ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৬/০২/২০২৪ ১০:২৭ এএম

মোস্তফা ইমরুল কায়েস::
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ধকল প্রতিবেশী বাংলাদেশে এসে পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীর ১১৩ জন সদস্য প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। সোমবার পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্তে দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় সীমান্ত পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে সরকার। তবে এভাবে চুপচাপ বসে থেকে পর্যবেক্ষণ না করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সতর্কবার্তা দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপের তুমুল লড়াই চলছে। তাদের ছোড়া গুলির সিসা ও রকেট লঞ্চার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে উড়ে এসে পড়ছে। এতে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন। ইতোমধ্যে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। তেমনি দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন। সীমান্তবর্তী পাঁচটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এছাড়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবিকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

মর্টারশেলের আঘাতে প্রাণহানি, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব

এই অবস্থায় বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ ঢাকা মেইলকে বলেন, এই জটিল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ যুদ্ধে না জড়িয়ে পড়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। ওপারের সংঘাতের প্রভাবে বাংলাদেশের কিছু মানুষ হতাহত হয়েছে। প্রতিরক্ষা করার বাংলাদেশের যে কর্তব্য এটি করা খুব দুস্কর। আগামীতে শুধু কূটনীতি করলেই হবে না, এর পাশাপাশি আমাদের ক্রেডিবিলিটি ডিফেন্সও করতে হবে।

BGP

মিয়ানমার সরকার কিংবা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলার মতো পরিস্থিতি না থাকলেও বাংলাদেশের জন্য চুপচাপ বসে থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা করার অধিকার বাংলাদেশসহ সব দেশের আছে। যেসব পক্ষ থেকে এসব মর্টারশেল ছোড়া হচ্ছে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করতে হবে। তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কোনো ধরনের আঘাত যদি আসে বাংলাদেশ কতক্ষণ বসে থাকবে সেটা একটি প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার সরকারের হাতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই এবং দেশটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এমন মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার নিজেও বুঝতে পারছে অনেক জাতি-গোষ্ঠী দ্বারা গঠিত। এই অনেক জাতি-গোষ্ঠীর যে অধিকার সেটাকে জান্তা সরকার খুব প্রশ্রয় দেয়নি। ফলে প্রথমে তারা রোহিঙ্গা সমস্যা তৈরি করেছে। যা আমরা দেখছি সব জাতি-গোষ্ঠী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। সেখানে গণতন্ত্রকামী গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী তৈরি হয়েছে। সব মিলে তারা সবকিছু ঠিকমতো সামাল দিতে পারছে না। এখন তাদের এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে অবশ্যই একটা রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে।

আরও পড়ুন

পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী?

মিয়ানমারের জন্য এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে তারা বড় অস্তিত্ব সংকটে আছে। কারণ কয়েক দিন আগেই মিয়ানমার জান্তা প্রধান বলেছেন, মিয়ানমার একটি অখণ্ড ঝুঁকিতে আছে। তারা নিজেরাও বিষয়টি অনুধাবন করেছে। আমরা অনুধাবন করেছি অনেক আগে, তারা করেছে অনেক পরে। তারা পরে এসে স্বীকার করেছে।

Mianmar2

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে বোমাবর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে সীমান্তের ওপারে ৪০০ চাকমা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে তারা যেকোনো সময় ঢুকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, কেউ যদি ঢুকে তবে বিচ্ছিন্নভাবে ঢুকবে। কারণ যখন রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তখন তারা ছিল জান্তা সরকারের লক্ষ্যগোষ্ঠী। এবারের লক্ষ্যগোষ্ঠী নিরীহ সাধারণ জনগণ। তারা জাতিগোষ্ঠীর বাইরে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করছে। এখন আরাকান আর্মি অনেক এলাকায় দখল করে ফেলেছে। যেটাকে মুক্তাঞ্চল বলা যেতে পারে। যারা বাংলাদেশে ঢোকার জন্য চেষ্টা করছে তারাও সেই মুক্তাঞ্চলে গিয়ে নিরাপত্তা খুঁজতে পারে। মিয়ানমারের এবারের পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে সেখান থেকে বেসামরিক লোকজন আসবে তেমনটা মনে করেন না তিনি।

বাংলাদেশের করণীয় কী হতে পারে জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থেই মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সতর্কবার্তা দিতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিক যদি তাদের কোনো আঘাতে আহত নিহত হয় সেটার জবাব বাংলাদেশকে দিতে হবে।

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...