উখিয়া নিউজ ডটকম::
কথিত নানা সমস্যায় থাকা বাংলাদেশী ও উপজাতি নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির অনগ্রসর লোকজনদের বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখাইনের পুর্ণবাসনের তোড়জোড় শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী। যদিও চুক্তি স্বাক্ষরের দীর্ঘ ৫মাস অতিবাহিত হয়েও বাংলাদেশে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে ফিরিয়ে নেওয়ার কোন অগ্রগতিতে দেশটির তেমন কোন আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বসত ভিটা, গ্রাম, জায়গাজমি বেআইনি ভাবে জবর দখল করে বাংলাদেশ থেকে লোভে পড়ে যাওয়া কিছু উপজাতী পরিবারের মাঝে পুর্ণবাসনের নামে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে কাছাকাছি বসবাসরত বাংলাদেশী উপজাতি নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠির কিছু নিরহ লোকজনদের নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার লোভ দেখিয়ে মিয়ানমার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব উপজাতীয়দের মধ্যে অনেকের বহু পূর্ব থেকে মিয়ানমারে যাতায়াত রয়েছে। অনেকের সাথে রাখাইনের অধিবাসীদের মধ্যে বিবাহ সহ নানা সম্পর্কে বন্ধনও রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত সেখানকার আদি জনগোষ্ঠি রোহিঙ্গা মুসলমানদের উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ ভাবে নানা অপারেশন পরিচালনা করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত বছরের ২৫ আগষ্ট থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের ফিলে আসা জায়গাজমি পরিত্যক্ত দেখিয়ে সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার গণমাধ্যম গুলো মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সংখ্যা লঘু নির্যাতন চরম খাদ্য সংকটের কবলে পড়ে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মিয়ানমারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গত জানুয়ারী থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশত উপজাতী পরিবার মিয়ানমারে আশ্রয় নিয়েছে বলেও জানা গেছে। পাহাড়ি এলাকার মার্মা, মুরং, ত্রিপুরা সহ কয়েকটি উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মিয়ানমার চলে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাখাইন থেকে পরিকল্পিত ও কাটামোগত রোহিঙ্গা বিতাড়নের আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক কঠোর চাপের মুখে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে লোক দেখানো সময় ক্ষেপনের জন্য বিভিন্ন চুক্তি ও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত অনগ্রসর উপজাতি বিভিন্ন নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠিকে সম্পদ, চাকরী, জায়গাজমি প্রদান পূর্বক নাগরিকত্ব দিয়ে পুর্ণবাসনের মত লোভ ও প্রলোভন দেখিয়ে রাখাইনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজাতীয়দের রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী বাংলাদেশে বসবাসরত এলাকায় অর্থের বিনিময়ে দালাল চক্র সৃষ্টি করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে স্বপরিবারে রাখাইনে চলে যাওয়া উপজাতীয়দের পরিবার পিছু দুই একর আবাদী জমি, একটি ঘর, দুইটি হালের গরু, মাছ ধরার জাল, এক বছরের খাদ্য সামগ্রী, নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে পুর্ণবাসনের খবর পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে যাওয়া উপজাতীয়দের ৬মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে পূর্ণ নাগরিকত্ব, সরকারী চাকরী সহ প্রায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া উত্তর রাখাইনে এধরনের ৩৫টি মুরং পরিবারকে তাদের জন্য নির্মিত তিতুন্না গাওয়া চান গ্রামের একটি আদর্শ গ্রামে পুর্ণবাসন কাজ উদ্বোধন করেছেন মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ, ত্রাণ ও পুর্ণবাসন মন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে।
এদিকে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ ভাবে সেনাবাহিনীর পরিচালিত বিতাড়ন অভিযানে গত বছরের আগষ্ট থেকে হত্যা, ধর্ষন, অগ্নি সংযোগ সহ চরম মানবতা বিরোধী নানা অপরাধের শিকার হয়ে জান প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৭লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিপূর্বে পালিয়ে আসা সহ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংখ্যা ১১লক্ষাধিক। আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক কঠোর চাপের মুখে মিয়ানমার কৌশলের আশ্রয় নিয়ে গত নভেম্বরে রোহিঙ্গাদের দুই মাসের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাংলাদেশের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সহজ করতে গত জানুয়ারীতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার গঠন করে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ। বাস্তবে চাপ কমাতে এসব কিছু মিয়ানমারের কালক্ষেপন মূলক কৌশলের অংশ বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। দুই বছরের মধ্যে ৯ অক্টোবর ২০১৬ ও ২৫ আগষ্ট ২০১৭ এর ঘটনায় পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মিয়ানমার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে চুক্তি স্বাক্ষরের ৫মাস অতিবাহিত হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও প্রত্যাবসন করে ফিরিয়ে নিতে পারেনি। বরং এব্যাপারে প্রত্যাবাসনের বিলম্বের জন্য মিয়ানমার কর্তৃক বাংলাদেশকে উল্টো দোষারুপ করে আসছে।
পাঠকের মতামত