ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৫/০৫/২০২৫ ৭:৪৮ পিএম
চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া ২০ হাজার সামরিক ধাঁচের ইউনিফর্ম ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এসব ইউনিফর্ম বানানো হচ্ছিল পার্বত্য অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর জন্য। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক পোশাক আসলে কার জন্য তৈরি হচ্ছিল—সে প্রশ্ন এখন জোরালো হচ্ছে। জব্দ হওয়া নতুন পোশাকের ডিজাইন ও রঙ কেএনএফ-এর আগের ইউনিফর্মের সঙ্গে মেলেনি। পুরনো পোশাকগুলো ছিল প্রচলিত জঙ্গল ক্যামোফ্লাজ স্টাইলে—বাদামি, খাকি ও সবুজ ছোপে তৈরি সাধারণ মিলিশিয়া ধাঁচের। অন্যদিকে, নতুন ইউনিফর্মগুলোতে রয়েছে উন্নত ডিজিটাল ক্যামোফ্লাজ প্যাটার্ন, যেখানে সূক্ষ্ম পিক্সেল আকারে গাঢ় সবুজ, কালচে বাদামি ও কালো রঙের সংমিশ্রণ দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ডিজিটাল প্যাটার্ন সাধারণত পেশাদার বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়, যা কেএনএফ-এর প্রচলিত পোশাকধারার সঙ্গে যায় না। অনেকেই বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর জন্য এই পোশাক তৈরি হতে পারে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, কাপ্তাইয়ের মংহলাসিন মারমা নামে এক কেএনএফ সদস্য দুই কোটি টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টসে এই পোশাক তৈরির অর্ডার দেন। মে মাসে পোশাক সরবরাহের কথা থাকলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা জব্দ করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—কেএনএফের জন্য কি সত্যিই এত বিপুল পরিমাণ পোশাক প্রয়োজন? সূত্র বলছে, সংগঠনটি মূলত বম সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত, যাদের জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। একজন সদস্যের জন্য দুই সেট ধরলেও ২০ হাজার ইউনিফর্মের প্রয়োজনীয়তা যথেষ্ট সন্দেহজনক। এই অস্বাভাবিক সংখ্যক ইউনিফর্ম তৈরির পেছনে অর্থের উৎস নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। দুই কোটি টাকার মতো অর্ডার কে বা কারা অর্থায়ন করছে? কেএনএফ নিজেই কি এই ব্যয় বহন করছে, নাকি অন্য কোনো গোষ্ঠী তাদের পেছনে কাজ করছে—তা নিয়েও তদন্ত চলছে। জব্দ করা রিংভো অ্যাপারেলসের প্রডাকশন ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামানকে এসব পোশাক জব্দের সাক্ষী রাখা হয়েছে। প্রডাকশন ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব পোশাক তৈরির বিষয়ে আমরা জানি না। আমরা সাব-কন্ট্রাক্টের কাজ করে থাকি। আমরা কোনো বড় প্রতিষ্ঠান না। একটি ফ্লোরে ৫০-৬০টি মেশিন নিয়ে কারখানাটি চালানো হয়। এসব পোশাক কাদের, তাও আমরা জানি না।’ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি শুধু পাহাড় নয়, দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা আশঙ্কা করছেন, কেএনএফ ছাড়াও কোনো আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক চক্রের প্রভাব বা অর্থায়নে একটি সিন্ডিকেট জড়িত থাকতে পারে। এদিকে সোমবার সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা বলেন, কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন। সংগঠনটির হাতে সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন, অনেকে আহত হয়েছেন। এই ইউনিফর্ম উদ্ধার কোনো ইতিবাচক খবর নয়। তিনি আরও বলেন, ২০ থেকে ৩০ হাজার ইউনিফর্ম তৈরির বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। কারা এই পোশাক নিচ্ছিল, তাদের সঙ্গে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে বাদী হয়ে পুলিশ মামলা করেছে। সেখানে তৈরিকৃত পোশাক কারখানার মালিকসহ ৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র অবস্থান করে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। গ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। প্রসঙ্গ: ফেসবুকে পেজ খুলে দুই থেকে তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার। পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা।


চট্টগ্রাম মহানগরের বায়েজিদ থানাধীন নয়ারহাট এলাকার একটি পোশাক কারখানায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম তৈরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় পুলিশ বিপুল সংখ্যক ইউনিফর্ম উদ্ধার করার পাশাপাশি কারখানার মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত ১৭ মে রাতে রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ইউনিফর্মগুলো জব্দ করা হয়। আজ রবিবার (২৫ মে) ঘটনা জানাজানি হয়। তবে এই ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

গ্রেপ্তাররা হলেন, সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। এর মধ্যে সাহেদুল ইসলাম ওই পোশাক কারখানার মালিক।

বায়েজিদ থানার নয়াহাট এলাকায় অবস্থিত রিংভো অ্যাপারেলস নামে পোশাক কারখানায় কেএনএফ-এর ইউনিফর্ম তৈরির খবর পায় পুলিশ। গত ১৭ মে রাতে এই কারখানায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হয় কারখানার মালিকসহ তিনজনকে। ১৮ মে চারজনকে আসামি করে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত মার্চ মাসে ইউনিফর্মগুলো তৈরির কাজ দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তারা মংহ্লাসিং মারমা প্রকাশ মং নামের একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে ইউনিফর্ম তৈরির কাজ নেন। মংহ্লাসিংকে কেএনএফ সদস্যরা তাদের কাপড়ও দিয়ে যায়। চলতি মাসে এসব ইউনিফর্ম সরবরাহের কথা ছিল।

পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের মুখপাত্র উপপুলিশ কমিশনার মাহমুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে তিনি স্টেশনের বাইরে রয়েছেন

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারের সাবেক জেলা জজ-ডিসিসহ পাঁচজনের বিচার শুরু

কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নথি জালিয়াতির মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক ...

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ

সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে আমার নামে “সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ একজন আসামিকে ক্যাম্পে এনে পরবর্তীতে আর্থিক ...