প্রকাশিত: ০৯/০৫/২০১৭ ৭:১৪ এএম , আপডেট: ০৯/০৫/২০১৭ ৭:৪৬ এএম

উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
ঢাকার আশুলিয়া থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেমবির সদস্য অভিযোগে আটক দুই জন মিয়ানমারের আরাকানের জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি ইমরান ও তার সহযোগি রফিক জেমমবিকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সরবরাহ করতেন বলেও জানিয়েছে বাহিনীটি।

সোমবার দুপুরে কাওরানবাজারের র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

মাহমুদ খান বলেন, গত ১০ এপ্রিল র‌্যাব-১৪ এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অভিযানে জেএমবির এক নারী সদস্য গ্রেপ্তার হয়। ওই জঙ্গি নারী সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির বিস্ফোরক সংগ্রহ ও সরবরাহের কিছু তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ মে রাত সোয়া ১০ টার সময়ে ঢাকার আশুলিয়া এলাকা থেকে ইমরান হোসেন এবং রফিকুল ইসলাম ওরফে জুনায়েদ রফিক গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুই বোতল সালফিউরিক এসিড, বিভিন্ন ধরনের স্পিøন্টার উপযোগী বল পাঁচ প্যাকেট এবং বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক তৈরির উপযোগী রাসায়নিক পদার্থ (সালফার সদৃশ্য পাউডার, পটাসিয়াম সদৃশ্য পাউডার, পটাসিয়াম ক্লোরেট সদৃশ্য পাউডার) এক কেজি ৬৫০ গ্রাম সহ অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে তারা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে জড়িত। তারা এসব বিস্ফোরক সংগঠনের চাহিদার ভিত্তিতে সংগ্রহ করেছিল কিন্তু সরবরাহ করার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে যান।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ইমরান হোসেন মূলত বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকে। তার সহযোগী রফিক বিতরণকারী হিসেবে কাজ করে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে কয়েকজন বিস্ফোরক বিক্রেতার তথ্যসহ তাদের দলের আরও কয়েকজন সংগ্রাহক ও বিতরণকারীদের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত ইমরান হোসেন বিভিন্ন কেমিক্যাল নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের কাজ করতেন বলে জানায় র‌্যাব। তিনি ২০০১ সালে জনৈক ফরিদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে হুজি (বি) তে যোগদান করেন। ২০০১ সালে বুড়িরচরে তার মতো ২০-২৫ জন যুবক বয়সীদের নিয়ে একটি প্রাথমিক জঙ্গি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ময়মনসিংহের বুড়িরচরের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ইমরান র‌্যাবকে জানান, শহিদুল্লাহ এবং রুম্মন নামে দুইজন প্রশিক্ষক তাদেরকে শারীরিক ও জঙ্গি মতাদর্শের উপরে প্রশিক্ষণ দিতেন। আর তিনি সংগঠনের জন্য নিয়মিত ইয়ানত (চাঁদা) সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ জেলার সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ জনৈক তারিক ওরফে আব্দুল্লাহর নিকট পাঠাতের। এরপর ২০১৪ সালের শুরুর দিকে তিনি জেএমবির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন।

ইমরান হোসেন ২০১১ সাল থেকে জয়দেবপুরের কয়েকটি কেমিক্যাল নির্ভর শিল্প কারখানায় চাকরি সুবাদে বৈধ কেমিক্যাল সংগ্রহ ও সরবরাহ চেইন সম্পর্কীয় তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতেন। এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সংগঠনের জন্য বিস্ফোরক তৈরিতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংগ্রহ করতেন এবং বাহকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম এলাকায় জঙ্গিদের নিকট পাঠাতেন।
মূলত ইমরানের সরবরাহকৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদির মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এ লক্ষ্যে সে ঢাকা থেকে কেমিক্যাল দ্রব্যাদি সংগ্রহ করে রফিকের নিকট পাঠাতেন। রফিক ওই কেমিক্যালগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। রফিক এবং ইমরান একই সমসাময়িক সময় থেকে হুজি (বি) তে অন্তর্ভূক্ত হন। ওই সংগঠনে থাকাকালে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। সে বোমা তৈরিতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। ইমরান কর্তৃক রফিক প্ররোচিত হয়ে ২০১৫ সালের শেষের দিকে জেএমবির অনুসারী হয়ে পড়েন।

র‌্যাব জানায়, রফিক মূলত কুরিয়ার বা বাহকের কাজে নারী সদস্যদের ব্যবহার করতেন। তার দুইজন স্ত্রীও বর্ণিত কাজের সাথে সম্পৃক্ত বলে রফিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তার প্রথম স্ত্রী জয়নাব বিবি আত্মগোপনে রয়েছে এবং দ্বিতীয় তহুরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়াতে নিখোঁজ হয়ে রফিককে বিবাহ করার পর বাড়িতে ফেরত আসে এবং পরবর্তীতে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া বিস্ফোরক বাহক হিসেবে আরো কয়েকজন নারী জঙ্গি সদস্য সম্পর্কে রফিকুল তথ্য দিয়েছেন।

পাঠকের মতামত

কঠোর নির্দেশনার পরও মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা ছাড়ছে না ভোটের মাঠ

সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিতে কঠোর নির্দেশনা ...

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সীমান্তরক্ষীদের নিতে জাহাজ আসবে এ সপ্তাহেই

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্যদের ফের ...