ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ৩১/০৩/২০২৪ ৩:২২ এএম

সকাল হলেই ভ্যান গাড়ি নিয়ে বাহারি ধরনের ফলমূল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বিভিন্ন এলাকায়। শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়াতে ব্যবসা পরিচালনা করতে খুবই কষ্ট হয়। ছয় সদস্যের পরিবারে স্ত্রীসহ রয়েছে দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। যেখানে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে কষ্ট হয় সেখানে সন্তানদের নিয়ে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন তার। ভ্যানে করে ফল বিক্রি করেও ৪ সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ ইদিলপুর ফল বিক্রেতা মিজান।

বাবার স্বপ্নকে লালন করে ফল বিক্রেতার মেজো মেয়ে তাহমিনা আক্তার মুন্নি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ নিয়ে পুরো এলাকায় জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোড়ন। তার এই কৃতিত্বে তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়রা।

তাহমিনা এ বছর ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে ১৮১তম ও সি ইউনিটে ৩১২তম হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিটে ৭৯তম এবং বি ইউনিটে ৪৫৪তম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তাহামিনার মা-বাবা জানতে পারেন তাদের মেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ খবর শুনে মা বাবার চোখের কোণ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। এ যেন আনন্দ অশ্রু। কিন্তু মেয়ের পড়ালেখার খরচ নিয়ে রয়েছে কপালে চিন্তার ভাঁজ।

জন্মসূত্রে তাহমিনার বাবার বাড়ি চাঁদপুরে হলেও ছোটবেলায় চলে আসেন সীতাকুণ্ডে। প্রথম পর্যায়ে চায়ের দোকানে কাজ করলেও পর্যায়ক্রমে তিনি ভ্যানগাড়ি করে ফল ব্যবসা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে ইদিলপুর গ্রামে একটি বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। একদিকে পরিবারে ভরণ পোষণ অন্যদিকে ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা খরচ, এ যেন উভয় বিপদে বাবা মিজান। তার ধারণা আল্লাহ কোন না কোনো ব্যবস্থা করে দিবেন তার মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন যোগাতে।

তাহমিনা আক্তার বলেন, আমার বাবা একজন দিনমজুর। ভ্যানগাড়ি করে বিভিন্ন জায়গায় ফল বিক্রি করেন। আমার বাবার স্বপ্ন আমরা যেন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হই। বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সব সময় পড়ালেখা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতাম। আমার পড়ালেখার খরচ যোগাতে পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো না খেয়েও দিন কাটিয়েছে। আমার পরিবারের পাশাপাশি প্যাসিফিক জিন্স ফাউন্ডেশন আমার পড়ালেখায় অনেক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও আমরা যাদের বাসায় থাকি তার ছোট ছেলে মঈন উদ্দিন মুসলিম মামা ও তার পরিবার সর্বদা আমাকে ও আমার পরিবারকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আজ ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত তাদের পরিবারের অবদান আমি কখনো ভুলবো না। তার অনুপ্রেরণায় আজ আমি এতদূর পর্যন্ত আসা।

তাহমিনার স্বপ্ন তিনি বড় হয়ে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার হবেন। কেনই বা তাহমিনা বিসিএস পুলিশ ক্যাডার হতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা দিনমজুর যখন যেটা পাই সেটা করে। তার পাশাপাশি ভ্যানে করে ফল বিক্রি করে। কিন্তু সড়কে ভ্যানে করে ফল বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সময় পুলিশের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। তাই গরীব দুঃখী অসহায় মানুষের সেবা করতে আমি পুলিশের মহৎ পেশাকে বেছে নিতে চাই।

তাহমিনার মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমি যে বাসাতে থাকি, সে বাসার মালিক আমার ছেলে মেয়ে ও আমাদের প্রতি আন্তরিক হয়ে কখনো বাসা ভাড়া নেয়নি। বরং উল্টো আমার ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ সর্বদা উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।

স্থানীয় প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন মুসলিম বলেন, মিজান ভাই দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাসায় থাকেন। তিনি অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী। তার ছেলেমেয়েদেরকে পড়ালেখা করানোর জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তার মেয়ে তাহমিনা অত্যন্ত মেধাবী। এসএসসি এইচএসসি দুটোতেই গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছেন। তাহমিনার স্বপ্ন বড় হয়ে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার হবে। তারই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সে একদিন দেশ ও জাতির সুনাম অর্জন করবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন , একজন ফল বিক্রেতার মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সুযোগ পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের বিষয় । উপজেলা প্রশাসন সবসময় গরিব ,অসহায় ও মেধাবীদের পাশে থাকে। তবে মেয়েটির ভর্তির জন্য আর্থিক সাহায়্যের আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

পাঠকের মতামত