প্রকাশিত: ১৭/০৪/২০২০ ১:১২ পিএম , আপডেট: ১৭/০৪/২০২০ ৮:২১ পিএম

পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনে চোখ রাখলেই ক’দিন ধরে কেবল করোনা আপডেট! সাম্প্রতিক বাংলাদেশে করোনায় কতজন আক্রান্ত,কতজন সুস্থ হয়েছেন আর কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন এই আপডেট এর পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে সরকারি প্রণোদনা,ত্রাণ ও ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের খবর।কেউ কেউ আবার একধাপ এগিয়ে কেবল অনিয়মকারীদের আপডেট দিচ্ছেন বেশ জোরে শোরে।স্যােসাল মিডিয়ার তীর্যক সমালোচনার কথা না হয় বাদই দিলাম।কেউ বলছে চাল চোর কেউ বলছে ত্রাণ চোর আবারো কেউ কেউ আরো একটু ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলছেন খাঁটের নীচে তেলের খনি,মাটির নিচে চালের খনি ইত্যাদি।তাদের আবার বিভিন্নজন বিভিন্ন শাস্তিদানের মতামতও অকপটে ব্যক্ত করছে স্বস্ব অবস্থান অনুযায়ী।এতে হাত কাটা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত কোনটিই বাদ যায়নি।চোর শব্দটা আমি ব্যবহার করবনা সঙ্গত কারণে আমি বলি অনিয়মকারী।অনিয়ম বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমনঃকেনাকেটায় অনিয়ম,তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম,প্যাকেট কার্যে অনিয়ম, ওজন কার্যে অনিয়ম,বিতরণে অনিয়ম ইত্যাদি।যারা উল্লেখিত বিষয়ের সাথে জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত থাকবেন তাদেরকে আমরা ত্রাণ কার্যের অনিয়মকারী হিসাবে চিহ্নিত করতে পারি।
কেনাকাটায় অনিয়মঃ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যে মানের পণ্য যে প্রক্রিয়ায় যে পরিমাণে যখন কেনার কথা ঠিক ঐ নিয়মের যেকোন প্রকারের ব্যত্যয় ঘটানো। সেটা যে পর্যায়ে যে স্তরেই হোকনা কেন।তা অবশ্যই অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত হবে।
উপকারভোগীদের তালিকা প্রনয়ণে অনিয়মঃ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রকৃত অর্থে অসহায় গরীব উপকারভোগীদের তালিকা দলমত নির্বিশেষে প্রনয়ণ করতে বলা হয়েছে যদি সরকারের এই নিয়মের ভিন্নতর কিছু করে নিজের/পরিবারের অন্যকোন সদস্যের স্বার্থসিদ্ধি করেন তাহলে প্রাথমিকভাবে ধরে নেওয়া হবে উনি অনিয়ম করছেন।
প্যাকেট কার্যে অনিয়মঃ সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী যে প্যাকেটে যে পরিমাণ পণ্যসামগ্রী থাকার কথা তার কম বা বেশি করা।সেটা পরিমাণ যতসামান্যই হোক।ধরুন প্রতিপ্যাকেট পাঁচকেজি চাল দেওয়ার কথা কিন্তু দেওয়া হল বস্তাসহ পাচঁকেজি তাও অনিয়ম হিসাবে পরিগনিত হবে।আবার দেখাগেল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভালো মানের সরুচালের কিন্তু প্যাকেটে দেওয়া হল নিন্মমানের গুদামপঁচা চাল।তাও অনিয়মের আওতাভুক্ত।
ওজনগত অনিয়মঃ প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীসহ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যা হবার কথা ঠিক সেই ওজনের প্যাকেট হওয়া বাঞ্ছনীয়।যদি কেউ একটাপণ্য কম দিয়ে কিংবা সবগুলোপণ্যে আনুপাতিকহারে কম দিয়ে সংশ্লিষ্ট ত্রাণ প্যাকেটের ওজন কম বা বেশি করেন তাহলে তাও অনিয়মের তালিকাভুক্ত হবে।
বিতরণে অনিয়মঃ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ বরাবরই চ্যালেন্জিং কারণ সমাজের কিংবা এলাকার লোকজন কমবেশি সবাই ঐ ত্রাণ প্যাকেট একই সময়ে পেতে চায়।এতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের জন্য যেপরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ঠিক তাদেরকেই ঐ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে হবে।যেহেতু এবারের অবস্থা অন্যান্য দূর্যোগের চেয়ে ভিন্নতর তাই সামাজি দূরত্ব নিশ্চিত করেই বিতরণ শেষ করা উচিত প্রয়োজনে প্রতিটা ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পর্যাপ্ত সম্মানপূর্বক এই ত্রানসামগ্রী বিতরণ করা লাগবে।যদি কেউ নির্ধারিত নিয়মের অন্যরুপ করেন কিংবা স্বজনপ্রীতি বা এলাকা প্রীতি করেন তাহলে তাদেরকেও অনিয়মকারীর দলভুক্ত করতে হবে।এভাবে ত্রাণ কার্যের সাথে সম্পৃক্ত সর্বোচ্চ থেকে উপকারভোগীর কাছে পৌছানো পর্যন্ত প্রতিটা স্তরে ও পর্যায়ে এটি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। যাতে করে নিয়মে কোন গলদ বা ফাঁকফোকর না থাকে।অধিকাংশ অনিয়ম কেবল দূর্বলনীতি কিংবা সিস্টেমের কারণে সংঘটিত হয়।এতক্ষণ বললাম অনিয়মের কথা এবার আসি অনিয়মকারীর কি শাস্তি হওয়া দরকার ঐ বিষয়ে।যদি কেউ অনিয়মকারী হিসেবে প্রমানিত হয় তাহলে তাকে স্বস্ব জেলায় স্থাপিত করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্ধারিত “আইসোলেশন ওয়ার্ডে” সেবাকারীর দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।তাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত থেকে ঐ রোগীদের সম্পূর্ণরুপে সুস্থ হয়ে না উঠা পর্যন্ত ঐ ওয়ার্ডে বাধ্যতামূলক দায়িত্বে রাখা যেতে পারে।যদি কোন আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয় তাহলে দাফন কাপনের দায়িত্বেও তাকে রাখা যেতে পারে। এতে করে সে এই মহামারীতে ভুক্তভোগী মানুষের নিদারুণ কস্ট খুব নিকট থেকে দেখার সুযোগ পাবে এবং অন্যদিকে ডাক্তার নার্সদের পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তিরা একজন বিশেষ সেবকের কাছ বাড়তি সেবা পাবার সমূহ সম্ভবনা থাকবে।অপরাধের ধরণ অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈতনিক অথবা অর্থদন্ডসহ শাস্তি আরোপ করা যেতে পারে জরিমানার ঐ অর্থ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসামগ্রী,টেস্টিং কিট কিংবা তাদেরকে প্রণোদনা হিসাবে দেওয়া যেতে পারে।অথবা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকেও পুণঃত্রাণ হিসাবে বিতরণ করা যেতে পারে।এই শাস্তি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থেকে তদুর্দ্ধ কর্মকর্তাদের এই শাস্তি আরোপের এখতিয়ার দেওয়া যেতে পারে।সমাজে যতদিন লেনদেন দেনা পাওনা থাকবে ততদিন এই অপরাধ প্রবণতা থাকবে।নিত্য নূতন অপরাধের ধরণ অনুযায়ী যদি বাস্তবসম্মত শাস্তির ব্যবস্থা রাখা যায় তাহলে হয়ত অপরাধের সংখ্যার পাশাপাশি সামাজিক ন্যায় বিচারও নিশ্চিত করা যাবে।অন্তত আমাদের মত দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যার চেয়ে অনিয়মকারীর সংখ্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে কোন ত্রাণ করুণা কিংবা দয়া নয় এটা সংশ্লিষ্টদের অধিকার। সম্মানের সহিত তা উপকারভোগীদের দোরগোড়ায় পৌছানো সমাজের বিত্তবানদের নৈতিক দায়িত্ব। সকলের দায়িত্বশীল আচরণ ছাড়া কখনো এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবেনা।একদিকে লকডাউন অন্যদিকে হাড়িঁতে চাল নেই।আমরা আছি উভয়সংকটে।আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা একজন ক্ষুধার্থের কাছে সমগ্র পৃথিবীটায় গদ্যময়;আমরা যতই বলি পৃথিবী করোনাময় তারা তা বুঝবেনা,বুঝার কথাও না।তার কাছে পূর্ণিমার চাঁদ এখন ঝলসানো রুটি।অসহায় মানুষদের এই অন্তিম মুহূর্তে যারা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ন্যুনতম মুখের ভাতটুকুন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তাদেরকে কেবল হীন সম্ভোধনে সীমাবদ্ধ না রেখে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
একজন অনিয়মকারী কেবল একজন অনিয়মকারীই;অপরাধী। তার অন্যকোন জাত পরিচয় কিংবা পদ পদবী থাকতে পারেনা।

লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড।
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...