চট্টগ্রাম : সবুজ মিয়া ও আসমা বেগম। বয়স ৪০ পেরিয়েছে। তারা ভ্রাম্যমাণ। আজ এই শহরে তো কাল ওই শহরে। আজ এই জেলায় তো কাল ওই জেলায়। তাদের বছর কাটে জেলায় জেলায় ঘুরে। জেলায় জেলায় ঘোরেন আর মামলা করেন! মামলার কাহিনী কাকতালীয়ভাবে প্রতিবার একই। প্রতিবারই স্ত্রী আসমা ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন আর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন।
হোটেল বয় থেকে শুরু করে হোটেল মালিক, বাড়ির দরোয়ান, বাড়ির মালিক প্রত্যেকে আসমাকে ধর্ষণ করেন আর বাদী হয়ে মামলা করেন স্বামী সবুজ মিয়া। পাহাড় থেকে সমতলে সমানতালে মামলা করেছেন এই দম্পতি। এভাবে প্রতারণামূলক মামলা করে টাকা হাতিয়ে নেন। হাজার থেকে লাখ টাকা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার নগরীর কোতোয়ালি থানায় এমন হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহসিন জানান, সবুজ মিয়া এবং আসমা বেগম রীতিমত ভয়ংকর দম্পতি। জেলায় জেলায় নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করাই তাদের পেশা।
ওসি মহসিন জানান, আজ বৃহস্পতিবার তার থানায় এসেছিলেন তারা। থানায় এসে অভিযোগ করেন নগরীর লালদীঘি এলাকার একটি হোটেলের বয় আসমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের অভিযোগের সঙ্গে মুখের কথায় গড়মিল থাকায় সন্দেহ হয় তার। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তারা শিকার করেন তাদের ভয়ংকর প্রতারণার কথা।
তিনি জানান, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের এই দম্পতি জানিয়েছেন- তারা এমন ভয়ংকর প্রতারণা করে আসছে সেই ২০০৫ সাল থেকে। তারা প্রথমে মধ্যম মানের হোটেলে যান। সেখানে বাইরে বেরুনের কথা বলে চাবি ম্যানেজারের কাছে দিয়ে যান। এরপর এসেই অভিযোগ করে বসেন, তাদের রুমে নগদ টাকা রাখা ছিল, তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে হোটেল কর্তৃপক্ষ মালিকের মধ্যস্থতায় টাকার বিনিময়ে আপোশ করে ফেলেন। কিন্তু আপোশে না আসলে সেই হোটেলের মালিক কিংবা বয়ের বিরূদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলেন। মামলা করেন থানায় গিয়ে। এরপর আদায় করেন মোটা অংকের টাকা।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, এই দম্পতির প্রতারণামূলক মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে ঢাকা, বাগেরহাট, নেত্রকোণা এবং রাঙামাটিসহ বিভিন্ন জেলায়। প্রত্যেক জেলা থেকে মামলা করে প্রত্যেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গত ৬ মাস পূর্বে চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের একটি হোটেল থেকে একই কায়দায় ১২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এক জেলায় বেশি মামলা করলে সন্দেহ করতে পারে, তাই তারা এক জেলায় বেশি দিন থাকেন না। চট্টগ্রামেও বেশি দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল না। দু-একটি মামলা করেই অন্য জেলায় সটকে পড়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
প্রতারণার অভিযোগে এই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ।
পাঠকের মতামত