীকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসন করা হবে। ১ লাখ ৩ হাজার ২০০ মানুষের বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ভাসানচরের অভ্যন্তরে সড়ক, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, নলকূপ বসানোসহ যাবতীয় অবকাঠামো তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্পে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও স্যানিটেশন পণ্য দিয়ে সহায়তা করছেন। তবে এখন নগদ টাকার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের বেতন-ভাতা নির্বাহ, বাসস্থানের জন্য ও অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন বলে জানা গেছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ৭১টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নেও বছরে প্রয়োজন হবে ২০০ কোটি টাকা। যা সরকারকে জাতীয় বাজেট থেকেই নির্বাহ করতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। এজন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে আমরা বলেছি বিষয়টির দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। এজন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি একাজ সমন্বয় করবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এডিবির বার্ষিক সভার ওই বিশেষ সেশনে জানানো হয়েছে রোহিঙ্গাদের দেশে নিরাপদে ফেরত পাঠানো বেশি জরুরি। এজন্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।’

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে আইওএমকে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

নতুন অংশীজন খোঁজার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাকে (আইওএম) রোহিঙ্গাদের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহের আহ্বান জানিয়েছেন ...

গ্রামাঞ্চলে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

গ্রামাঞ্চলে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ...

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আশা বাংলাদেশ-গাম্বিয়ার

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। ...

কারামুক্ত হলেন মামুনুল হক

হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কারামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ মে) সকাল ...

সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উখিয়ায় হবে উন্মুক্ত কারাগার, শিগগির নির্মাণ শুরু

উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ...